ভবিষ্যতের ভাবনা ভাবাই জ্ঞানীর কাজ
মূলভাব : জ্ঞানী ব্যক্তিরা ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবেন। অতীত গত আর বর্তমান ক্ষণস্থায়ী। কাজেই অনাগত ভবিষ্যতের ভাবনাই বুদ্ধিমানের কাজ।
সম্প্রসারিত ভাব : মানুষের কর্মময় জীবনের সাথে তিনটা কাল সম্পৃক্ত আছে, অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। অতীতকে ভুলে যেতে হবে, অতীতের দুশ্চিন্তার ভার অতীতকেই নিতে হবে। অতীতের কথা ভেবে অনেক বোকাই মরেছে। পণ্ডিতেরা বলে গেছেন ‘গতস্য শোচনা শাস্তি’। আর বর্তমান সে তো নেই বললেই চলে। কারণ একটি কথা বলতে বলতে অতীত হয়ে যায়। কাজেই নদীর তরঙ্গ গোনা আর বর্তমানের চিন্তা করা সমানই অনর্থক। ভবিষ্যতটা হল আসল, কারণ ভবিষ্যতকে মানুষ পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগাতে পারে। ভবিষ্যৎ সকলের সম্মুখে উন্মুক্ত। সেটা কখনও শেষ হয় না। তাই ভবিষ্যতের মানব কেমন হবে সেটা একবার ভেবে দেখা উচিত। ভবিষ্যতে মানুষের জীবনযাত্রা কিরূপ হবে। কি কি বিপদে তারা পতিত হতে পারে, তাদের সমস্যা ও সমাধান নিয়ে আজকেই ভাবা উচিত। ভবিষ্যতের মানুষকে সুন্দর একটি পৃথিবী উপহার দিতে আজকেই নিতে হবে বাস্তব পদক্ষেপ। ভবিষ্যৎ ভাবনা হল একটি পরিকল্পনা। আর পরিকল্পনা ছাড়া যে কোথাও এগুনো যায় না তা মানুষ মাত্রই উপলব্ধি করতে পারে। ভবিষ্যতের ভাবনায়ই মানুষ সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ হয়। সংসারের গণ্ডির মধ্যে থেকে সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তায় মা বাবার কাটে অধিকাংশ সময়। সমস্ত জীব-জন্তুর দুটো চোখ সামনে থাকার মানে হল ভবিষ্যতের দিকে যেন নজর থাকে। কেননা ভবিষ্যতের ভাবনাই জীবনকে সার্থক ও সুন্দর করে তোলে।
অনাগত ভবিষ্যৎ নিয়ে আসে মানুষের জন্য অফুরন্ত সম্ভাবনা। সেই সম্ভাবনাকে যথার্থভাবে বাস্তবায়নে ভবিষ্যতের ভাবনা সদা মনে জাগ্রত রাখা প্রয়োজন।
এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো
মূলভাব : অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ–মহাকাল এই তিন ভাগে বিভক্ত। জ্ঞানী মানুষেরাই ভবিষ্যতের চিন্তা বেশি করে। আর যারা অবিবেচক, তারা বর্তমান ও অতীত নিয়ে ব্যস্ত থাকে।
সম্প্রসারিত ভাব : মানুষের অনাগত ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। এ ভবিষ্যতের উপর কোনো মানুষেরই কোনো হাত নেই। যে কোনো সময় যে কোনো ঘটনা ঘটে যেতে পারে। জ্ঞানীরা এ ভবিষ্যতের চিন্তায় সব সময় ব্যতিব্যস্ত থাকেন। মানুষের কথা বাদ দিয়ে প্রাণিজগতের দিকে লক্ষ্য করলেও দেখা যায়, কিন্তু কিছু প্রাণী ভবিষ্যতের ভাবনা নিয়ে বেশ সচেতন; যেমন- পিঁপড়ে বা মৌমাছিরা ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করে। এ রকম সঞ্চয়ী প্রাণী আরও অনেক আছে। কাজেই মানুষেরও ভবিষ্যতের চিন্তা করা উচিত।অনেক লোক আছে যারা অতীতকে নিয়ে মাথা ঘামায়। যা ঘটে গেছে তা যদি অবাঞ্চিত হয়ে থাকে তবে তারা শোকে বিহবল হয়ে পড়ে। তাদের মাথায় বর্তমান কিংবা ভবিষ্যতের কোনো চিন্তাই স্থান পায় না। মানব সমাজে এরা সবচেয়ে অবিবেচক হিসেবে চিহ্নিত। কারণ যা অতীত হয়ে গেছে তা নিয়ে অনুশোচনা করলে কোনো শুভ ফল পাওয়া যায় না। পণ্ডিতেরাও বলে গেছেন, ‘গতস্য শোচনা নাস্তি’। অর্থাৎ বিগত দুর্ঘটনার জন্য শোচনা করা উচিত নয়। অবশ্য অতীতের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে মানুষের সামনের দিকে অগ্রসর হওয়া উচিত। অতীতের শিক্ষা মানুষের জন্য সবচেয়ে মূল্যবান। আবার কিছু লোক আছে যারা বর্তমান নিয়েই বেশি চিন্তা করে, এটিও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। বর্তমান কথা বলতে বলতেই অতীত হয়ে যায়। কাজেই নদীর তরঙ্গ গণনা করা আর বর্তমানের চিন্তা একেবারেই অনর্থক। ভবিষ্যৎই আসল জিনিস। সেটা কখনও শেষ হয় না। যারা সত্যিকারের জ্ঞানী তারা সর্বদাই ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে থাকেন।