সবলের পরিচয় আত্মপ্রসারে, আর দুর্বলের স্বস্তি আত্মগোপনে।
মূলভাব : আত্মশক্তি অর্জনকারী আত্মপ্রসারে সচেষ্ট থাকে। অন্যদিকে পলায়নপর মনোভাব দ্বারা তাড়িত হয় দুর্বল।
সম্প্রসারিত ভাব : মানুষ স্বভাবতই টিকে থাকতে চায়, নিজেকে টিকিয়ে রাখতে চায় এবং অমরত্ব লাভ করতে চায়। এর জন্যে মানুষকে নিরন্তর পরিশ্রম করতে হয, চেষ্টা করতে হয় এবং সংগ্রাম করতে হয়। এ সংগ্রাম নিজের সাথে, অন্য মানুষের সাথে এবং প্রকৃতির সাথে। কেননা জীবনটা সমস্যাপূর্ণ। চারপাশের পরিবেশ বিঘ্নময়। সমাজ ব্যবস্থা জটিল ও হতাশাবাঞ্জক। এ সবের সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকা কঠিন। কিন্তু এ কঠিন কাজটাকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে শক্তিমান মানুষ। নিজ বুদ্ধিমত্তার বিকাশে যেমন সে তৎপর হয়, তেমনি তা প্রচারে ও প্রসারেও সর্বশক্তি নিয়োগ করে। কেবল অন্তর্নিহিত শক্তি বা সৃজনশীলতা এক্ষেত্রে যথেষ্ট নাও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সঙ্গত কারণেই এ সাথে যুক্ত হবে অর্থ ও পেশীশক্তি। সবল মানুষ কৌশলগত অবস্থান নিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠার জন্যে সক্রিয় থাকে। তার কাছে ইতবাচক বা নেতিবাচক, নৈতিক বা অনৈতিক বিষয়টি সব সময় প্রাধান্য নাও পেতে পারে।
অন্যদিকে মনের দিক থেকে দুর্বল মানুষ প্রখর মেধাসম্পন্ন বা সৃজনশীল হলেও আত্মপ্রচার ও প্রসারে কোনো চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে না। প্রচেষ্টা বা তৎপরতার অভাবে তার আত্মশক্তির মূল্যায়ন হয় না। সে থাকে পিছিয়ে, একসময় হয়তো নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। অথচ তারই সামনে চলে আসার কথা। কিন্তু পলায়নপর বা নেতিবাচক মনোভাবই তার প্রকৃত পরিচয়ের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এভাবে পলায়নতার মনোভাবের জন্যে দুর্বল সমাজের জন্যে তো নয়ই, নিজের জন্যেও তারা কোনো কাজে লাগে না।
আত্মপ্রসারের মধ্যেই জীবনের প্রকৃত পরিচয়। মানুষের জীবন সীমতি। কিন্তু কর্মক্ষেত্র বিস্তৃত। বিস্তৃত কর্মক্ষেত্রে নিজেকে পরিচিত করার আকাঙ্ক্ষা মানুষের চিরদিনের। পৃথিবীতে যারা কীর্তিমান, প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব, তারা বাধা-বিঘ্ন সমস্যা-জটিলতাকে অতিক্রম করেই বড় হয়েছেন। নিন্দা, সমালোচনা, অপমানের আঘাত সয়ে তারা মানুষের জন্যে রেখে গেছেন শুদ্ধ সুন্দর পথ। আবিষ্কার করেছেন কল্যাণকর কিছু, উদ্ভাবন করেছেন মানব কল্যাণের উপযোগী অজস্র সামগ্রী। পুরনোকে উপড়ে ফেলে নতুনের প্রতিষ্ঠার মধ্যেই তাদের আত্মপ্রসার, যা তাদেরকে অমরত্ব দেয়। অন্যদিকে আত্মগোপন করে থাকার মধ্যে বা পলায়নপর মনোভাবের মধ্যে কেবল দুর্বলেরাই এক ধরনের স্বস্তি অনুভব করে কৃত্রিম শান্তি লাভ করে।
