উত্তম নিশ্চিন্তে চলে অধমের সাথে,
তিনিই মধ্যম যিনি চলেন তফাতে
উত্তম চরিত্রের অধিকারীর মনোবল এত দৃঢ় যে সে অধমের সাথে চলতে দ্বিধা করে না, ভয় পায় না কিন্তু যার মনোবল ক্ষীণ সে ছিটকে পড়ার ভয়ে অধমের কাছ থেকে দূরে থাকে।
উত্তম আর অধমের মধ্যে যে পার্থক্য ও তফাৎ রয়েছে, মধ্যমের সাথে সে তফাৎ ও পার্থক্য অনেক কম। কেননা, উত্তম ও অধমের মধ্যস্থলেই মধ্যমের স্থান। পথচলা ও জীবনাচরণের ক্ষেত্রেও উত্তম মধ্যম ও অধমের মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। এদরে মানসিকতাও ভিন্ন। যে উত্তম বা শ্রেষ্ঠ, অধমের সঙ্গে পথ চলতে তার কোনো বাধা নেই। কারণ , তার কোনো সংশয় নেই এবং হীনম্মন্যতা নেই। সে নিজের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত। তার ভেতর যে স্পষ্ট, বাইরেও তেমনি স্পষ্ট। অধমের সাথে পথ চলতে উত্তমের মনে কোনো সংশয় থাকে না কারণ, অধমের সাথে তার পার্থক্য ও দূরত্ব খুবই স্পষ্ট। তার পদস্থলনের সম্ভবাবনাও সেখানে থাকে না। কিন্তু সমস্যা হলো মধ্যমের। কারণ, সে যেমন উত্তমের নিকটবর্তী, তেমনি নিকটবর্তী অধমের। সে উত্তম হতে চায়, কিন্তু উত্তম হওয়ার সাধ্য তার নেই। আবার অধম হতে সে মোটেও চায় না। অসলে এই মধ্যম শ্রেণির মানুষের দোদুল্যমানতা ও হীনতাবোধ বেশি। কারণ, এরা ইচ্ছে করলেই উত্তম হতে পারে না; কিন্তু পদস্থলন হলেই সে অধমের দলে ভিড়ে যাবে। যে কারণে মধ্যম স্তরের মানুষ নিজেকে আলাদা করে রাখে। মধ্যমের সুবিধাবাদও বেশি। সামাজিক স্তরে এদের সংকট ও সমস্যাও অনেক। এদের হারানোর ভয় থাকে, উত্তম বা অধমের সে ভয় নেই।
আমাদের সমাজে বর্তমানে উত্তম চরিত্রের মানুষের সংখ্যা অতি নগণ্য। তাই অধমের সংখ্যাই বেড়ে চলেছে। কারণ উত্তমের সহচর্য পায় না বলে অধমের উত্তরণ ঘটে না। অন্যদিকে যারা মধ্যম তারা নিজেদের আড়াল রেখে এক সময় চলে যায় অধমের দলে।
এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো
উত্তম আর অধমের জীবনপথে কোনো সংকট নেই। কিন্তু যে মধ্যম তার সমস্যার জটিলতা আছে, তার সংকট অনেক বেশি। নিজের মর্যাদা রক্ষার জন্যে তাকে সচেতনভাবে পদক্ষেপ নিতে হয়। তাই সে সকলের সঙ্গে মিশতে পারে না। তার অবস্থান স্বতন্ত্র অস্পষ্ট।
মানুষের চালচলন ও আচার-আচরণ- এক কথায়, মৌলিক চরিত্র-বিচারে মানব-সমাজকে তিনটি সুস্পষ্ট শ্রেণীতে বিন্যস্ত করা হয়। উত্তম, মধ্যম ও অধম। উত্তমের চারিত্রিক পরিচয় হল- সে শ্রেষ্ঠ; অধমের চারিত্রিক পরিচয়- সর্ববিষয়ে সে নিকৃষ্ট। কিন্তু যত গোলমাল মধ্যমকে নিয়ে। উত্তম এবং অধমের শ্রেণী-চরিত্র সুস্পষ্ট, ততে কোনোরূপ ভ্রান্তি-প্রমাদের সম্ভাবনা নেই। কিন্তু মধ্যমের শ্রেণী-চরিত্র সড়ই রহস্যময়। সে অত্যন্ত সাবধানী- সদাসতর্ক। তার সুস্পষ্ট পরিচয় জানার উপায় নেই; তাই তার কাছে পদে পদে প্রতারিত হবার সম্ভবাবনা। পৃথিবীর যে-সব মানুষ তাঁদের হৃদয়ের মহত্ত্বে, উদারতায় এবং দুর্লভ চরিত্র-সুষমায় বিশ্বকে মুগ্ধ করেছেন, তাঁরা মানবজাতির কাছে স্বরণীয় ও বরণীয় হয়ে তাদের হৃদয়ের সিংহাসনে রয়েছেন চির-প্রতিষ্ঠিত; মানুষ নির্দ্বিধায় তাঁদের পদতলে রাখে হৃদয়ের স্বতোৎসারিত ভক্তি-শ্রদ্ধার নির্মাল্য। তাঁরা মানুষের পরমাত্মীয়। মানুষের দুঃখ-মোচনের ব্রতে নিজেদের যথাসর্বস্ব, এমন-কি প্রাণ পর্যন্ত দান করে তাঁরা মানব-হিতৈষণার উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যান। অন্যদিকে যারা অধম- খল, কপট এবং মানবতার শত্রু, তাদের সম্মন্ধেও বিশ্ববাসীর মনে কোনো সংশয় থাকে না। তারা আলোকের বিপরীত মেরুর অধিবাসী। তাদের নীচতা, ক্রূরতা এবং হীনম্মন্যতা সম্পর্কে পৃথিবী সচেতন। তাদের চালচলন, রীতিনীতি এবং কথায়-বার্তায় তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যও সুচিহ্নিত; সুতরাং তাদের কাছে প্রতারিত হবার কোনো সম্ভবনা থাকে না। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় মধ্যপন্থীদের নিয়ে। তাদের যেমন শ্রেণীচরিত্র সুস্পষ্ট নয়, তেমনি তাদের চালচলন, রীতিনীতি বড়ই রহস্যাবৃত। তারা মানবতার নিকৃষ্টতম শত্রুরূপে চিহ্নিতও নয়; তারা ছদ্মবেশী, স্বার্থপর সুবিধাবাদীর দল। তারা এক দুর্বোধ্য ছদ্মবেশের অন্তরালে সর্বদা আত্মগোপন করে। পানি না ছুঁয়েই তারা মাছ-শিকারে অত্যন্ত দক্ষ, যে-কোনো রূপ বিপদ-বাধা, দুঃখ-যন্ত্রণাকে এড়িয়ে সকলকে ফাঁকি দিয়ে, সুযোগ-সুবিধার সন্ধানে অনায়াসে উপনীত হয় তারা। তারা স্বার্থসিদ্ধির জন্য কখনো ধারণ করে উত্তমের ছদ্মবেশ, কখনো ধারণ করে অধমের বেশবাস। তাই পৃথিবীতে তাদের দ্বারা পদে পদে প্রতারিত হবার থাকে সমূহ সম্ভাবনা। তাদের সম্পর্কে মানুষকে তাই থাকতে হয় সদা-সতর্ক।
সবচেয়ে ভালো হয় যদি মূলভাব, সম্প্রসারিত ভাব এবং সিদ্ধান্ত এ তিনটি আলাদা করে দেখিয়ে দিতেন।
ReplyDelete