প্রবন্ধ রচনা : শ্রমের মর্যাদা (৩টি রচনা)

↬ জাতীয় উন্নয়নে শ্রমের গুরুত্ব


ভুমিকা :
“....... a hard-working street-cleaner is a better man than a lazy scholar.”
-জ্ঞানী আইনস্টাইন

অনু থেকে অট্টালিকা পর্যন্ত, বিশ্বসভ্যতার প্রতিটি সৃষ্টির মূলে রয়েছে শ্রম। জন্ম থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত এই পৃথিবীর সব কাজ- খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎস- যা কিছু দৃশ্যমান সবই অর্জিত হয়েছে শ্রমের দ্বারা। পবিত্র কুরআনে ঘোষিত হয়েছে, “লাইসা লিল ইন্সানে ইল্লা মা সাত্তা।” অর্থাৎ, মানুষের জন্যে শ্রম ব্যতিরেকে কিছুই নেই। জ্ঞানীর জ্ঞান, নিজ্ঞানের অত্যাশ্চার্য আবিষ্কার, ধর্মসাধকের আত্মোপলব্ধি, ধনীর ধনৈশ্বর্য, যোদ্ধার যুদ্ধে জয়লাভ সবকিছুই শ্রমলব্ধ।

শ্রমের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা : “Man is the architect of his own fate.” –মানুষ নিজেই তার নিজের ভাগ্যের নির্মাতা। আর এই ভাগ্যকে নির্মাণ করতে হয় নিরলস শ্রম দ্বারা। মানুষের জন্ম দৈবের অধীন, কিন্তু কর্ম মানুষের অধীন। যে মানুষ কর্মকেই জীবনের ধ্রুবতারা করেছে, জীবন-সংগ্রামে তারই জয়। কর্মই সাফল্যের চাবিকাঠি। পরিশ্রমই মানুষের যথার্থ শাণিত হাতিয়ার। সৌভাগ্যের স্বর্ণশিখরে আরোহণের একমাত্র উপায় হচ্ছে শ্রম। পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে শুরু করে বর্তমান সভ্যতা পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রেই শ্রম নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। মানবজীবন অনন্ত কর্মমুখর। বহু প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে যুদ্ধ করে তাকে জীবনের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হয়। এ জন্যে তাকে নিরন্তর কাজ করে যেতে হয়। তাই, জগৎ কর্মশালা আর জীবনমাত্রই পরিশ্রমের ক্ষেত্র।

Virgil বলেছেন,

“The dignity of labour makes a man self-confident and high ambitious. So, the evaluation of labour is essential."

তাই শ্রমেই সফলতা, শ্রমেই সুখ, শ্রমই জীবন। আমরা সবাই শ্রমসৈনিক।

শ্রমজীবীদের প্রতি সমাজের উপরতলার মানুষের অবহেলা ও অবজ্ঞা দেখে একালের কবি উদাত্ত স্বরে ঘোষণা করেন-

‘আমি কবি যত কামারের, মাটে মজুরের
আমি কবি যত ইতরের।’

মানুষ মরণশীল প্রাণী কিন্তু কর্মের মাধ্যমেই সে অমর হতে পারে। আজকেরর মানুষের কর্মই আগামী দিনের মানুষকে নতুন কর্মে উজ্জীবিত করে, নতুন কল্যাণ নতুন অগ্রগতি সাধনে ব্রতী করে। তাই মানুষ কেবল জীবন যাপনেই বাঁচে না, শ্রমের শক্তিতেই বাঁচে। আর শ্রমই মানুষকে করে তোলে অমর। তাই প্রখ্যাত লেখক মাক্সিম গোর্কে বলেছেন-

’শ্রম ও সৃজনের বীরত্বের চেয়ে গরীয়ান আর কিছু দুনিয়ায় নেই।’

শ্রমের প্রকারভেদ : শ্রমকে সাধারণত দু ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন :
(১) মানুসিক শ্রম
(২) শারীরিক শ্রম।
এই উভয় প্রকার শ্রমের গুরুত্বই অপরিসীম।

