(1) ইংরেজি Secularism এর অর্থ,
(2) Wikipedia-র ইংরেজী ভাষায় লিখা আছে,
এখানে ধর্মকে খাট করার কিছুই নেই, এটা নিয়ে আমাদের সমাজের কারো কারো ভুল ধারণা আছে। ধর্মনিরপেক্ষতার মধ্যদিয়ে একটি রাষ্ট্র সকল ধর্মকে সমান চোখে দেখাকে বুঝায়।
“The belief that religion should not be involved in the organization of society, education, etc.” (Oxford Dictionary)
যার বাংলা অর্থ “এটা বিশ্বাস করা যে ধর্ম সামাজিক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা ইত্যাদির সাথে যুক্ত করা উচিৎ নয়”
(2) Wikipedia-র ইংরেজী ভাষায় লিখা আছে,
“Secularism is the principle of the separation of government institutions and persons mandated to represent the state from religious institutions and religions dignitaries.”(3) Wikipedia-র বাংলা ভাষায় লিখা আছে,
“ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ বলতে বোঝানো হয় কিছু নির্দিষ্ট প্রথা বা প্রতিষ্ঠানকে ধর্ম বা ধর্মীয় রীতিনীতির বাইরে থেকে পরিচালনা করা।“(4) বাংলাদেশের মুসলমান মানুষের বিশ্বাস-
“ধর্মনিরপেক্ষতা হলো ধর্ম না থাকা অর্থাৎ দেশে ধর্ম থাকতে পারবে না”উপরের প্রথম তিনটার সাথে চার নম্বরটার কোনো মিল পাওয়া যায় কি? প্রশ্নটা আপনাদের কাছে রইলো....
আমাদের দেশের অংশের মুসলমানদের মধ্যে একটা বিশ্বাস আছে যে ধর্ম নিরপেক্ষতা মানে হলো, দেশে ধর্ম না থাকা অর্থাৎ দেশের মধ্যে কোনো ধর্ম পালন করা যাবে না। আসলে আমাদের এই মুসলমান ভাইয়েরা ধর্মনিরপেক্ষতাই (Secularism) বুঝেন না।
ধর্ম + নিরপেক্ষতা = ধর্মনিরপেক্ষতা
ধর্মের অর্থ আমরা সবাই জানি। ’নিরপেক্ষতা’ শব্দের অর্থ কি আমরা জানি? না জানলে উদাহরণ দিয়ে বলি, আর্জেন্টিনা vs ব্রাজিলের খেলা দেখছেন কখনো? মাঠে একটা রেফারি থাকে না? বলেনতো উনি কোন পক্ষের? আর্জেন্টিনা নাকি ব্রাজিলের পক্ষে থাকেন? উত্তরে নিশ্চয় বলবেন ঐ রেফারি নিরপেক্ষ থাকেন। Yes, It is the point. উনি যেমন দোষ করলে আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের লাল কার্ড দেখান ঠিক তেমনি দোষ করলে ব্রাজিলের খেলোয়ারদেরও লাল কার্ড দেখান। ঠিক তেমনি একটা দেশে কেউ দোষ করলে যখন সরকার কে হিন্দু কে মুসলমান তা চিন্তা না করে দোষীকে বিচার করেন তখন সেই দেশকে বলা হয় ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। যে দেশ কোনো একটা নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষকে বেশি সুবিধা না দিয়ে সব ধর্মের মানুষকে সমান সুযোগ দিয়ে থাকে (যেমন রেফারি সব দলকে সমান সুযোগ দেন) সেই দেশই ধর্মনিরপেক্ষ (Secular) দেশ। এটাই ধর্মনিরপেক্ষতা বা Secularism.
