জীবনে সভ্যতার সাজ খোলাই কঠিন, পরা সহজ
মূলভাব : মানুষ অভ্যাসের দাস। অভ্যাস সামাজিক মূল্যবোধের উন্মেষ ঘটায়। অভ্যাসের মাধ্যমে যে রুচিবোধের সৃষ্টি হয় তা গ্রহণ করা যত সহজ ত্যাগ করা তত সহজ নয়।
সম্প্রসারিত-ভাব : মানুষ অভ্যাসের দাস। সামাজিক বোধের উন্মেষই তার স্বনির্বাচিত দাসত্ব সূচিত করে। সামাজিক সত্তা পরামর্শ দিল আদিমতাকে আবৃত করতে, পারস্পরিকতাকে প্রসারণ দিতে। অস্তিত্বের প্রয়োজনে মেনে নেওয়া পরামর্শই জন্ম দিল এক আদর্শ জীবন-যাপন পদ্ধতি, যার নাম সভ্যতা বা মানবিকতা। আত্মরক্ষা ও আত্মবিকাশের অভিঘাত সভ্যতার বৃত্তের ক্রমবৃদ্ধি ঘটিয়ে মানুষের মনে সঞ্চারিত হল নৈসর্গিকতা থেকে সুদূর চলে যাওয়ার প্রবণতা। নগ্নতা পেল আবরণ, নিঃসঙ্গতায় এল সমাজ, নিগৃহতা আশ্রিত হল। অগ্রবর্তী মানসিকতা জীবনের প্রতিটি প্রসঙ্গ নিয়ে এল বৈচিত্র্য, আর রূপান্তর ঘটিয়ে চলল। আজকের মানুষের কাছে সভ্যতা নতুন উদ্ভাবিত আদর্শ নয়, উত্তরলব্দ সম্পদ। অভিজ্ঞতার অনুশীলনে সভ্যতা হয়ে উঠেছে অভিযোজন সামর্থ্যের শক্তি, গতিশীল আচরণ। সভ্যতাই মানুষের অভ্যাসে এনেছে কর্মসম্পাদনের সমতা ও ক্ষিপ্রতা, স্বতঃশ্চলতা ও যথাযথ; আয়াস ও প্রতিরোধ শক্তি। নিরাপত্তা ও শান্ত, সুখ ও সমৃদ্ধি সবই দান করেছে সভ্যতা। আজকের মানুষ তার অন্তরায়িত আচরণকে পিছনের দিকে ফিরিয়ে দিতে পারে না। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষের জীবনে বারে বারে হানা দেয়; মানুষ ঘটায় যুদ্ধ ও হত্যা, শোষণ ও যন্ত্রণা। সভ্যতা-বিরোধী ঘটনা অশ্রুকে করেছে নির্ঝর, রক্তকে করেছে নদী। কিন্তু মানুষের অর্জিত সভ্যতা উজ্জ্বল মানবিকতা তারই প্রতিরোধ করেছে। পিছুফেরা পরিবর্তন আর সম্ভব নয়। সেই নগ্নতা, সেই বর্বরতা, সেই আদিমতার জীবনে প্রত্যাবর্তনের অর্থ সভ্যতার মৃত্যু, মাববিকতার মহাপ্রয়াণ। জীবন কখনও পীড়ন চায় না, পরাজয় চায় না। সভ্যতাকে বর্জন করা যায় না বলে বর্জন করা অনুচিত। তাই সভ্যতা-বিরোধিতাকে আঘাত হানার জন্য পৃথিবীর ঘরে-ঘরে সদাজাগ্রত মানবিকতা তার হাতিয়ার নিয়ে প্রস্তুত। কেননা-সভ্যতার ঐচ্ছিক দাসত্বই উজ্জ্বল মাববিকতার অঙ্গীকার।
মানুষ কোনো অভ্যাসকে যত সহজে গ্রহণ করতে পারে, তত সহজে তা বর্জন করতে পারে না।