মানসিক শ্রম : মানসিক শ্রম ছাড়া মানসিক উন্নতি সম্ভব নয়। কথায় বলে- ‘অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা।’ শ্রমবিমুখ ব্যক্তির মনে কখনো সুচিন্তা ও সদ্ভাব উদয় হয় না। পক্ষান্তরে পরিশ্রমী ব্যক্তির মন ও মস্তিষ্ক সবসময় কু-চিন্তা থেকে দূরে থাকে। বৈজ্ঞানিক, দার্শনিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, অর্থনীতিবিদ, সমাজতত্ত্ববিদ ও শিল্পীর পরিশ্রম মূলত মানসিক। তবে তাঁদের এই মানসিক শ্রমকে বাস্তবে রূপায়িত করতে গিয়ে তাঁরা কায়িক শ্রমও করে থাকেন।

শারীরিক শ্রম বা কায়িক শ্রম : জগতের সকল জীবকেই বেঁচে থাকার জন্যে কম-বেশি শারীরিক ও মানসিক শ্রম দিতে হয়। মানসিক শ্রম একটা কাজের উদয় করে আর শারীরিক শ্রম বা সমাধা করে। সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে শারীরিক শ্রমের নিমিত্তে হাত-পা ইত্যাদি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়েছেন। শারীরিক শ্রম আত্মসম্মানের পরিপন্থী নয় বরং সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভের প্রধান উপায়। চাষী, শ্রমিক, কুলি, মজুর- এরা দেশ ও জাতিকে রক্ষার মহান দায়িত্ব নিয়েই শারীরিক শ্রমে অবতীর্ণ হয়। তাই কবি নজরুল ইসলাম তাঁদের বন্দনা করেছেন-

“শ্রম-কিণাঙ্ক-কঠিন যাদের নির্দয় মুঠি-তলে
ত্রস্তা ধরণী নজ্রানা দেয় ডালি ভরে ফুলে ফলে।”

ব্যাক্তিজীবনে ছাত্রজীবনে শ্রমের উপযোগিতা : শ্রম যে শুধু সমষ্টির জীবনকেই সন্দর ও মহিমাময় করে তা নয়, ব্যক্তিজীবনেও তার গুরুত্ব গভীর, ব্যপক। যে অলস ও শ্রমবিমুখ তার জীবনে নেমে আসে অসুন্দরের অভিশাপ। নানা ব্যর্থতার গ্লানিতে সে-জীবন পদে পদে অনাদৃত, লাঞ্ছিত। তার জীবনের স্বাভাবিক অগ্রগতি রুদ্ধ হয়। জীবনের সাফল্য-স্পন্দিত প্রাঙ্গণে তার নেই প্রবেশের ছাড়পত্র মানুষের স্নেহ-ভালোবাসার অঙ্গন থেকে ঘটে তার চিরনির্বাসন। থাকে শুধু অভিশপ্ত জীবনের সীমাহীন অন্তর্জ্বালা আর লাঞ্ছনা, শুধুই ‘প্রাণ ধারণের গ্লানি’। পক্ষান্তরে, পরিশ্রমী মানুষ দেহে ও মনে সুস্থ, সুন্দর। সার্থকতার ছন্দে সে-জীবন নিত্য উচ্ছলিত। শ্রমের ক্লান্তি তার জীবনে বিশ্রামের মাধুর্য ছড়িয়ে দেয়।

আমাদের দেশে শ্রমের মর্যাদা : দুঃখজনক হলেও সত্য যে, কায়িক শ্রমের প্রতি আমাদের দেশের মানুষের এক ধরণের অবজ্ঞা ঘৃণা রয়েছে। ফলে শিক্ষিত-সমাজের একটা বিরাট অংশ কায়িকশ্রম থেকে দূরে সরে আছে। চরম বেকারত্ব ও আর্থিক অনটন সত্ত্বেও তারা শ্রমবিমুখ। আর এই শ্রমবিমুখতার কারণেই আমরা আমাদের জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে দিন দিন পিছিয়ে যাচ্ছি। তাই জীবনকে, দেশ ও জাতিকে সফল ও সার্থক করে গড়ে তোলার জন্যে শ্রম-বিমুখতা পরিহার করতে হবে।

