এই খেয়া চিরদিন চলে নদী স্রোতে
কেহ যায় ঘরে, কেহ আসে ঘর হতে।
মূলভাব : নদীর বুকে ভাসমান খেয়ার কাজ যাত্রী পারাপার করা। কেউ এপারে আসে কেউ যায় ওপারে। প্রত্যেকেরই লক্ষ্য ঘরে ফিরে আসা। খেয়া নদীর পারে পৌঁছলে অন্তিম ক্ষণটি উপস্থিত হয়। বিদায়ী যাত্রীরা বিদায় নেয় নতুন যাত্রীদের আগামী যাত্রায় স্থান করে দিতে। যেসব যাত্রীরা পারে নামে শেষ মুহূর্তটি অবশ্যম্ভাবী কারণে তাদের কাছে অবিস্মরণীয় হয়ে উঠে, হয়ে উঠে যাত্রীদের কাছে অসীম মমতায় রক্তিম।
সম্প্রসারিত-ভাব : যে কোন অভ্যাসের পরিবর্তনই বেদনাদায়ক। যে প্রথার সাথে দীর্ঘকাল দেহমন অভ্যস্ত হয়ে পড়ে তা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া সত্যই দুঃখজনক। অথচ আমাদের চারপাশে সর্বদাই চলছে পুরাতনের বিসর্জন, নতুনের আহবান। বিদ্যালয় ত্যাগের শেষের সেই দিনটি কিংবা স্বজন হারানোর মুহুর্তটির স্মৃতি তাই কেউ কোনদিন ভুলতে পারে না। সেদিনটিতে সকলে দ্বন্দু ভলে যায়। কতদিনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার বেদনা মধুর সম্বল করে তখন মিশে যেতে হয় বর্জিতের দলে পরত্যক্তদের ভিড়ে। শূন্যতা দিয়ে হৃদয় তখন উপলদ্ধি করে, সময় হয়েছে নিকট এখন বাঁধন ছিঁড়িতে হবে। কবির ভাষায় সেদিনের অনুভূতি, ‘যাবার সময় হল বিহঙ্গের এখনি কুলায় রিক্ত হবে’। কিন্তু সত্যি কি তাই? দাশনিক বলেছেন, না তা হয় না। নতুন আসে পুরাতনের শূন্যস্থান পূরণ করতে। ইংরেজিতে তাই হয়ত বলা হয়েছে- ‘Old order Change the yielding place to new’ প্রকৃতিরও দুই রূপ, সৃষ্টি ও ধ্বংস। প্রকৃতি একদিকে জীবজগৎকে রক্ষা ও পালন করছে, অন্যদিকে তার অবক্ষয় ও ধ্বংস ঘটাচ্ছে। সে একদিকে কোমল, অন্যদিকে কঠোর। একদিকে সে রক্ষক, অন্যদিকে সংহারক। একদিকে তার শান্ত স্নিগ্ধ শ্যামল মূর্তি অন্যদিকে তার ভৈরবী ও ভীষণা রূপ। এ দু’টি রূপই সত্য। খণ্ডিত দৃষ্টিতে মানুষ আচ্ছন্ন থাকে বলেই বিশ্বের রুপ রুপান্তরের লীলাকে ধ্বংস, বিনাশ কিংবা মৃত্যু মনে করে ব্যথা পায়, শোকে অধীর হয়। পরিণামে কর্মস্রোত থেকে নিজেকে গুটিয়ে ফেলে। তাই পরিশেষে বলা যায়। মহাপুরুষেরা এ মহাসত্যকে উপলব্ধি করতে পারেন বলেই দুঃখ শোকে কাতর হয়ে পড়েন না, কল্যাণপূত কর্মে নিজেকে সঁপে দেন।