ভাবসম্প্রসারণ : অতি দীন ও অশক্ত লোকেরাই দৈবের দোহাই দিয়ে থাকে

অতি দীন ও অশক্ত লোকেরাই দৈবের দোহাই দিয়ে থাকে

মূলভাব : পৌরুষই মানুষের আসল শক্তি। এ শক্তি বলে মানুষ অসম্ভবকে সম্ভব করে, অজেয়কে জয় করে, দুর্লভকে সুলভ করে। ইংরেজিতে প্রবাদ আছে, ‘Man is the architect of his own fortune.’ নিজের ভাগ্য মানুষ নিজেই তৈরি করে। আর যারা পৌরুষত্বহীন তারা দৈবের দোহাই দিয়ে পড়ে পড়ে মার খায়। সংস্কৃতে আছে,
‘উদ্যোগিনং পুরুষসিংহমুপৈতি লক্ষ্মীঃ
দৈবেন দেয়মিতি কাপুরুষাঃ বদন্তি।’

সম্প্রসারিত-ভাব : যারা উদ্যোগী পুরুষ তারা সিংহের মত শক্তিশালী। এ পুরুষ সিংহদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়। তাদের কাছে লক্ষ্মীদেবী উপস্থিত হন। আর যাদের মনে সাহস ও দেহে বল না থাকার দরুণ উদ্যমহীন তারা দৈবের দোহাই দিয়ে সন্তুষ্ট থাকার চেষ্টা করে। উপনিষদেও বলা হয়েছে, চরৈবতি, চরৈবতি চল, চল, এগিয়ে চল। এ গতিই জীবনের ধর্ম। বিশ্ব চরাচরে এ গতিই সত্য। যে ঘুমিয়ে থাকে তার ভাগ্যও ঘুমিয়ে থাকে। এ চলমানতার জন্যই মানুষ অন্যান্য পশুর চেয়ে শ্রেষ্ঠ হতে পেরেছে। জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে মানুষ আপনার অধিকার বজায় রাখতে পেরেছে। বাস্তবিক দৈব বলে কিছু নেই। বিচার বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট উপলব্ধি হবে যে, পূর্বেকার কর্মের দ্বারা আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। অদৃষ্টের দোহাই শুধু আত্মপ্রতারণা ছাড়া কিছু নয়। প্রকৃতপক্ষে আমরাই নিজের কাজকর্মের ফলে আমাদের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলছি।

যে যেমন কাজ করে সে তেমন ফল পায়। দীন ও দুর্বল লোকেরা তাদের দুর্বলতা ঢাকার জন্যই ঈশ্বরকে অভিযুক্ত করে, নিরুদ্যম থেকে দুর্ভাগ্যের জন্য ঈশ্বরের উপর অসন্তুষ্ট হয়।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post