জীবনের কাছ থেকে পালানো সহজ, তার সঙ্গে লড়ে জয়ী হওয়াই কঠিন
মূলভাব : সংগ্রামই জীবন। আর বেঁচে থাকার নামই সংগ্রাম। এ সংগ্রামমুখর জীবন থেকে পলায়নের নামই জীবন থেকে সরে যাওয়া। অর্থাৎ, ব্যর্থতার বোঝা নিয়ে জড়বৎ হয়ে মৃত্যুর জন্য প্রহর গোনা। এতে জীবনের কোন সার্থকতা নেই। এতে মানবজীবনের মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়।
সম্প্রসারিত-ভাব : জন্মলাভের সাথে সাথে মানুষের জীবন শুরু হয়ে যায়। মানুষ আস্তে আস্তে বড় হয়। তারপর এক সময় তাকে জীবনের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু জীবনের পথ সংগ্রামমুখর , কুসুমাস্তীর্ণ নয়। জীবনের চারদিকেই থাকে প্রতিকূলতা আর প্রতিকূলতা। জীবনে চলার পথে থাকে বাধা আর বিপত্তি। এ বাধা অতিক্রম করেই জীবনে সাফল্যের মুখ দেখতে হয়। জীবন সংগ্রামে ব্যর্থ হয়ে জীবন থেকে পালিয়ে যাওয়ার মধ্যে জীবনের কোন সার্থকতা নেই। এ পলায়ন জীবনে পরাজয় আনে। একথা ঠিক যে জীবন সব সময় সুখের নয়। দুঃখের ব্যথাদীর্ণ রূপ দেখতে মানুষ এক সময়। ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তার মধ্যে বিপুল হতাশার জন্ম হয়। হতাশায় জর্জরিত হয়ে মানুষ মৃত্যুকেই শ্রেয়। মনে করে। অনেক মানুষকে দেখা যায়, সংসারের জ্বালা যন্ত্রণা সইতে না পেরে সে ফকির সন্ন্যাসীর জীবন অবলম্বন করে।।
অর্থাৎ, সে রুঢ় জীবন থেকে পালাতে চায়। কিন্তু এটি সমীচীন নয়। দুঃখ যন্ত্রণা সইতে হবে, হতাশাকে অতিক্রম করতে হবে। জীবনে লড়ে যেতে হবে। এটি কঠিন হলেও জীবনে সাফল্য আসবে এভাবেই।
এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো
ভাব-সম্প্রসারণ : মানব জীবন অস্তিত্ব রক্ষা ও সাফল্য অর্জনের নিরন্তর সংগ্রাম-ক্ষেত্র। জীবন-যুদ্ধে জয়ী হতে গেলে নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রামের কোনো বিকল্প নেই। সব বাধা, সব প্রতিকূলতা জয় করার জন্যে জীবনে চাই অসীম ধৈর্য, দৃঢ় সংকল্প। সমস্যাসংকুল জীবনের মোকাবেলা করতে না পেরে অনেকে ক্লান্তি ও হতাশায় আচ্ছন্ন হন, পলায়নী মনোভাব নিয়ে পরিত্রাণ পেতে চান। সে পলায়নী মনোভাব মৃত্যু ও স্থবিরতার নামান্তর মাত্র। তাতে সাফল্য আসে না। কঠিন জীবন-সংগ্রামের মধ্য দিয়েই জীবন-যুদ্ধে সাফল্য অর্জন করতে হয়।
সভ্যতার জন্মলগ্ন থেকেই মানুষ নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রামের মধ্য দিয়েই নিজের অস্তিত্ব রক্ষা করেছে, অজস্র সাফল্যের মধ্য দিয়েই অর্জন করেছে শ্রেষ্ঠত্বের আসন। পৃথিবীর কোলে যে মানুষ ছাড়পত্র পায় সেই মানব শিশু পৃথিবীতে আসে নিরস্ত্র, অপরিণত ও অসহায় মানব শিশু হিসেবে। পরিবেশ-পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খােইয়ে অস্তিত্ব রক্ষা করতে পারলেও সে মানুষ হয়ে ওঠে না। প্রকৃত মনুষ্যত্ব অর্জন করা, জীবনকে সুগঠিত করার জন্যে তাকে হতে হয় সংগ্রামমুখী। তাকে সংগ্রাম করতে হয় অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে, অসত্য ও অকল্যাণের বিরুদ্ধে। দুঃখ দারিদ্র্য, ক্ষয়ক্ষতি, বিপদ-আপদের বন্ধুর পথ অতিক্রম করতে হয়। সামাজিক স্বার্থ-বুদ্ধ, পশ্চাদপদ চিন্তাধারা, জীর্ণ লোকাচারের নানা বন্ধনের বেড়াজাল থেকে মুক্ত হতে হয়। মখোমুখি হতে হয় অন্যায় ও অসত্যের। এগুলোর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে অনিবার্য, নিরন্তর, দৃঢ়চিত্ত সংগ্রামশীলতা খুব সহজ কজ নয়। তার চেয়ে আত্মসমর্পণ অনেক সহজ। যারা কঠিন সংগ্রামে ব্রতী হতে পারেন না তারা বেছে নেন পলায়নের পথ। এঁদের কথা ভেবেই শেকস্পিয়র বলেছেন, ‘Cowards die many times before their death.’ তাঁদের জীবন হয় প্রথাবদ্ধ, নতজানু, মেরুদণ্ডহীন। সমাজে এ ধরনের লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে সমাজজীবনও হয়ে পড়ে পঙ্গু, মন্থর ও স্থবির। তাই ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনে অগ্রগতি ও সাফল্য অর্জনের জন্যে সংগ্রামশীল মনোভাব নিয়েই দৃঢ়চিত্তে অগ্রসর হতে হবে। সে পথ যত কঠিনই হোক না কেন তাই অস্তিত্ব সমুন্নত রাখার পথ।
সংগ্রামশীল পথ থেকে পলায়নের অনিবার্য পরিণতি জাতির সর্বনাশ ও ধ্বংস।