সংসার সাগরে দুঃখ তরঙ্গের খেলা
আশা তার একমাত্র ভেলা
আশা বেঁচে থাকার সঞ্জীবনী শক্তি। মানবজীবন পদে পদে কণ্টকাকীর্ণ। বিপদসঙ্কুল এ জগৎ-সংসারে আশা ছাড়া বেঁচে থাকা যায় না। আশাই মানুষকে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করে, মনে দেয় সাহস, দেহে দেয় শক্তি।
পৃথিবীতে যেমন সুখ আছে তেমনি দুঃখও আছে। সুখ-দুঃখে ঘেরা মানুষের সংসার সাগর। এখানে সুখ যেমন চরন্তন, দুঃখও তেমনি নিত্য। সুখ পেতে হলে মানুষকে বিশাল দুঃখকে পার করতে হয়। একদা শেক্সপীয়রের মুখে ধ্বনিত হয়েছ – ‘Life is not a bed of roses.’ অর্থাৎ, জীবন ফুলশয্যা নয়। তাই নিরবচ্ছিন্ন সুখের জীবন কারও নয়। মানুষের মনে আশা আছে বলেই মানুষ সব দুঃখ সহ্য করে সুখের দোরগোঁড়ায় পৌঁছতে পারে। সাগরের বুকে যেমন অসংখ্য ঢেউ নেচে বেড়ায়, পৃথিবীর বুকেও তেমনি অপরিমেয় দুঃখ বিরাজ করে। সাগর পাড়ি দিতে ভেলা যেমন একমাত্র সম্বল, দুঃখের পাথার পাড়ি দিতেও আশা তেমনি একমাত্র নির্ভর।
এ পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে হলে মানুষকে কোনো না কোনো কাজে লিপ্ত থাকতে হয়। কারণ জাগতিক পরিধিতে সাংসারিক জীবনে অভাব দেখা দেয়। এ অভাব মেটানোর জন্য মানুষকে অর্থোপার্জনে মনোনিবেশ করতে হয় ও কাজে অব্যাহত থাকতে হয়। কিন্তু কাজ করতে গেলেই বাধাবিঘ্ন এসে পথ রোধ করে দাঁড়ায়। তখন হিতাহিত জ্ঞানশূন্য মানুষ দুঃখের সাগরে হাবুডুবু খেতে থাকে। তাছাড়া দুঃখ-দারিদ্র্য সংসারে নিত্য। ’দুঃখ-কষ্ট নিয়েই মানুষের জীবন’, কিন্তু দুঃখের পাশাপাশি সুখ আসবে এটাও ধ্রুব সত্য।
দুঃখ-কষ্ট হলো এ জগতের চরম লজ্জা। আর দুঃখ-কষ্টের মধ্যে আশাই একমাত্র অবলম্বন। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে- “Where is life there is hope.” আশা জীবনদায়িনী ফল বিশেষ। আশাই মানুষকে পরিচালিত করে।
সিরাজ উদ্দিন চৌধুরীর ভাষায়-
“অনন্ত সমুদ্র বক্ষে অন্তহীন
উচ্ছ্বাসিত আশা-
উজ্জ্বল আলোর স্তম্ভে
অন্ধকারে জ্বালে তীর্থ পথ।”
আশাই একমাত্র মানুষের জীবনকে চির চঞ্চল করে রাখে। আশা না থাকলে প্রকৃতপক্ষে জীবন বৈচিত্র্যহীন হয়ে পড়ত। আশা না থাকলে সে ব্যর্থ হয়ে ভেঙে পড়ত এবং চেষ্টা আর চালিয়ে যেতে পারত না। ফলে সে কোনো কালেই সুখের সন্ধান পেত না। তাই সাগরের ভেলার মতো আশাই দুঃখকে পাড়ি দিয়ে সুখের কিনারায় পৌঁছে দেয়। আশা আছে বলেই মানুষ বার বার সুখের স্বপ্ন দেখে। আশা মানুষকে নতুন করে বাঁচতে শেখায়। তাই মানুষ আশায় বুক বেঁধে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখে, ভাবে অমানিশা কেটে যাবে, উঠবে সুখের সোনালি সূর্য।
