সম্পদে যাঁদের ঠেকে না চরণ
মাটির মালিক তাঁহারাই হন
মানুষ প্রকৃতির সন্তান। প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে পার্থিব সম্পদে সকল মানুষের অধিকার সমান। কিন্তু মানব সমাজে দেখা যায় এর বিপরীত চিত্র। তা নানা অর্থনৈতিক শ্রেণীতে বিভক্ত। এর ফলে সৃষ্টি হয়েছে অর্থনৈতিক বৈষম্য। শ্রম ও উৎপাদনের সঙ্গে সম্পর্কহীন ব্যক্তিরাই ভূমির মালিক।
শ্রেণীবিভক্ত মানবসমাজ মানুষের মধ্যে শ্রেণী বিভাজন সৃষ্টি করে সমাজের একটা বড় অংশের অধিকারকে খর্ব করেছে। সমাজে সৃষ্টি হয়েছে ভূস্বামী-ভূমিহীন, পুঁজিপতি-শ্রমিক ইত্যাদি শ্রেণী বিভাজন। সম্পদ করায়ত্ত হয়েছে ভূস্বামী ও পুঁজিপতিদের হাতে। এরা বিত্তবান, এদের ভূমিকা শাসকের। পক্ষান্তরে ভূমিহীন ও শ্রমিকরা বিত্তহীন। এরা হচ্ছে শোষিত। সমাজের ধনিকগোষ্ঠী শাসন ও শোষণের সমস্ত ক্ষমতা হাতে নিয়ে বিপুল সম্পদ কুক্ষিগত করেছে নিজেদের হাতে। মাটির মানুষেরা মাটিতে ফসল ফলায়। কলে-কারখানায় উৎপাদন করে। মাটির সঙ্গে তাদের প্রাণের যোগ হলেও তারা তাদের শ্রমের ফসল ভোগ করতে পারে না। ভূমির মালিকানার জোরে ভূস্বামীরা সমস্ত মুনাফা তোলে নিজেদের ঘরে। প্রচুর অর্থ-বিত্তের জোরে তারা ভোগ-বিলাসিতায় জীবন কাটায়। অর্থের জোরে ক্ষমতার দাপটে তারা ধরাকে সরা জ্ঞান করে। ক্ষেতে-খামারে, কলে-কারখানায় তাদের মাটিতে পা রেখে যেমন কাজ করতে হয় না, তেমনি মোটরে, এরোপ্লেনে চড়ে বলেও মাটিতে তাদের পা ফেলতে হয় ক্বচিৎ-কদাচিৎ। কিন্তু তারাই ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। ভূমির সঙ্গে শ্রমের সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও এরা ভূস্বামী। অথচ মাটিতে যারা ফসল ফলায়, তারা ভূমিহীন কৃষক। এই কৃষকের হাড়ভাঙা শ্রমের ফসলের সিংহভাগ আত্মসাৎ ও কুক্ষিগত করে ভূস্বামীরা আরও বিত্তশালী হয়। সম্পদের এই অসম অধিকার মানবসমাজে শ্রেণীবৈষম্য তৈরি করেছে। ধনী আরও ধনী হচ্ছে। ভূমিহীন গরিবরা হচ্ছে অধিকতর শোষিত।
এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো
প্রকৃতির রাজ্যে মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ নেই। সৃষ্টিকর্তার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হল মানুষ। তাঁর সৃষ্টিতে নেই কোন ভেদাভেদ, নেই কোনো ভেদ-বৈষম্যের পার্থক্য-রেখা। তাই পার্থিব সম্পদে সবার সমান অধিকার। কিন্তু অর্থনীতি, সমাজ-জীবনে ব্যাপক হয়ে পড়ার অবশ্যম্ভাবী ফলস্বরূপ দেখা গেছে যে, একশ্রেণীর মানুষ বিত্তশালী হয়ে উঠেছেন এবং অপর এক শ্রেণী ক্রমেই বিত্তহীন হয়ে পড়েছেন। এবং শ্রম ও উৎপাদনের সঙ্গে সম্পর্কহীন ব্যক্তিরাই ভূমির মালিক হয়েছে।
সব সমাজই পরিবর্তনশীল। এই পরিবর্তনশীলতার মধ্যে সমাজের গতি ও দীপ্তি নিহিত। কোন এক সুদূর অতীতে যখন সমাজ সংঘটিত হয়েছিল, তখন সেখানে সবচেয়ে বড় হয়ে দেখা দিয়েছিল বলবানের হাত থেকে আর্ত ও দুর্বলকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি। পরস্পরের সহযোগিতার মধ্য দিয়ে মানুষ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছে। পরবর্তীকালে সমাজ ও সভ্যতা যতই অগ্রসর হয়েছে, ততই অর্থনীতির বিষয় গুরুত্ব এবং তার ফলে জীবনকে বাদ দিয়ে জীবিকা প্রধান হয়ে উঠেছে। মানব-সমাজে সৃষ্টি হয়েছে শ্রেণীবিভাজন; সৃষ্টি হয়েছে ভূস্বামী ও ভূমিহীন, পুঁজিপতি-শ্রমিক শ্রেণীর। সম্পদ করায়ত্ত হয়েছে ভূস্বামী ও পুঁজিপতিদের হাতে। ফলে একশ্রেণীর মানুষ বিত্তশালী হয়ে উঠেছেন এবং অপর এক শ্রেণী ক্রমে বিত্তহীন হয়ে পড়েছেন। একদল হয়ে উঠেছেন অপরিমেয় ঐশ্বর্যের অধিকারী; অপরদল হয়ে উঠেছেন নিদারূণভাবে রিক্ত ও নিঃস্ব। অথচ এই রিক্ত ও নিঃস্ব মাটির মানুষেরাই মাটিতে ফসল ফলিয়েছেন। কলে-কারখানায় উৎপাদন করেছেন। কিন্তু ভূস্বামীরা শাসন ও শোষণের সমস্ত ক্ষমতা কুক্ষিগত করে ভূমির মালিকানার জোরে, ক্ষমতার দাপটে সমস্ত মুনাফা তুলে নিয়েছে নিজের ঘরে। এভাবে প্রচুর অর্থ-বিত্তের জোরে তারা ভোগ-বিলাসিতায় জীবন কাটায়- গাড়িতে কিংবা প্লেনে চড়ে, বাস করে দালান-কোঠায়। তাদের পা ক্বচিৎ-কদাচিৎ মটিতে পড়ে। মাটির সাথে তাদের সম্পর্ক না থাকলেও মটির মালিক তরাই। ভূমির সাথে শ্রমের সম্পর্ক না রেখেও এরাই ভূস্বামী। অথচ মাটিতে যারা ফসল ফলায় তারা কখনোই মাটির মালিক হতে পারে না, যদিও এরাই সমাজ, দেশ ও জাতির মেরুদণ্ড।
শ্রমিক শ্রেণীর সংকট মোচনই হবে জাতীয় জীবনের রক্ষাকবচ। জাতীয় জীবনের এ রক্ষাকবচকে সমুন্নত রাখতে না পারলে, একটি জাতির মেরুদণ্ড কখনোই সুদৃঢ় হতে পারে না।
It is helpful
ReplyDelete