মার্চের দিনগুলি

ভাবসম্প্রসারণ : জাল কহে, “পঙ্ক আমি উঠাব না আর” / জেলে কহে, ”মাছ তবে পাওয়া হবে ভার”

জাল কহে, “পঙ্ক আমি উঠাব না আর”
জেলে কহে, “মাছ তবে পাওয়া হবে ভার”

মূলভাব : কথায় বলে, কষ্ট ছাড়া কেষ্ট মেলে না। সমস্যাসঙ্কুল এ সমাজব্যবস্থায় পরিশ্রম ছাড়া বেঁচে থাকা যেমন কঠিন, তেমনি উন্নতি এবং সমৃদ্ধিও সম্ভব নয়। সক্রিয়ভাবে সমস্যা-জটিলতার মোকাবেলা করেই আমাদেরকে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করতে হবে।

সম্প্রসারিত ভাব : সুদূর অতীত থেকেই মানুষকে বেঁচে থাকার জন্যে সংগ্রাম করতে হয়। প্রতি মুহূর্তেই তাকে শ্রম দিতে হয়। কেননা জীবন সরলরেখায় চলে না। তাতে আছে দুঃখ-কষ্ট, ঘাত-প্রতিঘাত, অভাব-অনটন, রোগ-যন্ত্রণা। এসব সমস্যার সমাধানের জন্যে নিত্য কঠোর পরিশ্রম করতে হয়, মেধার চর্চা করতে হয়। অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। কেননা শ্রম এবং সাধনা ছাড়া জীবন সুখময় করা যায় না। প্রত্যেক মানুষের লক্ষ্য থাকে লক্ষ্য অর্জনের জন্যে সাধনার কঠিন পথ অতিক্রম করতে হয়। আবার প্রত্যেকের নিজস্ব আকাঙ্ক্ষা বা চাহিদা পূরণের জন্য অক্লান্ত শ্রম দিতে হয়। জীবনে সফলতা অর্জন করতে হলে কাজ করতে হবে, চলতে হবে, সক্রিয় থাকতে হবে। জড় পদার্থের মত নিষ্ক্রিয় হলে কখনো কোনো কাজে সাফল্য আসবে না। আর কাজ করতে গেলে দুঃখকে বরণ করে নিতে হবে, সমস্যার সাথে যুদ্ধ করে সামনের দিকে অগ্রসর হতে হবে। কাঁটার ভয়ে গোলাপ থেকে দূরে অবস্থান যেমন সঙ্গত নয়, তেমনি কাদায় ভরে নদীতে জাল ফেলা থেকে বিরত থাকাও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। মাছ পেতে হলে জাল ফেলতে হবে এবং জাল তোলার সময় কাদা-আবর্জনাও উঠে আসবে। এটাই স্বাভাবিক। কাজেই প্রয়োজনীয় বা ভালো কিছু পেতে হলে কিছু খারাপকেও সহজভাবে মেনে নিতে হবে।

পৃথিবীতে যাঁরা বড় হয়েছেন, ধনী হয়েছেন, সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী হয়েচেন, তাঁরা খুব সহজেই তা হতে পারেন নি। এ সবের জন্যে তাঁদেরকে শ্রম দিতে হয়েছে, কষ্ট করতে হয়েছে এবং অনেক ঘাম ঝরাতে হয়েছে। ব্যক্তির পাশাপাশি গর্বিত জাতিকেও অক্লান্ত শ্রম, রক্ত, এমনকি জীবনও উৎসর্গ করতে হয়েছে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধনী বিল গেটস্ অকস্মাৎ একদিন ধনী হতে পারেন নি। শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী আইনস্টাইন একদিনেই বিশ্বখ্যাতি পান নি। অর্থাৎ প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিবর্গ দীর্ঘদিনের শ্রম-সাধনা, দুঃখ-কষ্টের মাধ্যমে প্রশংসনীয় বা মর্যাদাবান হয়েছেন।

মন্তব্য : কাজেই বেঁচে থাকার প্রয়োজনেই শুধু নয়, জীবনে সুখ-সমৃদ্ধি সাফল্য ও মর্যাদা অর্জন করতে হলেও শ্রমময় এবং কর্মময় হতে হয়। আর এসবের সাথে সহজেই মেনে নিতে হবে কাঁটা-পঙ্কের মত দুঃখ-যন্ত্রণা, সমস্যা-জটিলতা। তাহলেই প্রতিটি জীবন আর প্রত্যেক জাতি স্বর্ণশিখরে আরোহণ করতে পারবে।


এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো


মূলভাব : পৃথিবী হলো মানুষের কর্মক্ষেত্র। কাজের মধ্য দিয়ে মানুষ জীবনের প্রতিষ্ঠা লাভ করে। আর এর জন্য চাই চেষ্টা এবং সাধনা।

