যে জাতি জীবন হারা অচল অসার,
পদে পদে বাঁধে তারে জীর্ণ লোকাচার
যে জাতি গতিহীন, সে জাতি যেন ঝড় পদার্থের মতো। জাতিকে ঐশ্বর্যমণ্ডিত ও সমৃদ্ধিশালী করে গড়ে তুলতে হলে গতিশীল চেতনা ও আদর্শ দরকার।
জীবনে গতি না থাকলে জীবনের কোনো পরিবর্তন ঘটে না। গতি বা পরিবর্তন জীবনের লক্ষণ। গতির যে পরিবর্তন আসে তাতে জীবনকে বোঝা যায় নতুনভাবে, তাতে জীবনের নতুন পরিচয় ফুটে ওঠে। এ গতির ফলে অতীতের পুরনো বৈশিষ্ট্য ফেলে নতুন রূপ দেখা দেয়।
নদীর গতিতেও সে বৈশিষ্ট্য বর্তমান। নদীর পরিচয় তার গতির মধ্যে, স্রোতের মধ্যে। যদি গতি হারিয়ে নদী এক জায়গায় আটকে যায়, তবে তাকে আর নদী বলা যায় না। তখন নাম নদী নয়, বদ্ধ জলাশয় হিসেবে তার পরিচয়; শৈবালে সে জঙ্গলপূর্ণ হয়। তেমনি যদি কোনো কারণে জাতির চলার ছন্দ ব্যাহত হয়, তাহলে সে জাতি তার স্বাভাবিক বিকাশ হারিয়ে বিকৃতরূপ পরিগ্রহ করে। জাতির গতিবেগ যদি থেমে যায় তাহলে জীর্ণ লোকাচার এবং নানা ধরনের কুসংস্কার দ্বারা জাতি বিকারগ্রস্ত হয়। প্রত্যেক জাতিরই থাকে একটি স্বাভাবিক গতি। কোনো জাতি যদি সেই গতিশীলতা হারিয়ে ফেলে, তাহলে জাতীয় জীবনে দেখা দেয় অবাঞ্ছিত জড়তা। এ জড়তা জাতীয় জীবনের প্রধান অন্তরায়। কালক্রমে এখান থেকেই নানা ধরনের বিকৃত ও পতনের জন্ম নেয়। সঙ্গে সঙ্গে নানা দেশাচারের আবর্জনা-স্তুপ সে জাতির জীবনধারাকে পঙ্গু ও নিশ্চল করে দেয়। তখনই জাতীয় জীবনে কুসংস্কার মহামারী আকার ধারণ করে। জাতি হাতে পায়ে পরে নানা ধরনের বিধি নিষেধের শিকল। নিষ্ঠুরভাবে পরাধীনতা হাতছানি দেয়। তাই জীর্ণ লোকাচার থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য গতিশীল জীবন একান্ত প্রয়োজন। এক কথায় গতিই জীবন। স্থবিরতা মানে মৃত্যু। সনাতন ধ্যানধারণা এবং কূপমণ্ডূকতা জাতির পথে বিরাট অন্তরায়। এ ধারণা নিয়ে জাতি এগিয়ে যেতে পারে না। তখন পুরনো দিনের নানা সংস্কার জীবনকে জড়ায়, থাকে না জীবনের কোন বিকাশ। জাতি হিসেবে তখন তার এগিয়ে যাওয়ার কোনো নিদর্শন থাকে না।
গতিশীল জীবন প্রবাহ জাতীয় জীবনকে প্রাণবন্ত ও উজ্জ্বল করে। যে জাতির জীবনধারা অচল সে জাতির পতন অবশ্যম্ভাবী। গতিশীল জীবন প্রবাহই জাতীয় জীবনকে জীবন্ত ও প্রাণবন্ত করে।
এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো
মূলভাব : পুরাতন ধ্যানধাররণা জাতীয় জীবনে উন্নতির পথে বিরাট বাঁধা সৃষ্টি করে। জাতিকে ঐশ্বর্যমণ্ডিত বা সমৃদ্ধিশালী করে গড়ে তুলতে হলে গতিশীল চেতনা ও আদর্শ দরকার।
সম্প্রসারিত ভাব : স্থবিরতা মৃত্যুর সামিল, আর চলমানতাই জীবন। প্রাগ্রসর চিন্তা-চেতনা দ্বারা জীবন সহজ ও স্বাছন্দ গতিতে প্রবাহিত হয়। আধুনিক এবং বিজ্ঞান মনস্ক জাতি দ্রুত উন্নয়নের দিকে ছুটে চলে। কিন্তু কোনো কারণে যদি কোনো জাতির চলার ছন্দ ব্যহত হয়, তাহলে সে জাতি তার স্বাভাবিক বিকাশ হারিয়ে বিকৃত রূপ পরিগ্রহ করে। স্রোতহীন নদীতে শৈবাল জমে যেমন পানিকে দূষিত করে তেমনি জাতির গতিবেগ যদি থেমে যায় তাহলে জীর্ণ লোকাচার এবং নানা ধরনের কদর্যতা দ্বারা জাতি বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়ে। প্রত্যেক জাতিরই থাকে একটি স্বাভাবিক গতি। কোনো জাতি যদি সেই গতিশীলতা হারিয়ে ফেলে, তাহলে জাতীয় জীবনে দেখা দেয় অবাঞ্ছিত জড়তা। এ জড়তা জাতীয় জীবনের প্রধান অন্তরায়। কালক্রমে এখান থেকেই নানা ধরনের বিকৃতি ও পতনের জন্ম নেয়। সঙ্গে সঙ্গে নানা দেশাচার ও লোকচারের আবর্জনা স্তূপ সে জাতির জীবন ধারাকে পঙ্গু ও নিশ্চল করে দেয়। তখনই জাতির ভাগ্যাকাশে দুর্যোগের ঘনঘটা দেখা দেয়। তখনই জাতির হাতে-পায়ে পড়ে বিধি-নিষেধের বেড়ি, নিষ্ঠুরভাবে বাজতে থাকে পরাধীনতার শিকল।
জাতীয় জীবনকে প্রাণবন্ত ও উজ্জ্বল করে গতিশীল জীবন প্রবাহ। যে জাতির জীবনধারা অচল সে জাতির পতন অবশ্যম্ভাবী।
Khub valo chilo.
ReplyDelete