মানুষের জীবনে আশা-আকাঙ্ক্ষাই একমাত্র দুঃখ নিবৃত্তির উপায়। আশা না থাকলে মানুষের সংসারে জীবন যাপন করা সম্ভব হতো না।
এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো
মূলভাব : সংসার জীবনের বৈচিত্র্যময় সমস্যার প্রেক্ষিতে মানুষ আশার উদ্দীপ্ত হয়ে জীবন ধারণ করে। অনাগত ভবিষ্যৎ মানুষের কাছে কি রূপ নিয়ে দেখা দেবে তা অজানা থাকার জন্য আশাবাদী মানুষের মন আশা নিয়েই বেঁচে থাকে। দৈনন্দিন জীবনের প্রত্যেকটা সমস্যাকে প্রতিহত করে, আশা নিয়েই তাকে বেঁচে থাকতে হয়, আশাই তার একমাত্র বেঁচে থাকার প্রেরণা।
সম্প্রসারিত-ভাব : সমুদ্রে যেমন অগণিত তরঙ্গ থাকে তেমনি আমাদের পৃথিবীতেও অসংখ্য দুঃখ রয়েছে। এ দুঃখ আঘাতের পর আঘাত করে মানুষকে নিরুৎসাহ করছে। মানুষকে চলার পথে, ভালোভাবে বেঁচে থাকার পথে তাকে বড় হওয়ার পথে দুঃখ-কষ্ট প্রতি পদে পদে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। আর এ প্রতিবন্ধকতাই মানুষকে পিছিয়ে দিচ্ছে। মানুষ হয়ে পড়ছে চরম হতাশাগ্রস্ত, জীবন যুদ্ধে সে হচ্ছে চরমভাবে পরাজিত। বেঁচে থাকার স্পৃহা নষ্ট করে ফেলছে। প্রতিনিয়ত এ দুঃখ-কষ্টকে সাথী করে চলতে গিয়ে সে বারবার হেরে যাচ্ছে কঠিন বাস্তবতার কাছে। কিন্তু এ সুন্দর পৃথিবীতে সবাই চায় সুন্দরভাবে বাঁচতে, সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে, চায় জীবনের চরম স্বার্থকতায় পৌঁছাতে। আর এ চলার পথে, বিভিন্ন সমস্যাকে দুঃখ-কষ্টকে পায়ে দলে এগিয়ে যাওয়ার সবচেয়ে বড় প্রেরণা হচ্ছে আশা। প্রত্যেক মানুষ প্রত্যাশিত সুখ লাভ করার জন্য প্রাণান্ত পরিশ্রম করছে। প্রতিনিয়ত সে সংগ্রাম নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগে তার কল্পণার বস্তুই থেকে যায়। কষ্ট ও দুঃখের আঘাতে তার সমস্ত কর্ম প্রচেষ্টা ব্যর্থতা পর্যবসিত হয়, সে হয় জর্জরিত। কিন্তু মানুষ আশা ছাড়ে না, পুনরায় সে আশায় বুক বেঁধে, নুতন উদ্যমে কাজ শুরু করে, নতুনভাবে বেঁচে থাকার জন্য। কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাস এবারও সে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে না। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে সে দেখতে পায় যে, এবারও সে আশা দ্বারা প্রতারিত হয়েছে। বার বার প্রতারিত হওয়া সত্ত্বেও মানুষ আশাকে প্ররিত্যাগ করতে পারে না। প্রতিবারেই এ আশাকে অবলম্বন করে মানুষ এগিয়ে যায়, নব উদ্যমে কাজ শুরু করে।
তাই আগামী দিনের সম্ভাবনা মানুষকে কাজের প্রেরনা দেয়, বেঁচে থাকার আশায় আসক্ত করে তোলে। সংসার জীবন আশা নিয়েই সামনের দিকে এগিয়ে চলে।
tnk u soo much for it
ReplyDeletemany many thanks for this.
ReplyDelete