ইসলামে শ্রমের মর্যাদা : আমাদের মহানবী (স) পরিশ্রমের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি নিজেও শ্রমিকের সাথে বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশ নিয়েছেন। শ্রমিকদের দেহের ঘাম শুকাবার আগেই তিনি তার পরিশ্রমিক পরিশোধের নির্দেশ দিয়ে শ্রম ও শ্রমিকের মর্যাদাকে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন।

শ্রমিক লাঞ্ছনা : সমাজের উচ্চস্তরের মানুষ যারা, তারা করছে সম্মানের কাজ, গৌরবের কাজ। সমাজের সমস্ত সুযোগ-সুবিধা নিজেদের কুক্ষিগত করে তারা তথাকথিত নিচুশ্রেণীর মানুষকে নিক্ষেপ করেছে অপমান, ঘৃণা বঞ্চনার তীব্র অন্ধকারে। অথচ সেই শ্রমিকেরা চিরকাল নদীর ঘাটে ঘাটে বীজ বুনেছে, পাকা ধান ফলিয়েছে। তারা ধরিত্রীর বক্ষ বিদীর্ণ করে সোনার ফসল ফলিয়েছে-

“তাঁতী বসে তাঁত বুনে, জেলে ধরে মাছ,
বহুদূর প্রসারিত এদের বিচিত্র কর্মভার
তারি’পরে ভর দিয়ে চলিতেছে সমস্ত সংসার”

অথচ তারা-ই পায়নি যথার্থ মানুষের সম্মান।

শ্রমশীল ব্যক্তির উদাহরণ : বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তি ও মনীষীগনের জীবনসাধনা ও সাফল্যের কারণ নিরলস পরিশ্রম। জর্জ ওয়াশিংটন, আব্রাহাম লিঙ্কন, বৈজ্ঞানিক আইনস্টাইন প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ইসলাম ধর্ম প্রবর্তক মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স) ছিলেন কঠোর পরিশ্রমী। তিনি বলেছেন-

“নিজ হাতে কাজ করার মতো পবিত্র জিনিস আর কিছু নেই।”

শ্রমবিমুখতা : শ্রমবিমুখতা ও অলসতা জীবনে বয়ে আনে নিদারুণ অভিশাপ। শ্রমহীন জীবনকে ব্যর্থতা এসে অক্টোপাসের মতো ঘিরে ফেলে। কথায় বলে,


এ কথা তর্কাতীতভাবে সত্য। যে ব্যক্তি শ্রমকে অবজ্ঞা করে, তার শ্রম সম্বন্ধে কোনো অভিজ্ঞতা নেই, তার জীবনের কোনো মূল্য নেই। বিখ্যাত মনীষী কার্লাইল বলেছেন, ‘আমি মাত্র দুই প্রকৃতির লোককে সম্মান করি। প্রথমত ঐ কৃষক এবং দ্বিতীয়ত যিনি জ্ঞানধর্ম অনুশীলনে ব্যাপৃত আছেন’। সুতরাং একমাত্র নির্বোধেরাই শ্রমকে অবজ্ঞা করে।

উপসংহার : ‘পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি।’ শ্রমের গৌরব ঘোষণা আজ দিকে দিকে। একমাত্র শ্রমশক্তির মাধ্যমেই জীবনে অর্জিত হয় কাঙ্খিত সাফল্য, স্থিতি ও পরিপূর্ণতা। নিরলস শ্রমসাধনায় সাফল্য অর্জন করে জীবজগতের মধ্যে মানুষ শ্রেষ্ঠত্বের আসন দখল করেছে। সুতরাং জীবনকে সুষ্ঠ স্বাভাবিকভাবে বাঁচিয়ে রাখার জন্য শ্রম ব্যতীত অন্য কোনো সহজ উপায় নেই। আর তাই শ্রমের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া ব্যক্তিগত তথা জাতিগতভবে প্রয়োজন। কবি অক্ষয় কুমার বড়াল তাঁর ‘মানব-বন্দনায়’ সভ্যতার শুরু থেকে বর্তমান পর্যন্ত সকল শ্রমশীল ব্যক্তিদের উদ্দেশে বন্দনা করেছেন-
“নমি কৃষি-তন্তুজীব, স্থপতি, তক্ষক, কর্ম, চর্মকার!”


