প্রবন্ধ রচনা : সত্যবাদিতা

ভূমিকা : যে-সব গুণ মানব-চরিত্রকে মহিমান্বিত করে তোলে ‘সত্যবাদিতা’ তার মধ্যে একটি মূল্যবান গুণ। সত্যের চেয়ে বড় গুণ আর দ্বিতীয়টি নেই। এই মহাবিশ্ব চির সত্যের ওপর দ-ায়মান। সত্য ও বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে মানুষ তার নিজেকে আবিষ্কার করে, মনুষ্যত্বকে অর্জন করে। তাই মানুষের সাধনা সত্যের সাধনা। সত্যবাদিতার গুণ অর্জন করাই মানুষের নিরন্তর সাধনা হওয়া উচিত। কোন কিছু গোপন না করে অকপটভাবে প্রকাশ করার বৈশিষ্ট্যের নামই সত্যবাদিতা।

বৈশিষ্ট্য : সত্য বলতে কোনো কিছুর যথাযথ প্রকাশ বোঝায়। আর সত্যবাদিতা অর্থ আরও ব্যাপক। শুধু ‘মিথ্যা না বলা’ বোঝাতে সত্যবাদিতা বোঝায় না। সত্যকে অবলম্বন করে যে বৈশিষ্ট্য বিকাশিত হয় তার নাম সত্যবাদিতা। সত্যের মধ্যে কোনো গোপনীয়তা নেই। সত্য জীবনের স্বরূপ বিকশিত করে। সত্যবাদী লোকের কথা ও কাজে কোনো পার্থক্য থাকে না। সত্যবাদিতা মানুষকে খাঁটি সোনার মতো নিখাদ করে তোলে। সত্যের মধ্যে মহান আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হয়। সত্যের মধ্য দিয়েই মানুষ অর্জন করে সততা। সততা মানব চরিত্রের অপার একটি মহৎ গুণ। কোনো প্রকার পাপের কাজ থেকে দূরে থেকে ন্যায় ও সত্যের প্রতিফলন ঘটিয়ে চরিত্রের বিকাশ ঘটাতে পারলে তাতে সততার যথার্থ পরিচয় পাওয়া যায়। তাই যুগে যুগে সত্যের সাধনা চলছে। প্রসঙ্গত কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন-
‘এত সব যার প্রাণ উৎসব সেই আজ শুধু নাই,
সত্য-প্রাণ সে রহিল অমর, মায়া যাহা হল ছাই!
ভুল যাহা ছিল ভেঙে গেল মহাশূন্যে মিলালো ফাঁকা,
সৃজন-দিনের সত্য যে, সে-ই রয়ে গেল চির আঁকা।’

শ্রেষ্ঠ গুণ : সত্যবাদিতা মানবজীবনের একটি শ্রেষ্ঠ গুণ। যে-সব গুণ জীবনকে সার্থক ও বিশিষ্ট করে তোলে তার মধ্যে সত্যবাদিতার স্থান সবার ওপরে। সত্যের অনুসারণে জীবন সুন্দর হয়। সত্যকে অবলম্বন করলে জীবনে সাফল্য অনিবার্য। সত্যবাদী লোক সমাজে সম্মান ও মর্যাদার আসন পান। সবাই তাঁকে বিশ্বাস করে। সকল পাপের উৎস হল মিথ্যা। কেননা মিথ্যা থেকেই শুরু হয় প্রতারণা, জালিয়াতি, শঠতাসহ নানাবিধ কুকর্ম। তাই মিথ্যা বলা মহাপাপ। আর সত্যবাদিতা মানুষের শ্রেষ্ঠ গুণ।

সত্যবাদিতার সুফল ও প্রয়োজনীয়তা : সত্যবাদীকে সবাই বিশ্বাস করে। সমাজে তাঁকে সবাই শ্রদ্ধার চোখে দেখে এবং ভালোবাসে। অপরদিকে মিথ্যাবাদীকে কেউ বিশ্বাস করে না। সমাজে তাকে সবাই ঘৃণার চোখে দেখে। সমাজে সত্যের জয় এবং মিথ্যার পরাজয় নিশ্চিত। সত্যবাদিতা থেকে বিচ্যুত হলে মানুষের নৈতিক অবক্ষয় ঘটে ফলে সমাজ জীবনে অবৈধ কার্যকলাপ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে এবং মানুষের মহৎ গুণাবলির তিরোধান ঘটে। মানুষ তখন নানা অন্যায় কাজে লিপ্ত হয়। সমাজে দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা। তাই আদর্শ জীবনযাপনের জন্য সততা ও সত্যবাদিতা অপরিহার্য।

