ভাবসম্প্রসারণ : তুমি অধম, তাই বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন?

তুমি অধম, তাই বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন?

অন্যের অন্যায়, অমানবিক ও অশুভ আচরণ কখনও মানুষের অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় আদর্শ হতে পারে না। কলুষময় পরিবেশের মধ্যে থাকলেও প্রকৃত মানুষের সাধনা হওয়া উচিত সত্য, ন্যায় ও মানবিকতার আদর্শে জীবন গঠন। মনুষ্যত্বের এই সাধনায়ই মানুষ প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠতে পারে। পরের সুকৃতিতে অনুপ্রাণিত হওয়া প্রশংসনীয় কিন্তু পরের স্বার্থপরতায় প্রভাবিত হওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত।

চরিত্র-বৈশিষ্ট্য ও মানসিকতার বিচারে সংসারে সব মানুষ অভিন্ন চরিত্রের হয় না, মানুষের মধ্যে ভালোও আছে মন্দও আছে। সৎও আছে, অসৎও আছে। এদের মধ্যে উত্তম মানুষই হল সমাজের আদর্শ। এঁরা চিন্তা ও কর্মে সত্য ও ন্যায়ের অনুসারী, এদের জীবন-যাপন সহজ-সরল-অনাড়ম্বর। অন্যায় পথে অর্থবিত্ত অর্জনের সব ধরনের মোহ থেকে এঁরা মুক্ত। নিজের সাধ্য ও সামর্থ্য মতো এঁরা অন্যের কল্যাণের চেষ্টায় সচেষ্ট থাকেন। পক্ষান্তরে যারা অধম তারা স্বার্থান্বেয়ী, অর্থলোলুপ। সমাজের মঙ্গলের চেয়ে ছলে-বলে-কৌশলে অন্যেয় পন্থায় নিজের স্বার্থ হাসিলই এদের একমাত্র লক্ষ্য। স্বভাব বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে এরা নীচ ও খল প্রকৃতির। অবৈধ পন্থায় উপার্জিত অর্থ ও বিত্তের দম্ভে এরা ধরাকে সরা জ্ঞান করেন। অন্যকে শোষণ ও লুণ্ঠন করে সম্পদ বৃদ্ধিতে এদের আনন্দ। অন্যকে অত্যাচার করে এরা পায় বিকৃত পরিতৃপ্তি। ঈর্ষা, হিংসা, জিঘাংসা এদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। অর্থ-বিত্ত ও ক্ষমতার জোরে এরা সমাজে হয়তো সাময়িক দাপটে রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেন কিন্তু চূড়ান্ত বিচারে এরা নিন্দিত হন। ইতিহাস এদের মনে রাখে না। যদি রাখে তবে তা এদের ঘৃণিত ভূমিকা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্যে, যেন অন্যেরা এদের পথ অনুসরণ না করেন। এসব নীচ ও অদম লোকের পশু স্বভাব কখনো মানুষের অনুকরণীয় আদর্শ হতে পারে না। এদের পথ সর্বদাই পরিত্যাজ্য। এদের সঙ্গে সম্পর্কও পরিহার্য। বস্তুত অধম না হয়ে উত্তম হওয়াই সমুষ্যত্বের সাধনা। উত্তম আদর্শই মানব জীবনে আদর্শ। অধমের কার্যকলাপের বিপরীতে উত্তম কার্যকলাপের আদর্শ স্থাপনই মনুষ্যত্বের লক্ষণ। সেই জন্যেই ছন্দের জাদুকর সত্যেন্দ্রনাথ লিখেছেন :
“কুকুরের কাজ কুকুর করেছে কামড় দিয়েছে পায়,
তা বলে কুকুরে কামড়ানো কিরে মানুষের শোভা পায়?”

প্রকৃত মানুষ হতে হলে অন্যের কদর্য ব্যবহারে প্রভাবিত হলে চলবে না। মহৎ অভিপ্রায় সফল করে তুলতে হলে এই সহষ্ণিুতা অপরিহার্য।


এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো


মূলভাব : অন্যের খারাপটুকু উদাহরণ হিসেবে গ্রহণ করা উচিত নয়।

আভিধানিক অর্থ : আমার পাশের জন খারাপ বলে আমার ভাল হতে দোষ নেই।

সম্প্রসারিত ভাব : পৃথিবীতে ভাল ও মন্দ দুই-ই আছে। মন্দের আধিক্য বেশী বলে মন্দকেই আঁকড়ে ধরতে হবে এমন কথা নেই। মন্দ লোকেরা নিজের স্বার্থের জন্য যেকোন অপকর্ম অবলীলায় করতে পারে। এবং তারা নিশ্চিতমনে অপরের সর্বনাশ করে থাকে।

মন্দ লোকের কোন আদর্শ নেই। তারা হীনমনা। তাদের নীচ কাজের প্রত্যুত্তরে আর একটি নীচকাজে অংশ নেওয়া কোন মহৎ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। একজন নীচ ব্যক্তি যদি কোন খারাপ কাজ করে বা কোন লোকের খারাপ তাই খারাপ কাজে তার অরুচি নেই। কোন মহৎ লোক কোন ক্রমেই খারাপ লোকের কু-কর্মের উত্তর দিতে দিয়ে খারাপ কাজে অংশ নেবেন না। অধম ব্যক্তিরা অমঙ্গল করে। তাই বলে উত্তম ব্যক্তি সে পথ ধরে চলে না। উত্তম হতে হলে হিংসার পথ, অন্যায়ের পথ ত্যাগ করতে হয়। কুকুর অধম প্রাণী। সে পায়ে কামড়ায়। তাই বলে মানুষ কখনো কুকুরের পায়ে কামড়ায় না।

অধম যে সে ক্ষতি করতে পারে। তার ক্ষতি করা প্রবৃত্তিজাত। মহৎ ব্যক্তি কখনো ক্ষতিকর কাজে অংশ নেন না। কোন ব্যক্তি দুর্ব্যবহার করলে প্রত্যুত্তরে তার প্রতি দুর্ব্যবহার করা মহত্ত্বের লক্ষণ নয়। তার ব্যবহারের উত্তরে উত্তম মানবিক আচরণই কাম্য। অর্থাৎ, ক্ষমা, বিনয়, সহ্যগুণ ও ভালোবাসাই হচ্ছে চরিত্র গঠনের আদর্শ।

8 Comments

Post a Comment
Previous Post Next Post