ভূমিকা : আধুনিক জীবন ও প্রযুক্তি ওতঃপ্রোতভাবে জড়িত । যেমন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পরস্পরের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত, ঠিক তেমনি। বিজ্ঞান হচ্ছে আবিষ্কার, তার নানা তত্ত্ব ও সূত্রের প্রয়োগিক দিককেই বলা হয় প্রযুক্তি। অন্য কথায় উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, শক্তি ও উপাদনকেই বলা হয় প্রযুক্তি। প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে, প্রযুক্তির দ্বারা তৈরি নানা পণ্যদ্রব্য ভোগ করে, আর নানা কলা-কৌশল ব্যবহার করে মানুষ হয়ে উঠেছে আধুনিক। প্রযুক্তির কল্যাণেই কৃষিতে ফলন বাড়লে, বাস, ট্রেন, বিমন-জাহাজের সাহায্যে স্থলে-জলে-আকাশে ভ্রমণ করতে পারছি আমরা। টেলিফোন, টেলিগ্রাফ, রেডিও, কৃত্রিম উপগ্রহ, কম্পিউটার, মোবাইলের সাহায্যে অভাবনীয় যোগাযোগ কিংবা বিনোদনের সুযোগ পাচ্ছি। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ, কাপড় ধোয়া, রান্না করা, সিঁড়ি না ভেঙ্গে বহতল দালানে ওঠানামা করা- সবই মানুষের কাছে সহজ করে দিয়েছে প্রযুক্তি। তাই প্রযুক্তিকে বাদ দিয়ে আধুনিক জীবনের কথা চিন্তাই করা যায় না। প্রযুক্তিবিদ্যার কল্যাণেই মাবন জীবনের যাবতীয় সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য সম্পাদিত হচ্ছে। যা কিছু ধ্বংসাত্মক তাও প্রযুক্তিরই কল্যাণে। প্রযুক্তির চরিত্র বৈশ্বিক। এ কারণেই সমগ্র বিশ্ব আজ একটা ’গ্লোবাল সিটি’তে পরিণত হয়েছে। এ যেন আধুনিক জীবন- আধুনিক মানুষ- আধুনিক বিশ্ব।
প্রযুক্তির উদ্ভব : জীবনের প্রয়োজনে-স্বাচ্ছন্দ বিধানে বিজ্ঞানকে কাজে লাগানোর প্রয়াস মানুষের দীর্ঘদিনের কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিদ্যার বয়স দু’শ বছরের বেশি নয়। ইংল্যান্ডই প্রথম এই বিদ্যাকে, প্রযুক্তি তথা প্রয়োগ বিজ্ঞানকে আত্মস্থ করে এবং কাজে লাগায়। প্রযুক্তির প্রসারের ফলে সেখানে শিল্প বিপ্লব ঘটে। নানা প্রকার যন্ত্রপাতি মানুষষের জীবনধারা বদলে দেয়। অন্যান্য দেশেও এর ব্যবহার শুরু এবং তার দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। তবে পশ্চিমা দেশগুলোই শিল্প বিপ্লবের প্রধান ধারক ও বাহক। প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যে দেশ যত অগ্রগামী, সে দেশ তত উন্নত, তত আধুনিক জীবনের অধিকারী। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি হাতে হাত ধরে চলছে ক্রমাগত। আজও তার চলার বিরাম নেই। নব নব প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে এবং ব্যবহারিক জীবনে তাকে কাজে লাদিয়ে আধুনিক মানুষ হয়ে উঠেছে আরো আধুনিক।
ক্রমবিকাশ : প্রযুক্তির প্রথম যুগ ছিল বাষ্পীয় যন্ত্রের। এর মাধ্যমে ধীর গতির পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় পালাবদল ঘটে। ফসলাদি উৎপাদনের কাজেও প্রযুক্তি ব্যবহৃত হত। স্বল্প মূল্যে, স্বল্প শ্রমে, স্বল্প ফসল এই ছিল প্রথম যুগের অবস্থা।
দ্বিতীয় যুগ : বিদ্যুতের আবিষ্কারের পর প্রযুক্তির ইতিহাসের সৃষ্টি হয় নবযুগ। বিদ্যুতের ব্যাপর প্রায়োগিক কৌশলে শিল্পক্ষেত্রে বিপ্লব সংঘটিত হয়। শুরু হয় দ্বিতীয় যুগের। নব নব শিল্প-কারখানা স্থাপন এবং তার উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী মানুষের জীবন প্রণালীতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটায়। প্রকৃত অর্থে বিদ্যুতের যুগ তথা দ্বিতীয় যুগ থেকেই পৃথিবীর মানুষ আধনিক মানুষের পরিণত হয়। বিদ্যুতের পরশে শিল্প-কারখানার চাকা চলতে লাগল, পাখা ঘুরল, বিমান উড়ল, স্টিমার, মোটর চলল। মানুষ নতুন এক জীবন- আধুনিক জীবন লাভ করল। অবশ্য মানুষের কল্যাণকর উপকরণ ও দ্রব্যাদির পাশাপাশি এ গুগে প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয় সমরাস্ত্র উৎপাদনের ক্ষেত্রেও। মহাযুদ্ধগুলোতে ব্যবহারের জন্যে এবং রাষ্ট্র সমূহের পারস্পরিক বিরোধ দমন ও আধিপত্য বিস্তারের জন্যে এবং সীমান্ত রক্ষার জন্যে এ যুগে পশ্চিমা দেশগুলো সমরাস্ত্র কারখানা নির্মাণে এবং সমরাস্ত্র উৎপাদনে প্রতিযোগিতায় নামাল।
