আমারে তুমি করিবে ত্রাণ
এ নহে মোর প্রার্থনা,
তরিতে পারি শকতি যেন রয়।
মূলভাব : মনবজীবন দুর্লভ। তকে সফল করা আরও কঠিন। কারণ যে কর্মপ্রবাহের মধ্যে দিয়ে জীবন অন্তিমলগ্নে পৌঁছায় তার পথ দুর্গম ‘দুর্গং পথস্তৎ’।
সম্প্রসারিত-ভাব : প্রকৃতি ও অন্যান্য মানুষ অবিরত চেষ্টা করে জীবনে দুর্যোগ ঘটিয়ে জীবনযাত্রাকে তার সাবলীল চলার গতি থেকে বিছিন্ন করে দিতে। ফলে জীবনে দেখা দেয় সঙ্গত কারণেই উদ্যমহীনতা, হতাশা। কিন্তু জীবনকে গড়ে তুলতে গেলে প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করার পথ বের করতে হবে। যারা জীবনকে ভাবে ফুল বিছানা রাজশয্যার মত তারা দুঃখে, বিপদে সহজে হার মানে। হতাশা তাদের গ্রাস করে বলে তারা এসব বাধা-বিঘ্ন দেখে ভয় পায়। নিজের উপর অনাস্থার জন্য তারা জ্যোতিষী জাতীয় কুসংস্কারের আশ্রয় নেন কিংবা উপাসনালয়ে ধর্না দেয়। বিপদমুক্তির জন্য সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের দয়া ভিক্ষা করে। কিন্তু বিপদকালে এসব কাজে লাগে না, উপরন্তু করুণালাভের এসব চেষ্টা মানবতার অপমান। পরবর্তী বিপদকালে যিনি আত্মশক্তির জাগরণ ঘটিয়ে বিপদের কাঁটা মাড়িয়ে চলেন, বিপদ থেকে ত্রাণ করার জন্য নয়, বিপদের মোকাবিলা করার মত আত্মশক্তি থাকার জন্য। কারণ আত্মবলে বলীয়ান হয়ে মানুষ সব বিপদকে তুচ্ছ করতে পারে।
জীবনের সিংহভাগ জুড়ে যখন বিপদ, বাধা-বিঘ্ন, তখন আত্মশক্তি জীবনকে সাফল্যের পথে নিয়ে যেতে পারে। ইংরেজিতে তাই বলা হয়, ‘Man is the archiest of his own fortune.’ পৌরুষ হল সেই শক্তি, যা জীবনে অসম্ভকে সম্ভব করে, দুর্লভকে সুলভ করে। আর ঈশ্বর উদ্যোগী মানুষেরই সহায় হন।