দুধ-কলায় সমৃদ্ধ সোনার খাঁচা অপেক্ষা
ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ অজানা আকাশ পাখির অনেক প্রিয়
মূলভাব : মুক্ত আকাশে উড়ে বেড়ানোতেই পাখির আনন্দ। সে আকাশে কখনও আসে ঝড়ো হাওয়ার ঝাপটা, তখন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পাখি অনিশ্চিত ঠিকানায় উড়ে চলে। তবু আকাশের মায়া পাখি ছাড়তে পারে না। সোনার খাঁচায় দুধ কলা দিয়ে পোষা হলেও খাঁচার বন্ধ জীবন পাখির কাম্য নয়। সে চায় মুক্তি, চায় স্বাধীনতা।
সম্প্রসারিত-ভাব : মানুষ জন্মগতভাবে পাখির মতই স্বাধীনতাপ্রিয়। পরাধীন জীবনে প্রভুর অনুগ্রহে আশ্রয় ও খাবার হয়ত জোটে, কিন্তু স্বাধীন জীবনের সুযোগ থাকে না। পরাধীন জীবন বন্দিত্বের জীবন। পরাধীনতা মানুষের জীবনের জন্য অভিশাপ। তা মানুষের জীবনে দাসত্ব শৃঙ্খলের মত। স্বাধীন ও মুক্ত জীবনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে পাখি যেমন বন্দি খাঁচা ছেড়ে মুক্ত আকাশের দিকে ডানা মেলে উড়তে চায় তেমনি স্বাধীনতার দুর্বার আকাঙ্ক্ষায় মানুষ পরাধীনতার বন্ধন ছিন্ন করার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। মানুষের কাছে দীর্ঘ পরাধীন জীবনের চেয়ে ক্ষণিক স্বাধীন জীবনের মূল্য অনেকে বেশি। আপাত স্বাচ্ছন্দ্যময় পরাধীন জীবনের চেয়ে স্বাধীন জীবন কষ্টের হলেও তা সুখের ও আনন্দের। এ জন্যই যুগে যুগে দেশে দেশে পরাধীনতার বিরুদ্ধে মানুষ রুখে দাঁড়িয়েছে। স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছে, আত্মাহুতি দিয়েছে। ব্যক্তি জীবনের মত জাতীয় জীবনেও স্বাধীনতা মহান তাৎপর্যবাহী। ২০০ বছরে ব্রিটিশ শাসনে পরাধীন বাঙালি জাতি আত্মবিকাশের সুযোগ থেকে বাঞ্চিত হয়েছে। পাকিস্তানি শাসনামলেও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে শাসিত ও শোষিত হয়েছে।
তাই স্বাধীনতার মহান আকাঙ্ক্ষায় উজ্জীবিত বাঙালি জাতি ১৯৭১ এ অনেক রক্ত ও অশ্রুপাতের ঝুঁকি নিয়ে লড়াই করেছে স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য। স্বাধীনতা আমাদের দিয়েছে মুক্তির স্বাদ। দিয়েছে জাতীয় জীবনে স্বাধীনতায়ই আনন্দ, পরাধীনতা বা বন্দিত্বে নয়।
এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো
ভাব-সম্প্রসারণ : মানুষ তথা সমগ্র জীবজগতের প্রতিটি জীব জন্ম থেকেই স্বাধীন। আর এ কারণে স্বাধীনতা সবার প্রিয়। অন্যান্য জীবের উপর সে বিভিন্ন কারণে নির্ভরশীল থাকতে পারে, তবে তা পারস্পরিক নির্ভরশীলতা; একচ্ছত্র আধিপত্য বা পরাধীনতা নয়। পরাধীন জীবনে কোনো বিকাশ নেই, আছে কেবল স্থবিরতা, যা মৃত্যুর মতো স্তব্ধ।
পাখির জীবন থেকে এ বৈশিষ্ট্য সহজেই অনুধাবন করা চলে। মুক্ত আকাশে পাখি উড়ে বেড়ায়। সেখানে তার ধরাবাঁধা কোনো নিয়মনীতি নেই। পাখির বাসস্থান সম্পর্কেও অনিশ্চয়তা বিরাজমান। তাই উন্মুক্ত স্বাধীন আকাশে নিরুদ্বেগে বিচরণ করে বেড়ায় যে পাখি তার কাছে দুধকলা-সমৃদ্ধ সোনার খাঁচা তুচ্ছ। কেননা মুক্তিতেই আনন্দ, বন্দীত্বে নয়। পাখি মুক্তজীবনের স্বাদ পেয়ে সোনার খাঁচায় আবদ্ধ থাকতে চায় না। মানবজীবনেও ওই একই বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। মানুষের রয়েছে মুক্তির কামনা, ইচ্ছা, বিবেক, স্বপ্ন। তার কাছে পরাধীনতা তার হৃদয়বৃত্তি এবং ইচ্ছার মৃত্যুরই নামান্তর। পরাধীনতা মানুষের জীবনের জন্যে অভিশাপ। স্বাধীন ও মুক্ত জীবনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে পাখি যেমন বন্দি খাঁচা ছেড়ে মুক্ত আকাশের দিকে ডানা মেলে উড়তে চায় তেমনি স্বাধনিতার দুর্বার আকাঙ্ক্ষায় মানুষ পরাধীনতার বন্ধন ছিন্ন করার জন্যে ব্যাকুল হয়ে ওঠে। মানুষের কাছে দীর্ঘ পরাধীন জীবনের চেয়ে ক্ষণিক স্বাধীন জীবনের মূল্য অনেক বেশি। যুগে যুগে তাই মানুষ পরাধীনতার কবল থেকে মুক্ত হবার জন্যে যুদ্ধ করেছে, প্রাণ দিয়েছে, কখনও-বা দেশ ছাড়তেও বাধ্য হয়েছে। তবুও মানুষ পরাধীন থেকে ঐশ্বর্যবান হওয়ার চেয়ে স্বাধীনভাবে জীবনযাপন এমনকি মৃত্যুবরণ করাকেও সমীচীন মনে করেছেন। কারণ স্বাধীনতাই জীবন।
সবাই চায় মুক্তি, চায় স্বাধীনতা। বন্দি জীবন কেউ চায় না বলেই পরাধীনতার বন্ধন ছিন্ন করার জন্যে ব্যাকুল হয়ে ওঠে।