মন্তব্য : আত্মপ্রসারের পথ অনুসরণ করে সবলেরা হয় কালজয়ী। আর সবার অলক্ষে জীবন থেকে পালিয়ে থাকা দুর্বলের জীবন ব্যক্তিগত স্বস্তিতেই সীমিত থেকে যায়।
এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। তাকে আত্মকেন্দ্রিক থাকলে চলবে না। তাকে বিলিয়ে দিতে হবে বিশ্ব মানবতার কল্যাণে। মানুষ নিজেকে কতটা জানলো, কতটা অন্যের প্রয়োজনে নিজেকে নিয়োজিত রাখলো তার মাঝেই ফুটে উঠে তার সবলতা বা দুর্বলতা।
আমাদের মনের একটি স্বাভাবিক প্রবৃত্তিই এ, সে নানা মনের মধ্যে নিজেকে অনুভূত করতে চায়। প্রকৃতিতে আমরা দেখি ব্যাপ্ত হওয়ার জন্য বা টিকে থাকার জন্য সর্বদা একটি চেষ্টা চলছে। যে জীব নিজের অস্তিত্বকে বেশি প্রসার করতে পারে তার টিকে থাকার সম্ভাবনা, তাতে বেশি। তেমনি সবলেরা মানুষের মাঝে মনের ভাবকে ছড়িয়ে নিজের অস্তিত্বকে স্থায়িত্ব দিতে চায়। তারা শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবে না। সমগ্র মানুষের মাঝে তার জ্ঞান, আত্মোপলব্ধি ছড়িয়ে দিয়ে অমর হতে চায়। বৈচিত্র্যময় কর্মপ্রবাহের মাধ্যমে মানুষ নিজের কৃতিত্বের পরিচয় দিতে পারে। তারা নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে পরোপকারের মাধ্যমে চরিত্রের মহত্ত্ব প্রকাশ করতে পারে। এখানেই সবলদের যথার্থ গৌরব নিহিত থাকে। তারা জীবনকে পরার্থে নিয়োজিত করে জীবনে সার্থকতা আনয়ন করে তারা স্নেহ, প্রেম, মায়ার বন্ধন, সুকঠিন কর্তব্য কর্মের বন্ধনে এগিয়ে যায় সামনে। যুগে যুগে এ সকল মানুষ আপন উপলব্ধি, অভিজ্ঞতা, সঞ্চিত জ্ঞান, ধর্ম, দর্শন প্রভৃতির মাধ্যমে মানুষকে দিয়েছে মুক্তির সন্ধান, তারাই বীর, সমাজ তাদের দ্বারা উপকৃত হয়। তেমনি অনেক মানুষ রয়েছে যারা বস্তুবাদী ও স্বার্থপর। তারা নিজেকে ছাড়া অন্য দিকে তাকাবার সময় পায় না। শামুকের মত নিজেকে লুকিয়ে রাখে খোলসের মাঝে। নিজেকে বিশ্ব সমাজে প্রকাশ করতে তারা ভয় পায়। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকায় মানসিকতা তাদের নেই। তারা আত্মকেন্দ্রিক তাদের আত্মকেন্দ্রিকতা বা আত্মগোপন প্রবণতা তাদের পরিচয় বহন করে। তারা ভীরু, তারা দুর্বল প্রকৃতির মানুষ। তাদের দ্বারা বিশ্ব মানবতার কোন উপকার হয় না। কেননা,
দুর্বলের মত স্বল্প পরিসরে, গৃহ প্রঙ্গনে আবদ্ধ থাকলে, আত্মকেন্দ্রিক থাকলে মন ও হৃদয় সংকুচিত হবে। নিজেকে বিলিয়ে দিতে হবে সবলের মত বিশ্ব মানবের কল্যাণে তবেই প্রকৃত সুখ বেঁচে থাকার সার্থকতা।
কুড়িয়ে পাওয়া পাঁচ টাকার চেয়ে উপার্জিত এক টাকা বেশি মূল্যবান এটা এখানে নেই
ReplyDelete