[ এই প্রবন্ধটি আরেকটি বই থেকে সংগ্রহ করে দেয়া হলো ]


ভূমিকা : মানুষের সমস্ত সম্পদ এবং মানব সভ্যতার বুনিয়াদ রচনা করেছে যে শক্তি তার নাম শ্রম। একদিন প্রকৃতির কোলে পাওয়া পাথরের নুড়ি দিয়ে শ্রমের সাহায্যে মানুষ হাতিয়ার তৈরি করতে শিখেছিল। তাপর প্রায় ৬ লাভ বছর ধরে লাখ কোটি মানুষের তিল তিল শ্রমে গড়ে উঠেছে সভ্যতার বিরাট সৌধ। শুধু তাই নয়, শ্রমের কল্যাণেই মানুষ পশু জগৎ থেকে নিজেকে পৃথক করেছে। শ্রমের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই মানুষের হাত সাধারণ শ্রম থেকে শুরু করে জটিলতম কাজ সম্পাদনের অঙ্গে পরিণত হয়েছে। মানুষের হাত যে আধুনিক যন্ত্র, সূক্ষ্ম কারুকাজময় ছবি কিংবা অপরূপ সংগীত লহরী সৃষ্টি করার ক্ষমতার অধিকারী হতে পেরেছে, তার মূলে রয়েছে শ্রমের অবদান। এককথায় বলা যায়, মানুষের জীবন ও সভ্যতা হচ্ছে শ্রমেরই ফসল, শ্রমেরই কাব্য। 

শ্রমের মহিমা : শ্রম যে শুধু সকল সমৃদ্ধির উৎস তা নয়। শ্রম মানুষকে দেয় সৃজনের আনন্দ। প্রত্যেকটি মানুষ কিছু-না-কিছু প্রতিভা নিয়ে জন্মায়। কিন্তু পরিশ্রম ছাড়া সেই প্রতিভা বিকশিত হতে পারে না। পরিশ্রমের মাধ্যমেই মানুষ নিজের ভাগ্যকে গড়ে তোলে। পৃথিবীতে যা-কিছু স্মরণীয়-বরণীয় তার মূলে রয়েছে শ্রমের অবদান। আর যেসব লোক বিশ্বের মানুষের ভালবাসায় মহীয়ান হয়ে আছেন কাঠোর পরিশ্রমই তাঁদেরকে সেই মহিমা দিয়েছে। 

সমমান ও মর্যাদাসম্পন্ন দৈহিক ও মানসিক শ্রম : মানব ইতিহাসে দেখা যায়, মানুষ যখন উদ্বৃত্ত শ্রম উৎপাদন করতে শিখল তখন একদল পরজীবী শ্রেণির সৃষ্টি হলো। নিজেরা শ্রম না করে অন্যের শ্রমের ফল ভোগ করে বিলাস-বাসনে তারা দিন কাটানোর সুযোগ পেল। এভাবে শ্রমের ক্ষেত্রে সৃষ্টি হলো সামাজিক অসাম্য। মজুর-চাষি-মুটে-কুলি – যারা কায়িক শ্রম করত তারা পড়ে রইল সমাজের নিচের তলায়। অন্নহীন, বস্ত্রহীন, শিক্ষাহীন মানবেতর জীবন হলো তাদের নিত্য সঙ্গী। সমাজে শ্রমজীবী মানুষের এই নিদারুণ অবস্থাই মানুষের মনে শ্রমবিমুখতার জন্ম দিয়েছে। কায়িক শ্রমের প্রতি সৃষ্টি হয়েছে এক ধরনের অবজ্ঞা ও ঘৃণার মনোভাব। 