একটি বহু ধর্মের দেশ কখনোই একধর্ম কেন্দ্রিক দেশ হতে পারে না, তাকে অবশ্যই Secularism মেনে চলতে হবে। যেমন ধরুন, বাংলাদেশে প্রায় সাত-আটটা ধর্মের মানুষ বাস করে, আবার ভারতে কয়েক শত ধর্মের মানুষ বাস করে, পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই বহু ধর্মের মানুষ বাস করে। ভারত কখনো নিজেকে হিন্দুবাদী দেশ বানাতে পারবে না, পাকিস্তানও পারবে না একতরফা ইসলামিক স্টেট বানাতে, বাংলাদেশও পারবে না। প্রায় কোনো দেশই পারবে না, কারণ এই সব দেশে শুধু এক ধর্মের মানুষ বাস করে না। যদি বাংলাদেশকে ইসলামিক স্টেট বানাতে হয় তবে হয় অন্য ধর্মের সব মানুষকে এক ধর্মে আনতে হবে অথবা শুধু মুসলিমদের রেখে বাকি ধর্মের মানুষদের হত্যা করতে হবে (যেটা চেয়েছিলো পাকিস্তান)।
একজন মানুষও যদি হিন্দু বা বৌদ্ধ কোনো দেশে থাকে যায় তবে সেই নাগরিককে সরকারের যাবতিয় সুযোগ সুবিধা প্রদান করা দায়িত্ব। তাকে ধর্ম করার সুযোগ দিতে হবে, তাকে উপাশনা করার সুযোগ দিতে হবে, তাকে পড়ালেখার সুযোগ দিতে হবে, তাকে তার মত থাকার সুযোগ দিতে হবে। সুতরাং কোনো সরকার ঐ একটি মানুষের জন্য নিজ দেশকে ইসলামিক রাষ্ট্র বানাতে পারবে না। কারণ ঐ একটা মানুষকে নাগরিক সুযোগ দিতে হবে।
আপনি জানেন কি, সৌদি আরবে অন্যকোনো ধর্মের মানুষ তাদের মন্দির বানাতে পারে না, আপনি জানেন কি সৌদি আরবে অন্য ধর্মের মানুষ জমি কিনতে পারে না, আপনি জানেন কি সৌদি আরবে অন্য ধর্মের কোনো মানুষকে নাগরিকত্ব পায় না। বাংলাদেশ যদি নিজেকে কোনো দিন ইসলামিক রাষ্ট্র দাবি করে তবে এই বিশাল ভিন্ন ধর্মের নাগরিকদের নাগরিকত্ব থাকবে না, তারা সেই দিন থেকে থেকে কোনো জমির মালিক নয়। অর্থাৎ এই বিশাল নাগরিকদের রেখে এক ধর্মের রাষ্ট্র বানানো যায় না, অন্তত দুইটা ধর্মের মানুষ যদি একই দেশে থাকে তবে সেই দেশ Secular হতে বাধ্য। আর সেকুলার না হওয়া মানে আপনি অন্য ধর্মের মানুষদের স্বীকার না করা।
তাই বাংলাদেশের মানুষকে সেকুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতা বুঝতে হবে। ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়, ধর্মনিরপেক্ষতা মানে সব ধর্মের সমান অধিকার। একজন মুসলমান ডাক্তারের কাছে গেলে যেমন চিকিৎসা পাওয়া অধিকার আছে একজন হিন্দু, বৌদ্ধ বা অন্য যে কারো সেই অধিকার আছে, রাস্তা দিয়ে হিন্দু যেমন হাঁটবে অন্য সবাই হাঁটবে; স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে সবাই পড়বে, দেশে বন্যা হলে একজন মুসলমান যতটুকু সরকারের সাহায্য পাবে অন্যরাও সমানে সমান পাবে। এটাই ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র, যেখানে সরকার বা রাষ্ট্র কারো পক্ষে নয়, যেখানে রাষ্ট্র নিরপেক্ষ; অর্থাৎ রাষ্ট্র এবং সরকার ধর্মনিরপেক্ষ।
বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করে,
Bangladesh believes in secularism.
এখানে ধর্মকে খাট করার কিছুই নেই, এটা নিয়ে আমাদের সমাজের কারো কারো ভুল ধারণা আছে। ধর্মনিরপেক্ষতার মধ্যদিয়ে একটি রাষ্ট্র সকল ধর্মকে সমান চোখে দেখাকে বুঝায়।
সত্য কথা।
ReplyDelete