রচনা : কী ধরনের বই পড়তে আমার ভালো লাগে

ভূমিকা : বইপড়ার মাধ্যমে আমরা সত্য, সুন্দর, কল্যাণ ও ন্যায়ের চিরায়ত রূপের সাথে পরিচিত হতে পারি। একদিনের বইপড়া আমাদের বিশ্বজগৎ ভ্রমণ করিয়ে আনতে পারে। চোখের সামনে তুলে ধরতে পারে মহাকাশের অজানা রহস্য। বই অতীত আর বর্তমানের সংযোগ সেতু এবং মনের ভেতর তৈরি করতে পারে অনেকগুলো আনন্দময় ভুবন। সেই আনন্দময় ভুবনে ডুব দিয়ে সংসারের নানা জটিলতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। একটা ভালো বই বিশ্বস্ত বন্ধুর কাজ করে।

আমার বই পড়ার সূচনা : আমাকে যখন শহরের একটি স্কুলে ভর্তি করা হয়, তখন আমার বয়স পাঁচ বছর। আমার পড়াশোনার হাতেখড়ি হয়েছে বাড়িতে। মায়ের কাছ থেকে আমি প্রথমে বাংলা এবং পরে ইংরেজি বর্ণমালা শিখেছি। তারপর শিখেছি নামতা। স্কুলে ভর্তির আগেই আমার এসব শেখার পর্ব শেষ। দাদির কাছ থেকে শুনতাম মজার মজার গল্প। স্কুলে ভর্তির সময় থেকে আমার সঙ্গী হয় পাঠ্যবই। বাংলা বইয়ের ছোট ছোট ছড়া আর কবিতা পড়ে আমার খুবই ভালো লাগত। তৃতীয় শ্রেণিতে ওঠার পর থেকেই পেলাম ছোট ছোট গল্প। তখন থেকেই পড়ার প্রতি আমার অভ্যাস গড়ে উঠতে শুরু করল। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় স্কুল থেকে উপহার পেয়েছিলাম ‘ঠাকুরমার ঝুলি’। গল্পগুলো পড়ে খুবই আনন্দ পেতাম। কখনো কখনো দাদির মুখে শুনতাম। শুনে আরো বেশি আনন্দ হতো। পঞ্চম শ্রেণিতে ওঠার পর পড়েছি ঈশপের গল্প, গোপাল ভাঁড়ের গল্প, মোল্লা নাসিরউদ্দীনের গল্প আর মুক্তিযুদ্ধের গল্প। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ওঠার পর পথমেই পড়েছি বীরবলের গল্প। তরপর ‘মোটরযোগে রাঁচি সফর’ ও নানা ধরনের গোয়েন্দা গল্প পড়েছি। এ সময় থেকেই নানা ধরনের গল্পের বই আমার নিত্যসঙ্গী হয়ে ওঠে। 