আমাদের দেশেও শ্রমজীবীরা সামাজিক মর্যাদা থেকে বঞ্চিত। ফলে যে মজুর জুতো থেকে শুরু করে বোতাম পর্যন্ত সমস্ত প্রয়োজনের সামগ্রী ও বিলাসদ্রব্য জোগায়, যে কৃষক আমাদের অন্ন জোগায়, তারা সমাজে অবজ্ঞার পাত্র হয়ে আছে। এভাবে আমরা শ্রম ও শ্রমজীবীকে অবজ্ঞা করছি। এর ফল কল্যাণকর হতে পারে না। প্রত্যেক মানুষই নিজ নিজ যোগ্যতা ও শক্তি অনুসারে সমাজের সেবা করছে। কোনোটা দৈহিক শ্রম, কোনোটা মানসিক শ্রম। তাই কোনোটিকেই অবহেলা করা বা ছোট করে দেখার অবকাশ নেই। 

শ্রমের গুরুত্ব : জীবনযাত্রার জন্যে, সমাজ ও জাতির জন্যে শ্রম এক অপরিহার্য উপাদান। একথা স্বীকার করে নিয়ে সমাজে অবশ্যই শ্রমকে যথাযথ মর্যাদা ও স্বীকৃতি দিতে হবে। একটা গাছের শিকড়, পাতা, শাখা-প্রশাখা, ফল-ফুল সবার কাজ আলাদা কিন্তু সবটা মিলিয়েই গাছের পূর্ণতা বা বৃদ্ধি। তেমনি সমাজে বিভিন্ন পর্যায়ে, বিভিন্ন স্তরে, বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত লোকের শ্রমে পার্থক্য থাকলেও সামাজিক প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী কোনোটির গুরুত্ব কম নয়- তা সে দৈহিক শ্রমই হোক কিংবা মানসিক শ্রমই হোক। মজুর এবং ম্যানেজার, কৃষক এবং কৃষি অফিসার, কুলি এবং রাষ্ট্রনায়ক, শিক্ষক এবং শিল্পী কারো কাজই সমাজে অপ্রয়োজনীয় নয়। প্রত্যেকটি লোক যথাযথভাবে নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করলেই সমাজের অগ্রগতি সাধিত হয়। একথা মনে রেখে সবাইকে তার প্রাপ্য মর্যাদা দিতে হবে। বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন বলেছেন,
“...... a hard-working street-cleaner is a better man than a lazy scholar.” 

শ্রমজীবীদের প্রতি সমাজের উপরতলার মানুষের অবহেলা ও অবজ্ঞা দেখে একালের কবি উদাত্ত স্বরে ঘোষণা করেন, 
‘আমি কবি যত কামারের, মুটে মজুরের 
আমি কবি যত ইতরের।’ 

মানুষ মরণশীল প্রাণী কিন্তু কর্মের মাধ্যমেই সে অমর হতে পারে। আজকের মানুষের কর্মই আগামী দিনের মানুষের নতুন কর্মে উজ্জীবিত করে, নতুন কল্যাণ নতুন অগ্রগতি সাধনে ব্রতী করে। তাই মানুষ কেবল জীবন যাপনেই বাঁচে না, শ্রমের শক্তিতেই বাঁচে। আর শ্রমই মানুষকে করে তোলে অমর। তাই প্রখ্যাত লেখক মাক্সিম গোর্কি বলেছেন –
‘শ্রম ও সৃজনের বীরত্বের চেয়ে গরীয়ান আর কিছু দুনিয়ায় নেই।’ 

