ভাবসম্প্রসারণ : চরিত্র জীবনের অলংকার ও অমূল্য সম্পত্তি

চরিত্র জীবনের অলংকার ও অমূল্য সম্পত্তি

মানুষের জীবনের উৎকর্ষ-অপকর্ষের বিচার হয় তার চরিত্র-পরিচয়ে। মানুষের জীবন ও কর্মের মহিমা তার চরিত্রের আলোকেই পায় দীপ্ত। মানুষ তার চরিত্র-বৈশিষ্ট্য অনুসারেই কাজ ও চিন্তা করে এবং সেই অনুযায়ীই সমাজ-জীবনে ভূমিকা রাখে। মানুষের জীবনে চরিত্র যেন অলঙ্কার ও সম্পদ। তা তাকে দেয় উজ্জ্বল শোভা ও সমুন্নত মহিমা।

ফুলের সম্পদ যেমন তার সৌন্দর্য ও সুরভি, মানুষের সম্পদও তেমনি চরিত্রশক্তি। নানা সদগুণের সমন্বয়ে মানুষ হয়ে ওঠে চরিত্রবান। সদাচরণ, সত্যবচন, সৎসংকল্প ও সৎজ্ঞান হয় তার জীবনের আদর্শ। মানব হিতৈষণা হয় তার জীবন-ব্রত। তার চারিত্রিক গুণাবলির স্পর্শে সমাজের অধম ব্যক্তিও নিজের কলুষিত জীবনকে শুধরে নেওয়ার সুযোগ পায়। স্পর্শমণির ছোঁয়ায় লোহা যেমন সোনা হয়ে ওঠে তেমনি সৎ চরিত্রের প্রভাবে মানুষের পশু প্রবৃত্তি ঘুচে যায়, জন্ম নেয় সৎ, সুন্দর ও মহৎ জীবনের আকাঙ্ক্ষা। চরিত্রশক্তিতে বলিয়ান না হলে মানুষ সহজেই হীন লালসার কবলে পড়ে অপকর্মের শিকার হয়। চরিত্রহীন মানুষের সংখ্যা বাড়লে সমাজ-জীবনে দেখা দেয় নৈতিক অধঃপতন, সমাজে দেখা দেয় মূল্যবোধের অবক্ষয়। নীতি-আদর্শে উজ্জীবিত চরিত্রশক্তির অভাবে জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নত জাতির জীবনও হয়ে পড়ে কলঙ্কিত। নৈতিক অধঃপতনের কবলে পড়লে শিক্ষিত সমাজের শিক্ষাও হয়ে পড়ে মূল্যহীন। তাদের শিক্ষা ও জ্ঞান সমাজের কল্যাণে আসে না। পক্ষান্তরে চরিত্রবান লোক কেবল জীবনে মহত্ত্ব অর্জন করেন না, মৃত্যুর পরও হন স্মরণীয়-বরণীয়। কারণ, তাঁরা তাঁদের চারিত্রিক প্রভায় সমাজ ও জাতীয় জীবনের অগ্রগতি ও উন্নতির পথে আলোকবর্তিকার মতো কাজ করেন। হযরত মহম্মদ (সা.), বিদ্যাসাগরের মতো শিক্ষাগুরুর চরিত্রশক্তি তারই উজ্জ্বল প্রমাণ। বস্তুত, চরিত্রের শক্তিতেই মানুষ হয় মহৎ। পায় সত্যিকারের গৌরব ও মর্যাদা। মানব জীবনকে করে সৌন্দর্যময় ও উৎকর্ষমণ্ডিত। চরিত্রকে মানব জীবনের অলঙ্কার ও সম্পত্তি হসেবে দেখা হয় এ কারণেই।


এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো


মূলভাব : চরিত্রহীন মানুষ পশুর সমান। আর চরিত্র হলো মানব জীবনের মুকুট স্বরূপ। যার চরিত্র নেই, তার মান-মর্যাদাও নেই।

সম্প্রসারিত ভাব : প্রত্যেক মানুষ স্বতন্ত্র চরিত্রের অধিকারী। জন্মসূত্রে মানুষ পিতা-মাতার কিছু বৈশিষ্ট্য লাভ করে। জীবনের বৃহত্তর অংশ বাইরের জগতে কাটায়। প্রাকৃতিক, পরিবারিক, আর্থ-সামাজিক ইত্যাদি বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক শক্তি ধীরে ধীরে একটি বিশিষ্ট চরিত্র বিকশিত করে তোলে। চরিত্রের দ্বারা মানুষ সামাজিকভাবে চিহ্নিত হয়। একারণে, এর নির্মলতা ও বিশুদ্ধতা বজায় রাখা একান্তভাবে প্রয়োজন।

