দৈন্য যদি আসে আসুক লজ্জা কিবা তাহে?
মাথা উঁচু রাখিস।
সুখের সাথী মুখের পানে যদি নাহি চাহে
ধৈর্য ধরে থাকিস।
মূলভাব : সুখ মানবজীবনে বহু কাঙ্ক্ষিত হলেও তা ক্ষণস্থায়ী। সুখাবসানে তাই দুঃখ বরণ অবশ্যম্ভাবী। দুঃখের নিদারুণ আঘাতে যদি শঙ্কা বা সঙ্কোচ মনুষ্যত্বকে গ্রাস করে, হতাশা যদি পল্লবিত হয়ে ওঠে তবে মানুষ জীবনের স্রোত থেকে সরে যায়। তেমনি সুখের অবসানের সাথে সাথে তার সুসময়ের বন্ধুর পলায়নী মনোবৃত্তি তাকে যদি চঞ্চল করে তোলে তাহলে তার পক্ষে জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব নয়।
সম্প্রসারিত-ভাব : পণ্ডিতেরা বহু আগেই জীবনের সারসত্য উপলব্ধি করে বলে গেছেন, ‘চক্রবৎ পরিবর্তন্তে সুখানি দুঃখানি চ’। সুখের পর দুঃখ, আবার দুঃখের অবসানেই সুখ। কিন্তু অনেকেই সুখে উল্লসিত, দুঃখে বিমর্ষ হয়ে পড়েন। কিন্তু জীবনের পথ তো কুসুমাস্তীর্ণ নয়। এখানে যেমন সুখ আছে, তেমনি দুঃখও আছে। সুখে ভেসে গেলে চলবে না, আবার দুঃখেও ভেঙে পড়লে চলবে না। মনে রাখতে হবে দুঃখ দৈন্য ক্লেশ জীবনেরই উপাদান। দুঃখের কষ্টি পাথরেই মানুষের মনুষ্যত্বের যাচাই হয়, মানুষ সহনশক্তি লাভ করে। দুঃখ, বাধা বিঘ্ন এড়িয়ে কেউ কোনদিন সিদ্ধি লাভ করতে সক্ষম হয় নি। তাই মানুষের কর্তব্য বিপদের ভয়ে পিছিয়ে না পড়ে জীবনের লক্ষ্য স্থির করে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে চলা।
সুখ যেমন চিরকালের সামগ্রী নয় তেমনি সুখের সঙ্গীও স্থায়ী নয়। সুখের অনুচরও সুখের মতন পলাতক। জীবনে যখন বসন্তের মত সুখ পল্লেবিত হয়ে ওঠে তখন কোকিলের মত সুখের সঙ্গীও কত হাসে, গায়, রঙ্গরসে মন ভোলায়।
তাই দুঃখই মানুষকে জীবনের মুখোমুখি দাঁড় করায় আর দুঃসময়ের বন্ধুই হয় প্রকৃত সাথী। সেজন্য দুঃখের সাথে বীরের মত সংগ্রাম করেই সুখ জয় করে নিতে হবে।