উপসংহার : শত শত শতাব্দীর পর বিশ শতকের পৃথিবীতে শ্রমজীবী মানুষের সামনে এক নবযুগ আসে। মেহনতি মানুষের মর্যাদা দিতে বাধ্য হয় সমাজের উপরতলার মানুষ। সোভিয়েত ইউনিয়নে, চীনে, ভিয়েতনামে এবং আরো অনেক দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় মেহেনতি মানুষ পালন করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। আমেরিকা, ব্রিটেন, জার্মানি, জাপান ইত্যাদি দেশের শ্রমজীবী মানুষের বহু অধিকার ও মর্যাদা ক্রমেই স্বীকৃতি লাভ করছে। ভারতবর্ষে শ্রমভেদে যে জাতিভেদের জন্ম নিয়েছিল তা এখন ভেঙে খানখান হয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশেও যে যেখানে আছি, সমাজের জন্যে, দেশের জন্যে শ্রমের ক্ষেত্রে নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্যে যে যত খাটব, যত পরিশ্রম করব, তার ওপর দেশের অগ্রগতি তত নির্ভর করবে। যে যেখানেই শ্রম করি না কেন, যে ধরনের শ্রম করি না কেন সবাই যদি নিজ নিজ দায়িত্ব সচেতনভাবে পালন করি, সবার শ্রমকেই যদি সমান মর্যাদা দিই তবেই দেশ ও জাতির যথার্থ কল্যাণ সাধিত হবে। মনে রাখতে হবে, আমার শ্রম সমাজের জন্যে প্রয়োজনীয়- এই বোধ মানুষকে মহৎ করে।


[ এই প্রবন্ধটি আরেকটি বই থেকে সংগ্রহ করে দেয়া হলো ]


সূচনা : শ্রম মানুষের জীবনের সাথে একান্তভাবে জড়িত। শ্রম ছাড়া দেশ, জাতি বা সমাজের উন্নতি সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আছে – শ্রম ব্যতীত মানুষের জন্য কিছুই নেই। সুতরাং, মানুষের জীবনে যে কোন কিছুর জন্যই প্রয়োজন শ্রম। 

শ্রমের প্রয়োজনীয়তা : পরিশ্রম না করলে কোন কিছুই পাওয়া যায় না। এই শ্রম শারীরিক বা মানসিক উভয় প্রকার হতে পারে। কৃষক কষ্ট করে জমি চাষ করে ফসল ফলাচ্ছে, জেলে জাল ফেলে, তাঁতি কাপড় বুনছে, মিস্ত্রি ঘরবাড়ি ও জিনিসপত্র তৈরি করছে। এদের সবার শ্রম হচ্ছে শারীরিক শ্রম। আবার শিক্ষক, লেখক, সাংবাদিক, বৈজ্ঞানিক এদেশ শ্রম হচ্ছে মানসিক। এই দু প্রকার শ্রমের বিনিময়ে আমরা পাচ্ছি আমাদের সব নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য। আরও পাই ভদ্র ও উন্নত জীবন যাপনের সুযোগ- মানুষের মত মানুষ হবার সুযোগ। আবার শুধু খাদ্য, বস্ত্র বা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির জন্যই নয়, সুন্দর স্বাস্থ্যের জন্যও শ্রমের প্রয়োজন। পরিশ্রমের ফলে হজম শক্তি ও ক্ষুধা বাড়ে শরীর দৃঢ় ও সবল হয়। তাই শ্রমকাতর ব্যক্তির চেয়ে শ্রমিকের স্বাস্থ্য ভাল থাকে। 

শ্রমের সুফল : শ্রম মানবজাতির উন্নতির মূল। বেঁচে থাকতে হলে মানুষকে পরিশ্রম করতে হয়। চুপচাপ বসে খেলে রাজার ভাণ্ডারও এক সময় শেষ হয়ে যায়। আবার পরিশ্রম করলে ভিখারীও রাজার সম্পদের অধিকারী হতে পারে। বর্তমানে আমরা বিজ্ঞানের এক চরম উন্নতির যুগে বাস করছি। এর মূলে রয়েছে বৈজ্ঞানিকদের অসংখ্য আবিষ্কার। এসব আবিষ্কার সম্ভব হয়েছে তাঁদের পরিশ্রমের ফলেই। যে জাতি যত পরিশ্রমী সে জাতি ততই উন্নত। অতীতের ও বর্তমানের ইতিহাস আমাদের এই শিক্ষাই দেয়। 

