বন্দি যেমন বদ্ধ বিচারকও তেমনি বদ্ধ
মূলভাব : আইনের চৌহদ্দিতে বন্দি ও বিচারক দুজনেই বাঁধা পড়ে থাকেন। সমাজের এবং রাষ্ট্রের সামগ্রিক কল্যাণ বিধানের উদ্দেশ্যেই শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ একটি নিয়মশৃঙ্খলা গড়ে তোলে। প্রচলিত অর্থে তা-ই সে দেশের আইন।
সম্প্রসারিত ভাব : কোন মানুষ যখন সেই নিয়মশৃঙ্খলা লঙ্ঘন করে তখন সমাজ ও রাষ্ট্রের অকল্যাণ করা হয়। সমাজ ও রাষ্ট্রের চোখে তখন সেই ব্যক্তি অভিযুক্ত আসামি। আসামিকে বন্দি করে বিচারকের কাছে নিয়ে আসা হয়। অভিযোগের সকল দিক বিচার করার দায় ভার তখন বিচারকের। যতদিন এ বিচারের কাজ শেষ না হয় ততদিন অভিযুক্তকে বন্দি অবস্থায় থাকতে হয়। তখন তার স্বাধীনতা বলতে কিছু থাকে না। আপাতদৃষ্টিতে আমরা মনে করি বিচারাধীন এ বন্দিই কেবলমাত্র পরাধীন বা বদ্ধ। কিন্তু একবারও আমাদের মনে আসে না বন্দির সাথে আর একটি মানুষও তার স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেন- তিনি তার অপরাধের বিচারক। বিচারক খুশি মত বিচারাধীন ব্যক্তিকে বেকসুল খালাস করে দিতে পারেন না, আবার দণ্ডবিধান করতেও পারেন না। তার ব্যক্তিগত ইচ্ছা- অনিচ্ছার কোন মূল্যই থাকে না। তাকে সংশ্লিষ্ট দেশের আইনের আশ্রয় এবং অভিযুক্তের সপক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তিগ্রাহ্য প্রমাণ সম্বল করে এগিয়ে যেতে হয়। দেশের আইন যা বলে বিচারককে তাই অবনত মস্তকে মেনে চলতে হয়। বিচারক স্বাধীনভাবে চলতে চাইলে বিচার ব্যবস্থা প্রহসনে পরিণত হবে। কাজেই তার আপন খেয়ালখুশির স্বাধীনতা বলতে কিছু থাকে না। আইনের বেড়াজালে বিচারাধীন বন্দি যেমন বাঁধা তেমনি বাঁধা পড়ে থাকেন স্বয়ং বিচারক।