সুজনে সুযশ গায় কুযশ চাপিয়া
কুজনে কুরব করে সুরব নাশিয়া
‘সু’ এবং ‘কু’ এদের পার্থক্য চিরন্তন। একটি অপরটির বিপরীত। যা ভাল, যা সুন্দর ও কল্যাণকর তা-ই ‘সু’। আর যা খারাপ ও ক্ষতিকর, অমঙ্গলজনক তা-ই ‘কু’। আমাদের সমাজে এ দুশ্রেণীর লোক দেখা যায়। মহৎ-ব্যক্তিগণ অন্যের দোষত্রুটি গোপন রেখে ভালদিকটা প্রচার করে থাকেন। পক্ষান্তরে, হীনব্যক্তি অন্যের ভালদিক গোপন রেখে মন্দের দিকটা প্রচার করে থাকে।
মানুষের আচরণে তাঁর নিজস্ব মানসিকতা বা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠে। কৃতকর্মের মধ্যেই তাঁর স্বাভাবিক পরিচয় প্রকাশ পায়। উত্তম চরিত্রের কোন মানুষই কারও দোষ খোঁজে না এবং অপযশও প্রচার করে না। বরং মহৎ ব্যক্তি অপরের দোষ-ত্রুটি ঢেকে রেখে তার সুনাম করে। এ ধরনের আচরণে তার মহত্ত্বের প্রকাশ ঘটে। সুজন বা ভালমানুষ নিজের সুন্দর মনের বিবেচনায় অপরের মধ্যে খারাপ কিছু দেখতে পায় না। সে নিজে ভাল বলেই অপরকেও ভাল দেখে। অপরদিকে কুজন বা খারাপ প্রকৃতির মানুষ অপরের ভাল দেখতে পারে না। সৎ চরিত্রের লোকগণ যেখানে অপরের কুৎসিত স্বভাবকে গোপন রাখে সেখানে মন্দ চরিত্রের লোকেরা ভাল দিকটি গোপন রেখে মানুষের খারাপ বা দুর্বল দিকটি স্পষ্ট করে তোলে। সে অপরের ভাল কাজকেও খারাপ বলে প্রচার করে থাকে। তার দৃষ্টিতে সুন্দর কিছু ধরা পড়লেও, তার প্রশংসা করতে সে কুণ্ঠিত হয় এবং অপযশ প্রচারে লিপ্ত হয়। কারণ, কারও ভাল কিছু প্রত্যক্ষ করা তার স্বভাববিরুদ্ধ। অপরের দোষ ধরাই তার ধর্ম। তাই প্রবাদ রয়েছে- ‘সজ্জন গুণ খোঁজে পামর / মক্ষিকা ভ্রুণ খোঁজে, মধু খোঁজে ভ্রমর।’ তেমনি সুজন মানুষের শুধু সদগুণাবলি এবং কুজন শুধু দোষই খুঁজে পায়।
সংসারে সুজন ও কুজন বা ভাল ও মন্দ উভয় শ্রেণীর মানুষই বসবাস করে। তাদের আচরণ থেকে তাদের পরিচয় নির্ধারণ করতে হবে এবং কুজনকে সর্বান্তঃকরণে পরিহার করতে হবে।
এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো
মানুষ নিজে যেমন, অন্যকেও তেমনি মনে করে। মানুষ হিসেবে যা ভালো, সে অন্য মানুষের মন্দ দিকটি ঢেকে রেখে ভালো দিকটি তুলে ধরে। আর যে ব্যক্তি নিজে মন্দ সে অন্যের ভালো দিনকটির পরিবর্তে মন্দ দিকটিই তুলে ধরে। মূলত এভাবে মানুষ তার নিজের প্রকৃত রূপটিই তুলে ধরে।
সুজন ও কুজন, ভালো এবং মন্দ সব ধরনের মানুষ নিয়েই মানব সংসার। মানুষ সৃষ্টিগতভাবে যেমন রঙ-চেহারায় আকার-আকৃতিতে বিচিত্র, তেমনি মনমানসিকতা, চিন্তা-চেতনা, কাজ-কর্মেও বিচিত্র। কারো মধ্যে পাশবিকতার প্রাধান্য কারো মধ্যে মানবিকতার প্রাধান্য লক্ষ করা যায়। এককভাবে নিষ্পাপ, নিষ্কলুষ, নির্দোষ মানুষ যেমন পাওয়া কঠিন তেমনি প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই কিছু না কিছু সুন্দর বা ভালো দিক রয়েছে। আর তার হয়ত প্রয়োজনও রয়েছে। কারণ, ভালো না থাকলে মন্দ চেনা যেত না। অনুরূপ মন্দ না থাকলেও ভালোত্ব বোঝা যেত না। ভালো-মন্দ আছে বলেই আমরা একটিকে অন্যটির সাথে তুলনা করে নিজেকে শুধরে নেবার চেষ্টা করি। কিন্তু সমাজে কিছু কিছু মানুষ আছে যাদের কাজই হচ্ছে পরচর্চা, পর নিন্দা, পর ছিদ্রোন্বেষণ করা, অন্যের দোষ- ত্রুটি খুঁজে বের করা। তারা নিজেরা যেমন মন্দ চরিত্রের অধিকারী অন্যকেও তেমনি মন্দ চরিত্রের মনে করে। পরের দোষ খোঁজাই তাদের স্বভাব। কারো ভালো দিক দেখে তা থেকে শিক্ষা লাভ করা তাদের নীতি বিরুদ্ধ। অন্যের দোষত্রুটি অন্বেষণ করেই যেন তারা সুখবোধ করে। কিন্তু যারা নিজেরা ভালো। মানুষের তারা অতি আপনজন। তারা সংসারের সৌন্দর্য ও গৌরব। তারা পৃথিবীর সব মানুষের মন্দ দিকটি ঢেকে রেখে ভালো দিকটি প্রচার করেন। তাদের চোখে সবই ভালো, সবই সুন্দর। তারা দোষীর দোষ দেখেন না। তার মধ্যে গুণ খুঁজে বের করেন, মন্দের ভিতরে ভালো কিছু খোঁজার চেষ্টা করেন। উদারহণস্বরূপ ‘চোর ও সাধুর গল্পটির কথা উল্লেখ করা যায়। চোর সারারাত চুরি করে এবং সাধু সারারাত ধ্যান করে সকালে পুকুরে এসে গোসল করতে নেমে চোর ভাবছে ওই লোকটি বুঝি আমার মত সারারাত চুরি করেছে। আর সাধু ভাবছে এ লোকটি বুঝি আমার মত সারা রাত ধ্যান করেছে। অর্থাৎ, সুজন সুচিন্তা করে আর কুজন কুচিন্তা করে এটাই সত্য। ভালো মানুষ মানুষের ভালোত্ব খোঁজে। আর খারাপ মানুষ মানুষের দোষত্রুটি খোঁজে।
It is very helpful. nice writing.
ReplyDelete