বাস্তব অবস্থা : সততা ও সত্যবাদিতা বাস্তব জীবনের একটি মহত্তর দিক হলেও বাস্তব জীবনে বিশেষত দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে তা যথার্থ মর্যাদা লাভ করতে পারছে না। সততা পরিহার করে মানুষ সত্যপথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে। ফলে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধিকেই তারা প্রাধান্য দিয়ে নানা রকমের অত্যাচার, অনাচার ও দুর্নীতি করে চলেছে। অসততার প্রতি মানুষে তেমন প্রতিবাদ বা বিরূপতা দেখা যাচ্ছে না। সততা বিসর্জন দিয়ে মানুষ এখন নিজের স্বার্থ সাধনে তৎপর। অন্যায় বা অবৈধ পথ অনুসরণ করায় এখন সমাজে এসছে অবক্ষয়। ঘরে-বাইরে সর্বত্রই আজ মনুষ্যত্বের দীনতার চিত্র। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় বড়দের কাছ থেকে ভালো কিছু শেখার আশা করা যায় না। যুব সমাজকে নতুন চেতনায় উদ্দীপ্ত করার মতো আজ কোনো পরিকল্পনা নেই, ফলে তারা প্রতিনিয়ত অবক্ষয়ের দিকে অগ্রসরমান। বস্তুত সমাজের সর্বস্তরে আজ যে সততা, সত্যবাদিতা ও মূল্যবোধের অভাব, তার মারাত্মক প্রতিক্রিয়া যবকদের মাঝে প্রতিনিয়ত বিস্তৃত হচ্ছে।

কর্তব্য : জীবনকে অবশ্যই সত্যবাদিতার মাধুর্যে ম-িত করতে হবে। অন্যায়ের বা অবৈধ উপায়ে যতই বিত্তশালী হোক না কেন তা যে পাপ তাতে কোনো সন্দেহ নেই। অসত্যের পরাজয় আসবেই ও ন্যায়ের পথ চির উজ্জ্বল থাকবেই। সেজন্য সততা ও সত্যবাদিতার অনুশীলন করতে হবে এবং জীবনে তার প্রতিফলন ঘটিয়ে যথার্থ মনুষ্যত্বের অধিকারী হতে হবে।

প্রভাব : মহামানবগণ সত্যের অনুসরণে তাঁদের জীবনের মহান সাধনাকে সফল করেছেন। সত্যবাদিতার জন্য যেমন তাঁরা লক্ষ্য অর্জনে সাফল্যলাভ করেছেন, তেমনি সত্যের বলে বলীয়ান হয়ে তাঁরা প্রবল শত্রুকেও পরাজিত করে নিজেদের প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করেছেন। সত্যের সাধনায় মহাপুরুষগণ জীবনকে যেভাবে গৌরবান্বিত করে গেছেন তা মানুষের কাছে মহান আদর্শ হিসেবে যুগ যুগ ধরে প্রেরণা দেয়।

উপসংহার : সত্যকে যারা মর্যাদা দেয় না তারা উদার হতে পারে না, তাদের মনে চিরদিন ভয় বিরাজ করে। সত্যবাদিতার মহৎ গুণের অভাবে মানুষের মন সব সময়ের জন্য ছোট হয়ে থাকে। অন্যাদিকে সত্যবাদী মানুষ নির্ভীক হয়, দুর্বার সাহস তার মনে বাসা বাঁধে। সে জন্য সত্যের পথ দৃঢ়ভবে আঁকড়ে থাকতে হবে, আর মনে রাখতে হবে কবিগুরুর অমর বাণী:
মুক্ত করো ভয়, আপন মাঝে শক্তি ধরো,
নিজেরে করো জয়,
দুর্বলেরে রক্ষা করো দুর্জনেরে হানো,
নিজেরে দীন নিঃসহায় যেন কভু না জানো।
মুক্ত করো ভয়,
নিজের ‘পরে পরিতে ভয় না রাখে সংশয়।

14 Comments

  1. So helpful.utmost thank you for it. It got me 8out of 10 in RUMC

    ReplyDelete
  2. Add this point: সত্যবাদিতার চর্চা

    ReplyDelete
  3. good . But needed to add more topics and examples.All the best.

    ReplyDelete
  4. Good. But you should add more points

    ReplyDelete
  5. Wondering. It helps in my current exam
    Thank you so much for those writing.
    I'm really grateful for the help. 🙂

    ReplyDelete
  6. i got 10 out of 10 after writing it in exam

    ReplyDelete
  7. Thank you very much

    ReplyDelete
  8. this is really epic

    ReplyDelete
  9. It's really good and helpful ☺️

    ReplyDelete
Post a Comment
Previous Post Next Post