ভাবসম্প্রসারণ : স্বদেশের উপকারে নেই যার মন / কে বলে মানুষ তারে, পশু সেই জন।

স্বদেশের উপকারে নেই যার মন
কে বলে মানুষ তারে, পশু সেই জন।

যেসব মহৎ গুণ অন্য প্রাণী থেকে মানুষকে আলাদা করেছে তার একটি হচ্ছে স্বদেশপ্রেম। জন্মভূমির প্রতি ভালোবাসা সামাজিক মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্য। এই গুণ যার মধ্যে নেই সে দেশ বা জাতির কাছে মানুষ হিসেবে তুচ্ছ। সমাজের কাছে সে মর্যাদার আসন পেতে পারে না। বরং সে পায় মানুষের ঘৃণা ও নিন্দা।

জন্মভূমি মানুষের অস্তিত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত। প্রতিটি মানুষ জন্ম লাভ করে আপন আপন জন্মভূমির কোলে। তার ধুলো-মটিতে ও আলো-বাতাসে সে বড়ো হয়। তার প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপুষ্ট হয় মানুষের জীবন। তাই স্বদেশকে ভালোবাসা, দেশ ও জাতির উন্নতির জন্যে কাজ করা প্রতিটি মানুষের বিশেষ কর্তব্য। মানুষের জীবনে স্বদেশের অবদান এত বিশাল যে, স্বদেশভূমি তার কাছে অন্যতম প্রিয় বস্তু বলে গণ্য হয়। তাকে সে ভালো না বেসে পারে না। স্বদেশের জন্যে মানুষের সে ভালোবাসা প্রকাশ পায় দেশ ও দেশবাসীর অগ্রগতি ও কল্যাণের জন্যে দেশপ্রেমিকের চিন্তা ও কর্মের মাধ্যমে। সত্যিকারের দেশপ্রেমিক দেশের জন্যে ব্যক্তিগত স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে থাকেন। দেশের স্বাধীনতা ও সম্মান রক্ষার মুহূর্তে প্রয়োজনে জীবন উৎসর্গ করতেও তিনি দ্বিধা করেন না। আমাদের দেশের মহান স্বাধীনতা আন্দোলনের বীর শহীদেরা দেশের জন্যে জীবন উৎসর্গ করেই বরণীয়-স্মরণীয় হয়ে আছেন।

বস্তুত, দেশের জন্যে কাজ করতে পারলে সত্যিকারের মানুষের মতো মানুষ হওয়া যায়। যাদের অন্তরে দেশপ্রেম নেই তারা নিতান্তই আত্মসর্বস্ব ও আত্মস্বার্থপর মানুষ। মানবিক গুণের চেয়ে তাদের মধ্যে প্রধানভাবে কাজ করে পশুপ্রকৃতি। পক্ষান্তরে মানুষের ধর্ম হচ্ছে আত্মপ্রীতিতে মগ্ন না হয়ে স্বদেশপ্রীতিকে জীবনের অন্যতম আদর্শ করা।


এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো


মূলভাব : স্বদেশের প্রতি প্রেম, প্রীতি ও হিত সাধনার মধ্যমে মানুষ প্রকৃত মানুষ হয়ে গড়ে উঠতে পারে।

সম্প্রসারিত ভাব : স্বদেশ বা জন্মভূমি মানব জীবনের জন্য স্রষ্টা কর্তৃক প্রদত্ত্ব এক মহা নেয়ামত। মানুষ ইচ্ছা করে কোন ভূখণ্ডে জন্ম নিতে পারেনা। আর তাই স্বদেশের প্রতি সকলের বিশেষ দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। এ দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পাদনের মধ্য দিয়ে মানুষ মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটাতে পারে। দেশ ও জাতির কল্যাণ সাধনে আমাদেরকে আত্মনিয়োগ করতে হবে। ইহা মানবের অমৃত রসায়ন। এর মধুরতা কোনদিন নিঃশেষ হয় না। স্বদেশতার আলো, বাতাস, পানি আর শস্য ভাণ্ডার দিয়ে আমাদের যে উপকার করেছে তবে আমরা মানুষ হয়ে কেন দেশের সেবা করতে পারব না। অর্থ, সম্মান ও যশ দিয়ে মানুষ তার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না বরং দেশপ্রেমের মধ্য দিয়েই প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। যার নিকট দেশপ্রেম নেই সে ইতিহাসের আস্থাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হতে বাধ্য। সে মরে যাওয়ার পর মানুষ তাকে ধিক্কার দিতে বাধ্য হবে। রূপ, ধন, আভিজাত্য দিয়ে মানুষের পরিচয় হয় না। মানুষের পরিচয় চরিত্র ও দেশ প্রেমের মধ্য দিয়ে। পশুদের জ্ঞান নেই তাই সে পশু দেশপ্রেম কি জানে না। তেমনি মানুষের জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও যদি সে দেশ প্রেমের প্রতি এগিয়ে না আসে তবে সে পশুর সমতুল্য হবে। আমরা পৃথিবীর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখি পৃথিবীর সকল মহাপুরুষগণ দেশপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্তের মধ্য দিয়ে জগৎ পূজ্য হয়েছিলেন। হিজরতের সময় জন্মভূমিকে লক্ষ্য করে হজরতের (সঃ) বক্তব্যই তার বড় প্রমাণ। দেশের সুখ-দুঃখে মানুষের এগিয়ে আসা উচিত। স্বদেশ ও স্বজাতির কল্যাণে যে নিজেকে কাজে লাগাতে পারে না সে মানুষ নামের অযোগ্য। যে ব্যক্তি স্বদেশ ও স্ব-জাতির কল্যাণে নিজেকে কাজে লাগাতে না পারে তাবে সে মানুষ, মানুষ নামের অযোগ্য।

5 Comments

Post a Comment
Previous Post Next Post