ভাবসম্প্রসারণ : স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন

স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন

স্বাধীনতা অর্জন করা সহজ নয়। স্বেচ্ছায় কেউ স্বাধীনতা পায় না। সংগ্রামের মাধ্যমে তা অর্জন করতে হয়। কিন্তু তদপেক্ষা বেশি সংগ্রামী, সতর্ক ও সৃষ্টিশীল হতে হয় স্বাধীনতা রক্ষায়।

স্বাধীনতা অর্জন করা কোনো পরাধীন জাতির পক্ষে অত্যন্ত কঠিন কাজ। কিন্তু সেই অর্জিত স্বাধীনতাকে রক্ষা করা আরও কঠিন কাজ বলে বিবেচিত হয়। স্বাধীনতা লাভ অত্যন্ত গৌরবের ব্যাপর। কিন্তু তা খুব সহজে লাভ করা যায় না। স্বাধীনতা অর্জনের জন্য বহু কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করতে হয় এবং বহু রক্তপাতের ফলেই স্বাধীনতা আসতে পারে। কারণ, শক্তিমদমত্ত শাসকেরা কখনোই পদানত জাতিকে স্বাধীনতা দান করে না; রক্তপাতের মাধ্যমেই তা অর্জন করতে হয়।

তবে স্বাধীনতা অর্জিত হলেই তা চিরস্থায়ী হয় না। স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য আরও বেশি শক্তির প্রয়োজন। কারণ স্বাধীন দেশের ভেতরে ও বাইরে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি থাকে। সকলের হিংসাত্মক দৃষ্টি থেকে দেশকে রক্ষা করার প্রয়োজন রয়েছে। স্বাধীনতা বিরোধীরা ও শত্রুরা অদৃশ্যভাবে দেশের ক্ষতি করে। তাদের পরাভূত করা দুরূহ ব্যাপার। যথেষ্ট সচেতন ও সংঘবদ্ধ না হলে স্বাধীনতাকে রক্ষা করা যায় না। স্বাধীনতা রক্ষার জন্য স্বাধীনতাকে মর্যাদা দিতে হয় এবং সদা সতর্ক থাকতে হয়।

স্বাধীনতা অর্জন করতে হলে যেমন নির্ভীক যোদ্ধা হয়ে অস্ত্র হাতে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়। তেমনি স্বাধীনতা রক্ষা করতে হলে কলম, কাস্তে হাতুড়ি নিয়ে অপেক্ষাকৃত কঠিন সংগ্রামে একতাবদ্ধভাবে দাঁড়াতে হবে। তাহলেই স্বাধীনতা রক্ষা করা সহজ হবে।


এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো


স্বাধীনতা জাতীয়জীবনের অমূল্য সম্পদ। স্বাধীন থাকার মর্যাদা ও গৌরব অতুলনীয়। স্বাধীনতাকে সমুজ্জ্বল রাখার জন্যে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সাধনার। স্বাধীনতাকে গুণে ও গৌরবে সমৃদ্ধ করে যথাযোগ্য মর্যাদা দিতে হয় বলে তার জন্যে নিরলস শ্রম দান করা আবশ্যক। সেদিক থেকে স্বাধীনতা অর্জনের কঠোর সাধনার চেয়ে তা রক্ষার জন্যে সাধনা কঠোরতর হওয়া অপরিহার্য।

স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার। আর মানুষ মাত্রই স্বাধীনতাপ্রিয়। এ প্রসঙ্গে প্রাবন্ধিক ইসমাইল হোসেন সিরাজীর উক্তিটি প্রণিধানযোগ্য, “আলোক ব্যতীত যেমন পৃথিবী জাগে না, স্বাধীনতা ব্যতীত তেমনি জাতি কখনও বাঁচতে পারে না।” -এই স্বাধীনতা অর্জন করা বড়ই কঠিন। পীড়িত, অত্যাচারিত জাতি স্বীয় মর্যাদাকে অক্ষুণ্ণ রাখার জন্যে সংগ্রামের মাধ্যমে মুক্তিলাভ করে থাকে। কিন্তু এ মুক্তি অর্জনই মুখ্য উদ্দেশ্য নয়। একে সমুন্নত রাখাই মুখ্য উদ্দেশ্য। স্বাধীনতাকে রক্ষা করে তাকে ফলপ্রসূ করতে হলে প্রয়োজন হয়- জাতীয় ঐক্য নিশ্চিত করে তার মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্বনির্ভরতা অর্জন। কিন্তু এ কাজ খুব সহজ নয়। বিভিন্ন জাতির স্বাধীনতার অভিজ্ঞতা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, পুনর্গঠন, উন্নয়ন ও বহিঃশত্রুর হাত থেকে একে রক্ষা করার জন্যে সদা প্রস্তুত থাকা একান্ত প্রয়োজন। কেননা তখন একদিকে থাকে পরাজিত শক্তি ও তাদের দেশীয় অনুচরদের জিঘাংসা ও মরণকামড়ের জ্বালা, অন্যদিকে স্বাধীনতার পক্ষের অভ্যন্তরীণ রেষারেষি। পাশাপাশি ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক জীবনের উন্নয়ন ও স্বনির্ভরতা অর্জন করা খুব সহজ কাজ নয়। আর এসব ক্ষেত্রে রয়েছে মানুষের নানাবিধ সমস্যা। অনেক সময় এ সমস্যাই সৃষ্টি করে সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার। ফলে রাষ্ট্রীয় জীবনে দেখা দেয় হতাশা, কমে যায় কর্মোদ্দীপনা, সর্বোপরি জাতীয় উন্নতি মুখ থুবড়ে পড়ে। তখন স্বাধীনতার গুরুত্ব, তাৎপর্য ও মর্ম রক্ষা করার প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দেয়। তাই স্বাধীনতা রক্ষার জন্যে দেশের আপামর জনসাধারণকে সচেষ্ট ও কর্তব্যপরায়ণ হয়ে মাঠে-ময়দানে, কল-কারখানায় অবিরাম কাজ করতে হবে। দেশকে শিল্প ও বাণিজ্যে উন্নত করে দেশের আর্থিক সচ্ছলতা আনতে হবে। কৃষির উন্নতি বিধান করে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে হবে। এভাবে কষ্টার্জিত স্বাধীনতাকে ব্যর্থতার হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। এবং স্বাধীনতা লাভের পর পরাধীনের মত জীবন-যাপন না করে বলিষ্ঠ ও আত্মপ্রত্যয়ী-জাতি হিসেবে স্বাধীনতাকে অম্লান রাখতে সচেষ্ট হতে হবে। তবেই অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষা করা সম্ভব। নতুবা ঈপ্সিত স্বাধীনতা ভূলুণ্ঠিত হয়ে পড়বে।

স্বাধীনতা অর্জিত হয় রক্ত দিয়ে, তাই এ-স্বাধীনতা রক্ষার জন্যে সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে।

1 Comments

Post a Comment
Previous Post Next Post