ভাবসম্প্রসারণ : যে সহে সে রহে

যে সহে সে রহে

মূলভাব : যারা সহিষ্ণু ও ধৈর্যশীল তারাই কেবল এ জগৎ সংসারে সফলকামী হতে পারে। 

সম্প্রসারিত ভাব : দুঃখ-বিপদাপদের মধ্য দিয়ে মানুষের যাত্রা শুরু হয়। তাকে সংগ্রাম করতে হয় নানা প্রতিকূল অবস্থার সংগে। শীত-তাপ, রোগ-শোক, দুঃখ-দারিদ্র্য এ সবের চাপে মানব পর্যুদস্ত হয়, চোখে বিভীষিকা দেখে। কিন্তু এ সবের জন্য চাই শক্তি, অধ্যবসায় ও সহিষ্ণুতা। দুঃখ-বিপদ জয় করতে পারাটাই মনুষ্যত্ব। যুদ্ধে জয়-পরাজয় আছেই। কিন্তু যে মানুষ পরাজয়কে অম্লানবদনে মাথা পেতে নিয়ে পরবর্তী বিজয়ের জন্য ব্রতী হয় এবং বিজয় অর্জন করতে পারে সে-ই যথার্থ বীর। আসলে সহিষ্ণুতা সকল শক্তির উৎস। আমরা স্কটল্যান্ডের বীর সেনাপতি রবার্ট ব্রুসের কথা জানি। বার বার পরাজিত হওয়া সত্ত্বেও ব্রুস ধৈর্য ধারণ করেছিলেন এবং সহিষ্ণুতা গুণে তিনি স্কটল্যান্ড জয় করেছিলেন। জীবনে যে যত উন্নতি করতে চায় তাকে তত সহিষ্ণু হতে হবে। সহিষ্ণুতা যার নেই সে বড় হতে পারে না। তার দ্বারা বড় কাজ সম্ভবপর নয়। যাঁর চরিত্রে হিমাচলের মত ধৈর্য ও তিতিক্ষা আছে তিনিই অক্ষম কীর্তি স্থাপন করতে পারেন। ত্যাগ আর ধৈর্যই মানব জীবনে সুখ-শান্তি লাভের পূর্বশর্ত। 
আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে 
আসে নাই কেহ অবণী পরে,
সকলের তরে সকলে আমরা 
প্রত্যেকে আমরা পরের তরে। 

এ উপলব্ধিকে জগতে ধারণ করেছেন বিভিন্ন ধর্মের মহান পুরুষরা। হযরত মহাম্মদ (স.), যীশু খ্রিস্ট, বুদ্ধদেব প্রমুখ ধর্ম প্রবক্তারা এ উপলব্ধিকেই লালন করেছেন এবং লালন করতে বলেছেন তাঁদের অনুসারীদের। মানুষের সব সৃষ্টিকর্ম ও সম্পদ বৃহৎ জগতের কাছে নিয়োজিত করতে পারলেই সেগুলো স্বার্থক হয়। মানুষের জীবনও সফলতায় ভরে উঠে।


এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো


মানুষের মতো বাঁচতে হলে বা আপনার অস্তিত্ব বজায় রাখতে হলে এবং জীবনে সাফল্য অর্জন করতে হলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন সহনশীলতা। প্রকৃতিবিজ্ঞানী ডারউইন-এর তত্ত্ব Survival of the fitter অনুযায়ী পৃথিবীতে যোগ্যরাই বেঁচে থাকার অধিকার আছে। তাই বিশ্ব সংসারে সহ্য করার শক্তি ও যোগ্যতা যার আছে সেই কেবল বেঁচে থাকার অধিকারী। 

সহনশীলতা মানব জীবনের অন্যতম সাম্যনীতি। পৃথিবীতে অবিমিশ্র সুখ-দুঃখ বলে কিছু নেই। সুখ-দুঃখ আসলে মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। বিপদাপদের মধ্য দিয়েই মানুষের যাত্রা শুরু হয়। তাকে সংগ্রাম করতে হয় নানা প্রতিকূল অবস্থার সঙ্গে। রোগ, শোক, দুঃখ-দারিদ্র্য, অন্যায়-অবিচার এসবের চাপে মানব পর্যুদস্ত হয়। চোখে বিভীষিকা দেখে। কিন্তু এসব প্রতিরোধ করার জন্য চাই শক্তি, অধ্যবসায় ও সহিষ্ণুতা। যুদ্ধে জয়-পরাজয় আছেই কিন্তু যে মানুষ পরাজয়কে অম্লান বদনে মাথা পেতে নিয়ে পরবর্তী বিজয়ের জন্য ব্রতী হয় এবং বিজয় অর্জন করতে পারে, সেই যথার্থ বীর। 

ইতিহাসের পাতায় এরূপ বহু দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যায়। স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ব্রুস ইংল্যান্ডের রাজা এডওয়ার্ড-এর সাথে ছয়বার যুদ্ধে পরাস্ত হয়েও ধৈর্য ধারণ করেছিলেন এবং সহিষ্ণুতার গুণে পুনরায় যুদ্ধ করে সপ্তমবারের প্রচেষ্টায় শত্রুর কবল থেকে স্বদেশ উদ্ধার করেন। দারিদ্রের ঘরে জন্মগ্রহণ করেও একমাত্র ধৈর্য সহিষ্ণুতার কারণে জন ব্রিটন ল্যান্ডেন, স্যামুয়েল হয়েছিলেন জগৎ বিখ্যাত। রুটিওয়ালার ছেলে জন ব্রিটন প্রসিদ্ধ সাহিত্যিকরূপে জীবনে মোট ৮৭টি গ্রন্থ রচনা করে গেছেন। ল্যান্ডেন ছিলেন কৃষকের ছেলে আর স্যামুয়েল মুচির ছেলে। বিদ্রোহী কবি নজরুল আজীবন দারিদ্র্যের সঙ্গে সংগ্রাম করেছেন; সহ্য করেছেন দারিদ্র্যের কষাঘাত। তাঁর সহনশীলতা তাঁর প্রতিভাকে করেছে বিকশিত। যীশুকে ত্রুশ বিদ্ধ করার পরও তিনি অসহিষ্ণু হননি। মহানবীর জীবনালেখ্য সহনশীলতার এক অসামান্য দলিল। তাই তো তিনি মক্কা বিজয়ের পরও বন্দিদেরকে দিলেন নিঃশর্ত মুক্তি। ঘোষণা করেন, ‘তোমরা সবাই মুক্ত, স্বাধীন’। এই সহনশীলতায় মুগ্ধ হয়েই আশ্চর্য কণ্ঠে বলে উঠেন উইলিয়াম ম্যূর, ‘The magnanimity with which Mohammed treated a people who had so long hated and rejected him is worthy of admiration.’

3 Comments

Post a Comment
Previous Post Next Post