যাহা চাই ভুল করে চাই
যাহা পাই তাহা চাই না
মূলভাব : প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তির মধ্যে অসঙ্গতি চিরন্তন। এ দুটো কখনো সমান্তরাল রেখায় অবস্থান করে না। তাই কল্পনার চাওয়ার সাথে বাস্তবের পাওয়ার কিছু পার্থক্য থেকে যায়।
সম্প্রসারিত ভাব : প্রত্যেকটি মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। ইচ্ছা-অনিচ্ছা, চিন্তা-চেতনা, চাওয়া-পাওয়া, আশা-আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন-কল্পনার দিক থেকে প্রত্যেকটি মানুষই আলাদা। কারো ইচ্ছা-অনিচ্ছার সাথে অন্য কারো মিল নেই। তেমনি একজনের স্বপ্ন-কল্পনার সাথে অন্যের পার্থক্য দেখা যায়। আবার একজন মানুষের প্রত্যাশার সাথে নিজেরই প্রাপ্তির মিল থাকে না। অর্থাৎ ব্যক্তি যখন মনে মনে কিছু চাওয়ার কথা ভাবে, তখন পারিপার্শ্বিক বাস্তবতার সাথে সঙ্গতি রেখে ভাবে না। তার প্রত্যাশার মধ্যে কিছু ভুল থেকে যায়। অথবা চাওয়াটাই অতিরিক্ত হয়ে যায়। অন্যদিকে কিছু চাইলেই যে অন্যের কাছে তা পাওয়া যাবে এটাও ঠিক নয়। কেননা অন্যের নিজেরও পৃথক চাওয়া আছে, প্রত্যাশারও স্বাতন্ত্র্য আছে। কাজেই একজন যা চায় অন্যের চাওয়ার সাথে তা না মিললে তার প্রত্যাশা নিশ্চিতিই ব্যর্থ হবে। অর্থাৎ একজনের চাওয়া তার নিজের, অন্যের চাওয়াটাও অন্যের নিজস্ব। একজনের প্রাপ্তির সাথে অন্যের প্রাপ্তির সামঞ্জস্য নেই। এদিক থেকে প্রাপ্তির সন্তুষ্টিও জনে জনে আলাদা। একজন অল্পেই তুষ্ট, কিন্তু অন্যজন বেশি পেয়েও সন্তুষ্ট নয়। প্রাপ্তিতে সন্তুষ্টি থাকে না বলেই আমরা মনে করি চাওয়াটাই ভুল হয়েছে। মনে হয় এত বেশি চাওয়া ঠিক হয় নি। কখনও কখনও অল্প বা সামান্য চাওয়া ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে। তখন মনে হয় চাওয়াটাই মহা ভুল হয়েছে।
আবার আমরা যে রকম চাই তা কোনো কোনো সময় অন্যরকম প্রাপ্তি হয়ে আসে। যেমন আমি কারো উপকার বা কল্যাণ চিন্তা করে কোনো কাজ করলাম। আমার ধারণা এতে সে খুশি হবে। কিন্তু দেখা গেল, সে ভুল বুঝে আমাকে উল্টো আঘাত করল। আমার সৎ চাওয়াটা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হল। অন্যদিকে আমি একজনের কাছে যা চাই নি বা যে রকম চাই নি, সেরকম কিছু পেয়ে গেলাম। তাতে আমি মোটেই তৃপ্ত বা সন্তুষ্ট হলাম না, যদিও তা সন্তুষ্টিদায়ক। অর্থাৎ প্রাপ্তির সাথে আমার ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষার মিল নেই। মানুষ কী চায়, কতটুকু চায়, কীসে তার তৃপ্তি- এটাই হয়তো জানে না। কেননা নিজের সম্পর্কে মানুষ পুরোপুরি সচেতন নয়। তাই নিজের রহস্য, নিজের বৈচিত্র্য, নিজের পরিবর্তনের স্বরূপ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা তার নেই। মুহূর্তে মানুষের মন পাল্টায় আবার পাওয়ার আনন্দও মুহূর্তে অন্তর্হিত হয়।
