কেরোসিন শিখা বলে মাটির প্রদীপে,
‘ভাই বলে ডাক যদি দেব গলা টিপে।
হেনকালে গগনেতে উঠিলেন চাঁদা,
কেরোসিন শিখা বলে, ‘এস মোর দাদা।’
মূলভাব : কেরোসিন শিখা ও মাটির প্রদীপ উভয়ের দামে তারতম্য থাকলেও কাজ ও গুণ প্রায় এক। কারণ উভয়েই আপন সাধ্য অনুসারে আলো দান করে থাকে।
সম্প্রসারিত-ভাব : কেরোসিন শিখাও মাটির প্রদীপ দ’জনের কাজ কিন্তু একই, তবুও কেরোসিন শিখা উজ্জ্বল, পক্ষান্তরে মাটির প্রদীপের আলো ম্লান। তাই কেরোসিন শিখা নিজের উজ্জ্বল আলোকের গর্বে মাটির প্রদীপকে নিজের সগোত্র বলে স্বীকার করতে কুণ্ঠাবোধ করে। অথচ স্নিগ্ধ মধুর আলোকে দশদিক উজ্জ্বল করে আকাশে যখন চন্দ্র উদিত হয়, তখন তার সাথে আত্মিয়তার সম্পর্ক খুঁজে বের করতে কেরসিনের শিখা তৎপর হয়ে উঠে। তার এ ব্যবহার নীচতা ও হীনম্মন্যতার বহিঃপ্রকাশ মাত্র। মানব সংসারেও এমন লোকের অভাব নেই যারা অনুন্নত দরিদ্র ও ক্ষমতাহীনস্বজনের সাথে সমপর্ক স্বীকার করতে লজ্জাবোধ করে। এরা আবার সমাজের মান্যগণ্য ও ক্ষমতাসীন লোকদের সাথে নিজেদের সম্পর্কের কথা প্রচার করে লোক সমক্ষে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিপাদনের প্রয়াস পায়। এরা ঐশ্বর্য ও শক্তির তোষণকারী। প্রকৃত গুণী ব্যক্তি কদাচ এ ধরনের ব্যবহার করেন না। তারা অপরের কল্যাণে প্রকৃত সুখ পায়।
এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো
কেরোসিনের প্রদীপ ও মাটির প্রদীপ উভয়ের কাজই আলো দেওয়া, তারা সমগোত্রীয়। কিন্তু কেরোসিনের আলো প্রদীপের আলো থেকে কিছু বেশি উজ্জ্বল বলে তার মনে অহঙ্কার। সে ক্ষীণ আলো বিশিষ্ট মাটির প্রদীপকে সমগোত্রীয় বলে স্বীকার করতে রাজি নয়। অথচ যে চাঁদের সঙ্গে তার কোনই সম্পর্ক নেই, তাকে সে আত্মীয় বলে সম্বোধন করে। মনুষ্য সমাজেও অনুরূপ অবস্থা দেখা যায়। অর্থে বা পদমর্যদায় সামান্য বড় হলেই মানুষ সাধারণত দরিদ্র ও অল্প মর্যাদাসম্পন্ন আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে সম্পর্ক অস্বীকার করতে চায়। আবার, সে মানুষই নিজের চেয়ে বহুগুণে বিত্তবান ও মর্যাদাশীল ব্যক্তির সাথে আত্মীয়তার পরিচয় দিয়ে আত্মতৃপ্তি লাভ করতে চায়।
Really appreciate this initiative
ReplyDelete