তৃতীয় যুগ : তৃতীয় যুগ ইলেকট্রন, প্রোটোন ও সৌরশক্তির যুগ। প্রযুক্তি এসে এ যুগকে শক্তিশালী করে তুলেছে। শুধু শক্তিশালী নয়, আধুনিক বিশ্বের আধনিক মানুষের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করছে প্রযুক্তি। প্রযুক্তিই এখন আধুনিক মানব জীবনের নিয়ামক। কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নির্মাণ, স্থাপত্য, ব্যাংকিং, যোগাযোগ, পরিবহন, তথ্য- সব ক্ষেত্রেই প্রযুক্তির জয়জয়কার। নিদ্রায়, জাগরণে, যুদ্ধে, শান্তিতে- এককথায় জীবনে এবং মরণে আধুনিক প্রযুক্তি এখন মানুষের নিত্য সঙ্গী।
আধুনিক জীবনে প্রযুক্তি : এই একুশ শতকের মানুষের জীবন-জীবিকার সর্ব ক্ষেত্রে প্রযুক্তি-নির্ভর। শহরে নগরে যে আকাশচুম্বী বহুতল দালান গড়ে উঠেছে, আমরা যে বাস, কার, ট্যাক্সিতে যাতায়ত করছি তা প্রযুক্তিবিজ্ঞানের আশির্বাদ। বাষ্প, বিদ্যুৎও পারমাণবিক শক্তিচালিত রেল ও স্টিমার পরিবহণ ব্যবস্থায় এনেছে যুগান্তর। প্রযুক্তির কল্যাণে ঘরে ঘরে বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলছে, পাখা, হিটার, রেডিও, টিভি, ফ্রিজ, ভিসিআর. ভিসিপি, লিফট, এয়ারকুলার, কম্পিউটার চলছে। অফিসে, আদালতে, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে, সংবাদপত্রের অফিসে যে ক্যালকুলেটর, টাইপরাইটার, ফটোকপিয়ার, ফ্যাক্স, কম্পিউটার ইত্যাদি ব্যবহৃত হচ্ছে তাও সম্ভব হয়েছে প্রযুক্তির কল্যাণে। শিল্পাঞ্চলে উৎপাদনের প্রধান চালিকাশক্তিই হচ্ছে প্রযুক্তি, গ্রামাঞ্চলে কুটির শিল্পেও এখন প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে। কৃষিতে কর্ষণ, বীজ বপন, নিড়ানো, ফসল কাটা, ফসল তোলা, ঝাড়াই, মাড়াই ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হচ্ছে কলের লাঙল থেকে শুরু করে নানা কৃষি যন্ত্রপাতি। জলসেচের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে বিদ্যুৎ চালিত সেচযন্ত্র। চিকিৎসা ব্যবস্থাও এখন বহুলাংশে হয়ে পড়েছে প্রযুক্তিনির্ভর। জ্বালানী শক্তির বিকল্প যেসব শক্তি বিজ্ঞানীরা ব্যবহার করছে সেগুলোকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রেও প্রযুক্তির কার্যকর ভূমিকা রয়েছে। এক কথায় আদুনিক যুগের মূল ভিত্তি ও সহায় হচ্ছে প্রযুক্তি। অটোমেশিন বা সংয়ংক্রিয় যন্ত্র আধুনিক কালে মানুষের জীবনে নতুন অ্যায়ের সূচনা করেছে। ইলেকট্রনিকস ও প্রযুক্তি বিজ্ঞানের মেলবন্ধনে সৃষ্টি হয়েছে কম্পিউটার ও রোবটের মত অভাবনীয় যন্ত্র। বিনোদন থেকে শরু করে যুগান্তকারী সব সাফল্যের পেছনেও রয়েছে প্রযুক্তি বিজ্ঞানের ভূমিকা।
উপসংহার : প্রযুক্তি-জ্ঞানের প্রসার ব্যতীত উন্নয়ন ও আধুনিক জীবন সম্ভব নয়। কাজেই বাংলাদেশকেও প্রযুক্তির পথে দ্রুত ধাবিত হতে হবে। আর নয় পেছনে পড়ে থাকা। আমাদের তরুণ ছাত্রসমাজকে এ বিদ্যায় পারদর্শী করে তোলায় উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পরিণামে প্রযুক্তিবিদরাই দেশকে আধুনিকতার সোপানে দাঁড় করিয়ে দেবে।
আরো দেখুন :
How download this article
ReplyDeletetake a screenshot
DeleteBhalo...jontro o manush ar opor akta rochona chai
Deletecopy paste er option nai ken
ReplyDeleteajony dislike