আপনা রাখিলে ব্যর্থ জীবন সাধনা
জনম বিশ্বের তরে পরার্থে কামনা।
মূলভাব : মানুষ তার সামগ্রিক জীবন প্রণালিকে সার্থক ও সুন্দর করে গড়ে তুলতে চায়। কিন্তু অনেকেই সার্থকতার প্রকৃত স্বরূপ সম্পর্কে অনবিজ্ঞতার কারণে জীবন সংগ্রামে ব্যর্থ হয়ে পড়ে। প্রকৃত পক্ষে মানুষের জীবনে সার্থকতা আসে অপরের কল্যাণ ও উপকার সাধনের মাধ্যমে।
সম্প্রসারিত-ভাব : এ পৃথিবীতে মানুষ মরণশীল। আত্মস্বার্থপরতা নয় পরার্থপরতা, আত্মসুখানুভূতি নয় পর-দুঃখানুভূতি, পর-কল্যাণ সাধনা প্রভৃতি শুভ কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমেই মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারিত। মানু্ষ্যত্ব অর্জন কোনো সহজ ব্যাপার নয়। এ পথ ক্ষুরধার, বন্ধুর স্বাপদসঙ্কুল, কণ্টকাকীর্ণ পথে বিচরণ করতে হবে। মনুষ্যজীবন আত্মস্বার্থপরতা ও সংকীর্ণতার মধ্যে সঙ্কুচিত করে রাখলে জীবন সাধনা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়ে পড়বে। সুখ দু’প্রকারের- আত্মসুখ এবং পরের কল্যাণের উদ্দেশ্যে কাজ করার মাধ্যমে সুখ। পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষই আত্মসুখ পাওয়ার জন্য লালায়িত। আত্মসুখ অর্জনের জন্য তারা সর্বদা ব্যস্ত থাকে। কাজের ফল ভোগ করার মাধ্যমে তারা তৃপ্ত হয়। এ জাতীয় মানুষ কখনো আত্মসুখ ছাড়া অপরের সুখ-শান্তি, কল্যাণের কথা চিন্তা-ভাবনা করে না। এদের কাছে ‘ত্যাগে সুখ নেই, ভোগেই প্রকৃত সুখ’ -এ কথাটিই প্রাধান্য লাভ করে। অপরদিকে পৃথিবীতে স্বল্পসংখ্যক লোক আছেন যাঁরা আত্মস্বার্থপরতা বা আত্মকল্যাণে বিশ্বাসী নয়। তারা নিজের সুখের কথা চিন্তা না করে অপরের কল্যাণ বা সুখের জন্য সর্বদা অক্লান্ত পরিশ্রম করে থাকেন। এসব লোক আত্মস্বার্থপরতা ও সংকীর্ণতার মধ্যে নিজেকে সঙ্কুচিত না রেখে অন্যের কল্যাণ সাধনায় আত্মনিয়োগ করে থাকে। পরার্থপরতা শ্রেষ্ঠ নিরূপিত হয়ে থাকেন। অপরের মুখে হাসি ফোটানোর মধ্য দিয়ে তারা সার্থকতা লাভ করেন। অপরের সুখ-শান্তি, কল্যাণের জন্য নিজের সুখ-শান্তিকে বিসর্জন দিতে এঁরা কখনো কুণ্ঠাবোধ করে না। এরা ‘ভোগে সুখ নেই, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ’ এ বাণীতে বিশ্বাসী।
মানুষ যদি তার সামান্য সামর্থ নিয়ে পরার্থে বা মানব কল্যাণে এগিয়ে আসে সমাজ ও জগতের কল্যাণ সম্ভব হয় এবং সফল হতে পারে জীবনের উদ্দেশ্য।