মন্তব্য : মানুষের প্রত্যাশার শেষ নেই। আবার প্রাপ্তিরও শেষ নেই। পরিমিত চাওয়ার মধ্যেই আছে তৃপ্তি বা সন্তুষ্টি। কেবল সীমাবদ্ধ চাওয়া-পাওয়ার মাধ্যমেই জীবন হয়ে ওঠে আনন্দময়।
এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো
মূলভাব : চাওয়া-পাওয়া মানুষের জীবনে একটি মৌলিক ঘটনা। মানুষের এ চাওয়া পাওয়ার মধ্যে, আমরা যখন যা চাই তা পাই না; আবার, যা পাই তা চাই না।
সম্প্রসারিত ভাব : এ পৃথিবীতে মানুষের জীবনে চাওয়া ও পাওয়ার কোন শেষ নেই। তার মন নিত্য নতুন প্রাপ্তির দিকে ধেয়ে চলে। মন, রুচি সবসময়ই গতিময়-পরিবর্তনশীল। যা পাওয়া গেল তার প্রতি মোহ সাময়িক -যা পাওয়া যায় নি তার জন্য আকাঙক্ষা তীব্র হয়ে ওঠে। এটাই মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। কবি বলেছেন, যা চাওয়া হয়েছিল তা পাওয়ার পর মনে হয় এটা বোধ হয় সঠিক হয় নি। যেটা পাওয়া গেছে তা বোধ হয় ভুল করে চাওয়া হয়েছে। মানুষ কখনও পুরাতনকে নিয়ে বসে থাকে না। সে চায় নতুনতর কিছু আবার কিছুদিন পর তাও পুরাতন হয়ে আসে। অন্যকিছুর জন্য মানুষ উদ্বেল হয়ে ওঠে। এটাই মানবজীবনের সার্বজনীন নিয়ম। অর্থ-সম্পদ-বিলাসের মধ্যে কিছুদিন কাটাবার পর বৈরাগ্যের জন্য মন আকুলি-বিকুলি করে ওঠে। আবার বৈরাগ্যের বিলাসিতা থেকে মন ছুটে যেতে চায় ভোগের জীবনে, মানুষের মনে এ অস্থিরতা, চাঞ্চল্য কখনও তাকে একই জীবনে স্থির থাকতে দেয় না- সে ছুটে বেড়ায় নতুনত্বের খুঁজে। কোন বন্ধুর দ্বারা প্রতারিত হয়ে কেউ খুঁজে বেড়ায় প্রকৃত বন্ধুকে। এভাবে মানুষ আপন আপন সুখ শান্তির আশায় ছুটে বেড়াচ্ছে এদিক থেকে ওদিকে। যা পাওয়া গেল তাতে সন্তুষ্ট না হয়ে অন্য কিছুর অন্বেষণে হন্যে হয়ে ওঠে মন। এটাই মনে হয় মানবজীবনের সাধারণ নিয়ম। সৃষ্টির প্রথম থেকেই মানুষ তাই অতৃপ্ত। শান্তি নেই, তৃপ্তি নেই, সন্তুষ্টি নেই কোন কিছুতেই।
পৃথিবীতে মানুষের জীবনে চাওয়ার যেমন শেষ নেই, তেমনি পাওয়ার মধ্যেও কোনো শেষ নেই। চাওয়া-পাওয়ার আনন্দের মধ্যেই আমাদের জীবন সীমাবদ্ধ।
আমি দশম শ্রেনিতে পড়ি,এইভাবে লেখলে হবে?
ReplyDeleteঅর্থাৎ মূলভাব,সম্প্রসারিত ভাব,মন্তব্য।
এগুলোকে প্যারা আকারে লিখবো?
সজা কথা আপনি জেইভাবে উপস্থাপন করেছেন এই ভাবেই লেখলেই হবে?
হ্যাঁ, এভাবে লিখলেই হবে।
Delete