পহেলা বৈশাখ

ভাবসম্প্রসারণ : দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর

দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর

সভ্যতা মানুষকে যেমন অনেক কিছু দিয়েছে, তেমনি কেড়ে নিয়েছে অনেক কিছু। পরিভোগের নানা উপকরণ মানুষের জীবনে এখন ছড়ানো, কিন্তু নগর সব্যতার জঠরে বস্তুভারের বেড়াজালে মানুষ হারিয়েছে নিসর্গবেষ্টিত জীবনের শান্ত সৌন্দর্য। হারিয়েছে প্রকৃতির মুক্ত অঙ্গনে দেহ মনের অবাধ ও স্বচ্ছন্দ বিকাশের সুযোগ। মানুষের জীবনে এসেছে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত জটিলতা। আধুনিক সভ্যতার পাষাণ-পিঞ্জরে অবরুদ্ধ মানুষ মুক্তি প্রত্যাশায় আবার উন্মুখ হয়ে উঠেছে প্রকৃতিচালিত হৃত জীবনকে ফিরে পাওয়ার জন্যে।

আধুনিক নগর সভ্যতা মানব জীবনে অনেক অগ্রগতি এনেছে এ কথা সত্য। কিন্তু এ সভ্যতা আজ মানুষের হৃদয়বৃত্তির ওপর এমনভাবে চেপে বসেছে যে, মানুষ হয়ে পড়ছে ক্রমেই হৃদয়হীন নিষ্ঠুর। এই সভ্যতা মানুষকে করে তুলেছে পরিভোগমুখী, উচ্চাভিলাষী, আত্মকেন্দ্রিক ও স্বার্থসর্বস্ব। মানুষের জীনব থেকে মানবিকতাবোধের অবসান ঘটছে। মানুষ হয়ে উঠছে অনেক বেশি যান্ত্রিক। সমাজ-জীবনে স্বার্থসচেতনতা হয়ে উঠছে ক্রমবর্ধমান। মানুষের পরিভোগ চাহিদা হয়ে উঠছে আকাশচুম্বী। মানুষে মানুষে বৈষম্য হচ্ছে প্রকট। মানব সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রাধান্য ঘটছে কুটিলতা ও কপটতার। সব কিছুকে বিচার করা হচ্ছে বৃক্তিগত স্বার্থের মানদণ্ডে। মানব সভ্যতার এই দুঃসহ অবরোধ থেকে মুক্তি পেতে চান হৃদয়বান মানুষ। তাঁরা জটিলতাহীন শান্ত সমাহিত হৃত জীবনের স্বপ্ন দেখেন। জীবনের সৌন্দর্য ফিরে পাওয়ার জন্যে তাঁরা ফিরে যেতে চান প্রকৃতিনির্ভর প্রসন্ন, উদার, শান্ত জীবনে। যে জীবনে নেই ভোগের পঙ্কিলতা, নেই লোভের বিকার। মাটির কাছাকাছি সে জীবনে তাঁরা ফিরে পেতে চান স্বেদের গন্ধ আর শ্রমের স্পন্দন। পণ্যবিলাসী জীবনের চেয়ে সরল, সহজ জীবন তাঁদের কাছে অনেক বেশি আকর্ষণীয়। সেই মানসিক প্রশান্তিময় হৃদয়ের সম্পর্কপ্রধান জীবনে ফেরার জন্যে হৃদয়ানুভূতিশীল মানুষ আজ ব্যাকুল হয়ে উঠেছেন।


এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো


মূলভাব : সৃষ্টির প্রথমে মানুষ ছিল অরণ্যচারী। তারপর মানুষ এল সভ্যতার এ যুগে। কিন্তু মানুষ সভ্যতার শীর্ষে উঠে যাওয়ার পরেও পূর্ব পুরুষের মতই কিছুটা প্রীতি অনুভব করে।

সম্প্রসারিত ভাব : প্রাচীন সভ্যতা ছিল গ্রামীণ। তাই প্রাচীন। তাই প্রাচীন সভ্যতা এবং আধুনিক নাগরিক সভ্যতার মধ্যে ব্যবধান লক্ষ্য করা যায়। মানুষের আদিম বাসস্থান ছিল অরণ্যে। এ অরণ্যের পটভূমিতে প্রকৃতির দান ছিল অফুরন্ত। উদাহরণস্বরূপ, বাতাস উন্মুক্ত প্রান্তর, ধীর স্রোতা তটিনী আর সীমাহীন নীল আকাশ। সেখানে মানুষের মনকে মোহমুক্ত করে উড়বার শক্তি দিত এবং কল্পনাকে দিত গতি। তখন মানুষের আকাঙ্খা ছিল খুবই সীমিত-বর্তমানের মত এত রেষারেষি, এত বিদ্বেষ তখন ছিলনা।

বর্তমানে মানুষ উন্নতির শীর্ষদেশে উঠছে। আর এজন্য চলছে প্রতিযোগিতা। দিকে দিকে চলছে হানাহানি। কিন্তু অরণ্যে সব হানা-হানি, রেষা-রেষি নেই বলে অরণ্যে জীবন যাপন যথার্থ আনন্দ পাওয়া যায়। তাই লক্ষ-কোটি বছর পরেও মানুষ অরণ্যের প্রতি টান অনুভব করছে, চাইছে ফেলে আসা সে দিনগুলোতে ফিরে যেতে।

আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের সভ্যতার যুগে মানুষ আজ শান্ত-ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। তাই মানুষ আবার নির্ভেজাল জীবনের অন্বেষণ করছে।

8 Comments

Post a Comment
Previous Post Next Post