সম্প্রসারিতভাব : মর্ত্যলোক মানুষের কর্মক্ষেত্র। কাজের মধ্য দিয়ে মানুষ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। কিন্তু প্রতিষ্ঠা লাভের আগে তাকে পরিশ্রম করতে হয়, সাধনা করতে হয়। বিনা পরিশ্রমে কোন কিছুই সহজলভ্য নয়। পৃথিবীর কাজের মধ্যে দুঃখ আছে, জ্বালা আছে। আর এ সব জ্বালা-যন্ত্রণা জয় করার জন্যে অকুতোভয়ে অগ্রসর হওয়া বাঞ্ছনীয় দুঃখ, জ্বালা-যন্ত্রণার ভয়ে কেউ যদি অগ্রগমনে পরাঙ্মুখ হয় তা হলে জীবন যুদ্ধে বিজয়ী হওয়া কঠিন। বিজয়ী না হওয়ার মানে আকাঙ্ক্ষিত ফল লাভ না করা। সুতরাং, যে কোন কাজ যত কঠিনই হোক বজ্র কঠিন শপথ নিয়ে সংসার রণাঙ্গনে জয়লাভের অপার বাসনায় উদ্বুদ্ধ হইতে হবে। তবেই কঙ্খিত সম্পদ লাভ সম্ভবপর।

জেলে নদীতে জাল ফেলে মাছ পাবার অভিলাষে; কিন্তু মাছ পেতে হলে আগে তো পঙ্ক উঠাতে হবে। পঙ্ক না উঠিয়ে জেলে মাছ পাবার আশা করতে পারেনা। যদি করে তবে তা বাতুলতা মাত্র। তেমনি সংসারে সফলতা লাভের আকাঙ্ক্ষায় অবশ্যই পরিশ্রম ও সাধনা করা অত্যাবশ্যক। তাকে জেলের মতোই দুঃখ কষ্টরূপ কঙ্ক নির্মূল করতে হবে। পঙ্ক নির্মূল না করতে পাররে মাছ পাওয়া যাবে না। বিনা পরিশ্রমে ফল লাভ করা যায় না।

পরিশ্রম করলে জীবনের সাফল্য অনিবার্য।


এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো


মূলভাব : মানুষ তার জীবনসংগ্রামের পথে নানারকম প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়ে থাকে। অনেক বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে তবেই সফল হওয়া যায়। কোনো সমস্যা অতিক্রম ছাড়া জীবনে সাফল্য আসে না।

সম্প্রসারিত ভাব : মাছ জলের নিচে কাদায় অবস্থান করে। মাছ ধরতে গেলে মাছের সঙ্গে জালে কাদামাটি উঠে আসবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কাদামাটি তোলা কষ্টকর বলে জাল যদি কাদামাটি তুলতে না চায় তবে মাছ ধরাও সম্ভব হবে না। সাফল্য লাভের পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয় বরং তা বাধাবিঘ্নে পরিপূর্ণ। সে পথে চলতে গিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে। ব্যর্থতা এসে নিরাশ করার চেষ্টা চালাতে পারে। কিন্তু ব্যর্থতার ভয়ে কর্মবিমুখ ও হতোদ্যম হয়ে পড়লে জীবনে সাফল্য আসে না। ফুল তুলতে গিয়ে যেমন কাটার আঁচড় সহ্য করতে হয় তেমনই সাফল্য অর্জন করতে হলেও দুঃখ-কষ্টকে বরণ করতে হয়। সাধনা বা লক্ষ্যের পথে বাধাবিঘ্ন দেখে কেউ যদি কাজ থেকে সরে যায় তাহলে তার কাজে কখনো সফলতা আসে না। প্রতিকূল পরিবেশ থেকেই সাফল্য ছিনিয়ে আনতে হয়। অনেকে মনে করে সাফল্য ব্যর্থতা, সুখ-দুঃখ অদৃষ্টের খেলা। অদৃষ্ট সুপ্রসন্ন হলে সুখ আপনা-আপনি সম্মুখে এসে দাঁড়ায়। কিন্তু এ ধারণা অমূলক। মানুষ আপ তিতিক্ষা, সাধনা ও চেষ্টা দ্বারা ভাগ্যকে জয় করতে পারে।

মন্তব্য : প্রতিকূলতার সঙ্গে সংগ্রাম করেই জীবনের সফলতা আনতে হয়। তাই কোনোরকম প্রতিকূলতাকে ভয় না পেয়ে আমাদের নিরলস প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

1 Comments

  1. Very helpful . That's what I was looking for . Thanks for satisfying my thirst!!

    ReplyDelete
Post a Comment
Previous Post Next Post