চরিত্র জীবনের অলঙ্কারস্বরূপ। মূল্য দিয়ে একে পরিমাপ করা যায় না। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে চরিত্র এককভাবে মানুষকে উপস্থাপন করে। এটিই তার নিজস্বতা। সুতরাং চরিত্রের উৎকর্ষতা লাভ করাই হওয়া উচিত মানুষের অন্যতম সাধনা। একেবারে নিঃস্ব অথচ নির্মল সচ্চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তির তুলনায় ধনবান এ পৃথিবীতে আর কেউ নয়। সচ্চরিত্রবান লোকের মধ্যে উত্তম গুণাবলির সমাবেশ ঘটে তাদের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ যেমন বসন তেমনি মানবতাবোধও প্রবল। তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্ছার এবং ন্যায়ের পক্ষে দণ্ডায়মান। তাদের আদর্শ সকল প্রতিকূল অবস্থার মাঝে অটল থাকে। দ্বেষ-বিদ্বেষ, লোভ-লালসা, ধন-বিলাসের মোহ তাদেরকে স্পর্শ করতে পারে না। সহানুভূতি, প্রেম, ভালোবাসা, আত্মসংযম, ন্যায়পরায়ণতা, সত্যনিষ্ঠা, আল্লাহ ভক্তি তাদের চরিত্রে এক বিশেষ মাত্রা দান করে। চরিত্র যেমন মানুষের অমূল্য সম্পদ, তেমনি চরিত্রবান মানুষ জাতির সম্পদ। অসৎ সরিত্রের অধিকারী মানুষ শুধু নিজেদের পতন ডেকে আনে না জাতিকেও ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়। তাই, চরিত্র কঠোর সাধনালব্ধ সম্পদ। দীর্ঘ সংযম ও আত্ম-অনুশীলনের মাধ্যমে একে গড়ে তোলা সম্ভব।

চরিত্রবান ব্যক্তিরা সমাজে যুগে যুগে স্মরণীয় ও বরণীয় ব্যক্তিরূপে বেঁচে থাকেন। সে কারণে, জীবনের অমূল্য সম্পদ ও অলংকার চরিত্রের বিকাশ সাধনই মানুষের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।


এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো


মূলভাব : চরিত্র মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ। চারিত্রিক গুণই মানুষকে সত্যিকারের মানুষ করে তোলে, বাঁচিয়ে রাখে, অমর করে রাখে। 

সম্প্রসারিত ভাব : মানবজীবনের বিকাশ ও উন্নতির জন্য ভালো চরিত্রের অধিকারী হওয়া দরকার। চরিত্রহীন লোক নানা রকম অন্যায় ও অসত্যের পূজারি। চরিত্রবান ব্যক্তি সত্য ও ন্যায়ের অনুসারী। মানুষের মহিমা অমল চরিত্রের আলোকেই দ্যুতি পায়। টাকা-পয়সা, ধন-দৌলতের বিনাশ আছে কিন্তু সচ্চরিত্রের বিনাশ নেই। ইংরেজিতে তাই বলা হয় -
"When money is lost
 Nothing is lost When health is lost
 Something is lost
 When character is lost
 Everything is lost."

গাড়ি-বাড়ি, ধন-সম্পত্তি, শিক্ষাগত যোগ্যতা সবকিছুই মূল্যহীন হয়ে পড়ে যদি সেই লোক চরিত্রহীন হয়। পক্ষান্তরে চরিত্রবলে বলীয়ান মানুষ সবার শ্রদ্ধা আদায় করতে পারে। কারণ চরিত্রবান মানুষকে সত্য, সুন্দর ও ন্যায়ের পথে বিচরণ করতে সাহায্য করে। একজন সচ্চরিত্রবান লোকের সংস্পর্শে এলে মানুষ আদর্শ, সত্য ও সুন্দর পথের সন্ধান পায়। পক্ষান্তরে দুশ্চরিত্রের ব্যক্তি সমাজ ও জাতির জন্য অকল্যাণকর। তারা মানুষে মানুষে বিভেদ, কাটাকাটি, হিংসাদ্বেষ, লোভ-লালসার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিয়ে পরিবেশকে কলুষিত করে। চরিত্র মানুষের ব্যক্তিত্ব ও মনুষ্যত্বের পরিচয় বহন করে। যেসব গুণ মানুষকে মহত্ত্বের পরিচয় দান করে, যেসব গুণ মানুষকে মহত্ত্বের গৌরব তিলক পরিয়ে দেয়, তাদের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করে চরিত্র। চরিত্রবলেই মানুষ জগতের বুকে অবিনশ্বর কীর্তি স্থাপন করতে সক্ষম হয়।

সিদ্ধান্ত : চরিত্রগুণেই মানুষ ও পশুর মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা হয়। তাই প্রতিটি মানুষেরই চারিত্রিক দৃঢ়তা থাকা প্রয়োজন। 

3 Comments

Post a Comment
Previous Post Next Post