পরিশ্রমের গৌরব : এই পৃথিবী একটা কর্মক্ষেত্র। এখানে যে যেমন কাজ করবে, সে তেমনই ফল পাবে। আল্লাহ আমাদের কর্মী হবার উপযুক্ত করেই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। পৃথিবীর আদি মানব আদম ও হাওয়াকে নিজ হাতে সব ধরনের কাজ করতে হত। তাঁরা শ্রমকে ঘৃণা বা ভয় করেননি। তাই কর্মময় জীবনই গৌরবময় জীবন। একবার আমাদের নবী হযরত মুহম্মদ (সঃ) তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। পথে খাওয়ার সময় উপস্থিত হলে সবাই খাবার তৈরির জন্য বিভিন্ন কাজে লেগে গেল। সবার ধারণা ছিল হযরত মুহম্মদ (সঃ)-কে কোন কাজ করতে দেওয়া হবে না। কিন্তু তিনিও কাজে অংশ নিতে চাইলেন। এমনকি কাঠ কেটে আনার মত কঠিন কাজটিই তিনি করলেন। এমনিভাবে হযরত মুহম্মদ (সঃ) তার জীবনের সর্বক্ষেত্রে শ্রমকে মর্যাদা দিয়েছেন। নিজে পরিশ্রম করেছেন; অন্যকে পরিশ্রমী হতে উপদেশ দিয়েছেন। 

উপসংহার : শ্রম ছাড়া মানুষ কিছুই পায় না। কিন্তু আমরা শ্রমকে অবহেলা করে নিজেদের পতন ডেকে আনছি। শ্রমের যথাযথ মর্যাদা দিয়ে আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসাবে নিজেদের পরিচয় দেবার জন্য আমাদের সব সময় সচেষ্ট থাকা উচিত। তাহলে দেশ ও জাতির গৌরব বাড়বে – বাড়বে সারা বিশ্বে আমাদের মর্যাদা। 

35 Comments

  1. excellent man. notun aro rochona banao.Amar exam e onek kaje legeche

    ReplyDelete
    Replies
    1. wow what a fantastic composition it is. Mighty good yeah baby.

      Delete
  2. srom er morjada rochonai einstein er ukti te had er change e hard hobe.bektigibon e sromer morjada perate no.4 line e dete er change e dehe hobe.aro kichu vul ache

    ReplyDelete
  3. this is so gd for getting gd marks

    ReplyDelete
  4. লাইসা লিল ইন্সানি ইল্লা মা সাত্তা
    ভুল
    ইন্সান(ইংসান) সাত্তা(সা, আ) প্লিজ ভুল ঠিক করুন

    ReplyDelete
  5. Fully copied from Hayat Mahmud's "ভাষা শিক্ষা" book.

    ReplyDelete
  6. Really very helpful. Thank you from me student of class nine Viqarunnisa Noon School Azimpur branch

    ReplyDelete
  7. ধন্যবাদ আপনাকে অনেক

    ReplyDelete
  8. Brilliant. The rhymes are so suitable

    ReplyDelete
  9. Onek spelling mistake.... Thik kore dile valo hoto...

    ReplyDelete
  10. Point aro beshi hole valo hoto...

    ReplyDelete
  11. রচনাটি মোটামুটি ভালো কিন্তু একটু ছোট।

    ReplyDelete
  12. Please try to make more para's. And worthy to mention that it's the best essay of Sromer Morjada ever.

    ReplyDelete
  13. How to copy this to my pendrive??and print it??

    ReplyDelete
    Replies
    1. Actually,if you use mobile you can take screenshot.

      Delete
  14. রচনাটির জন্য ধন্যবাদ

    ReplyDelete
Post a Comment
Previous Post Next Post