পথ পথিকের সৃষ্টি করে না, পথিকই পথের সৃষ্টি করে
মানবসভ্যতার ইতিহাস বলে, মানব সম্প্রদায়ের পদচারণাই নব নব পথের জন্ম দিয়েছে। আগে থেকে পথ সৃষ্টি হয়ে থাকে নি বরং সৃষ্টিশীল মানুষ তার জীবনের গতি অক্ষুন্ন রাখতে নব নব পথের জন্ম দেন। ফলে পথ সৃষ্টি হয়েছে পথিকের মাধ্যমে।
জীবনানন্দ দাশ বলেছেন, “হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে”- একথা বললেও সে পথ কিন্তু পৃথিবীতে তৈরি থাকে না। মানুষ প্রয়োজনে, অপ্রয়োজনে পদচিহ্ন রাখতে রাখতে এক সময় সৃষ্টি হয় পথের। পথ তৈরির ক্ষেত্রে পথের কোনো ভূমিকা থাকে না, এতে মানুষেরই ভূমিকা। কারণ, পথ তৈরিতে ঘোলআনা কৃতিত্ব মানুষের, পথের নয়। পৃথিবীর জমিনে পথিক তার প্রয়োজনেই পথ সৃষ্টি করে নেয়। অর্থাৎ, পথকে আবিষ্কার করে, তেমনি পৃথিবীর যাবতীয় আবিষ্কার মানুষেরই, পূর্বে উপাদান হিসেবে ছিল কিন্তু মানুষ তার নিজস্ব প্রয়োজনে করেছে সৃষ্টি, করেছে আবিষ্কার। পথ যেমন একদিনে সৃষ্টি হয় না, শত মানুষের প্রয়োজনে বার বার পদচারণা করতে করতে যেমন সৃষ্টি হয় পথের, তেমনি বহু মানুষ শ্রম, মেধা ও চেষ্টায় সৃষ্টি হয় নতুন নতুন উপাদন, প্রয়োজনীয় আবিষ্কার। মানুষ তার প্রয়োজনে শ্বাসপদসংকুল বন্ধুর জমিনকে খোদাই করে করে গড়ে তুলেছে পথ, সে পথ বেয়ে এসেছে সভ্যতা। তেমনি শ্রমকর্তব্যনিষ্ঠা ও চেষ্টায় মানুষ গড়ে তুলেছে সুখ-সমৃদ্ধ সভ্য জীবন। মানুষ যখনই কোনো সংকটে পড়েছে, তখনই মানুষের মনন ও শ্রম দিয়ে তা সমাধানের পথ বের করেছে। পথ বা উপায় কখনো এমনিতে সৃষ্টি হয় নি, বা সুলভে মানুষের হাতে এসে ধরা দেয় নি। মানুষকেই আগে পা বাড়াতে হয়েছে, সৃষ্টি হয়েছে উপায়। সুতরাং পথিক অগ্রগামী, পথ অনুগামী।
প্রয়োজনে মানুষ পথ সৃষ্টি করে। গন্তব্য নির্ধারিত হলে সেখানে পৌঁছতেই আমরা নতুন পথ আবিষ্কার করি। তাই লেখক বলেছেন, “পথ পথিকের সৃষ্টি করে না, পথিকই পথের সৃষ্টি করে।”
এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো
মূলভাব : এ জগতে যাঁরা স্মরণীয় এবং বরণীয় তাঁরা নিজেরাই নিজেদের পথ রচনা করেছেন। আলোকবর্তিকা হাতে নিয়ে অন্ধকার ভেদ করে এগিয়ে গেছেন শক্তি ও প্রগতির পথে। যারা সত্য সন্ধানী তারা কখনও থেমে থাকে না। অন্ধকার পথে হেঁটে হেঁটেই তারা আলোর সন্ধান করে।
সম্প্রসারিত ভাব : কৃতী মানুষ তার জীবনের গতিময় পথ নিজেই সৃষ্টি করে নেয়। অপরের সৃষ্ট পথ তার জন্য অনুসরণযোগ্য নয়। নিজের সাধনা ও কর্মকুশলতার সহায়তায় মানুষকে এগিয়ে যেতে হয় নিজের পথের সন্ধান করে। উদ্যোগী পথিক তার গন্তব্যে পৌঁছার জন্য নিজের পথের সৃষ্টি করে থাকে। বাঁধা পথে সফলতার সম্ভাবনা নেই। সাধনার পথই পথিকের চলার উপযোগী হয়ে নতুন দিগন্তের সন্ধান দেয়।
পথ তৈরি হয়েছে পথিকের অগমনের জন্য। যাত্রা সহজতর হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই পথের সৃষ্টি। কিন্তু এ পথই সে জীবনের গন্তব্যে পৌঁছে দেবে এমন নিশ্চয়তা থাকে না। জীবনের লক্ষ্য অর্জনের জন্য পূর্ব প্রতিষ্ঠিত পথ সহায়ক নয়। জীবন সন্ধানী পথিককে নিজের সন্তব্যে পৌঁছার জন্য সাধনা করতে হয়। তাই তার পথ হয় স্বতন্ত্র। নিজের সাধনায় তা তৈরি। গতানুগতিক পথে চললে জীবনের প্রাপ্য সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। তাই সে পথ পরিহার করে নতুন পথের খোঁজ করতে হয়। যে মানুষ নতুন পথের খোঁজ পায় তার পক্ষে জীবনকে অর্থপূর্ণ ও সফল করে তোলা সম্ভব হয়। তাই বাঁধা পথে চলে জীবনকে সফল করা যায় না। নতুন পথের সন্ধান করে পথ তৈরি করা আবশ্যক। পথিকের স্বার্থেই পথ সৃষ্টি হয়ে জীবনে আনবে সাফল্য।
সত্য সন্ধানী মানুষ কখনও স্রোতের অনুকূলে গা ভাসিয়ে দেয় না। ভ্রান্ত পথ তাকে রোধ করতে পারে না। কারণ, সে সচেতন সে বিশ্বাস করে পথিকই পথের স্রষ্টা।
I love
ReplyDelete-রুচীকর শব্দশৈলী। ।
ReplyDeleteভাল ছিল
ReplyDeleteভালো লাগলো 🤍
ReplyDelete