আমার ভালো লাগা বই : ভ্রমণকাহিনি পড়তে আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে। কারণ তাতে অজানাকে জানার আনন্দ পাওয়া যায়। বইয়ের ভেতর দিয়ে পৃথিবী ঘুরে আসা যায়। সমৃদ্ধ হয় নিজের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার জগৎ। পঞ্চম শ্রেণিতে ‘দেখে এলাম নায়াগ্রা’ নামক ভ্রমণকাহিনি আর ষষ্ঠ শ্রেণিতে ‘রাঁচি ভ্রমণ’ পড়ে আমার এই ধারণা হয়েছে। ঘরে বসেই জানতে পেরেছি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কানাডার ‘নায়াগ্রা’ জলপ্রপাত ও ভারতের ঝাড়খণ্ডের রাঁচি অঞ্চলের মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ সম্পর্কে। ফলে ভ্রমণবিষয়ক বই পড়ার প্রতি আমার কৌতূহল বেড়ে যায়। ভ্রমণকাহিনিগুলোর মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় মুহম্মদ আবদুল হাই রচিত ‘বিলাতে সাড়ে সাতশ দিন’। এ বইটি যখন পড়ি, তখন আমার মনের পর্দায় ভেসে ওঠে ইংল্যান্ডের বিচিত্র ছবি। বইটিতে লেখক লন্ডনের মিউজিয়ামগুলোর যে বর্ণনা দিয়েছেন, তা খুবই জীবন্ত হয়ে উঠেছে। লন্ডনে মিউজিয়াম আছে অনেকগুলো। তবে তুসো মিউজিয়াম, ন্যাচারাল হিস্টরি মিউজিয়াম ও সায়েন্স মিউজিয়াম। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় ব্রিটিশ মিউজিয়াম। এখানে রয়েছে মানবসভ্যতার চার হাজার বছর আগের ধারাবাহিক নিদর্শন। মাদাম তুসোতে আছে বিশ্ববিখ্যাত ব্যক্তিদের মোমের মূর্তি। দেখে মনে হয়, একেবারে জীবন্ত। ইংল্যান্ডে বিচিত্র ফুলের উপহার নিয়ে আসে বসন্ত ঋতু। চারদিকে ফুল আর ফুল যেন চোখে নেশা ধরিয়ে দেয়। লাইলাক, টিউলিপ, মেজ ব্লসম, চেস্ট নাট, ডেইজি, ক্রোকার্স ইত্যাদি। যেদিকে তাকানো যায় শুধু ফুল আর ফুল। ফুলগুলো যে চারদিক আলোকিত করে রাখে। লেখক এই প্রকৃতির আশ্চর্য সুন্দর রূপটিকে ‘সুন্দরের আগুন’ বলেছেন। এসব আমাকে খুবই আকর্ষণ করে। বইটি পড়তে পড়তে আমি যেন নিজের অজান্তেই বিলাতের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে আসি। অজানাকে জানার আনন্দই আমাকে পড়ার মধ্যে বেঁধে রাখে। 

আমার বইয়ের সংগ্রহ : প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় উপহার পাওয়া বই দিয়েই আমার সংগ্রহ শুরু হয়েছিল। এখন অনেক বই আছে আমার সংগ্রহে। রূপকথা, উপকথা, গোয়েন্দা, মুক্তিযুদ্ধ, ছড়া, কবিতা, ইতিহাস, সাধারণ জ্ঞান, সায়েন্স ফিকশন, ভ্রমণকাহিনি ইত্যাদি। ভ্রমণকাহিনির মধ্যে আছে ‘দেশে বিদেশে’, ‘পথে প্রবাসে’, ‘জাপান যাত্রীর পত্র’, ‘বিলাতে সাড়ে সাতশ দিন’, ‘মোটরযোগে রাঁচি সফর’ ইত্যাদি। রূপকথা, মুক্তিযুদ্ধ, ভ্রমণকাহিনি পড়তে আমার বেশি ভালো লাগে। 

বই পড়ে অর্জন : বই পড়ার প্রথম লক্ষ্য হচ্ছে আনন্দ পাওয়া। আনন্দের ভেতর দিয়ে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে ধারণা অর্জন করা। সেটা আমার হয়েছে। ভ্রমণকাহিনি পড়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সম্পর্কে, সে দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ, ইতিহাস, সংস্কৃতি, প্রাচীন ঐতিহ্য, মানুষের জীবনযাপন পদ্ধতি ইত্যাদি সম্পর্কে জেনেছি। তার সাথে তুলনা করতে পারছি আমাদের জীবন ও দেশকে। এসব আমার জীবন গঠনে সহায়ক হবে। বই আমাকে ভবিষ্যতে উন্নত জীবনের পথপ্রদর্শক করছে। বই পড়ে আমি আমার অজানা জগৎকে জানতে পারছি। 

উপসংহার : প্রথম চৌধুরীর মতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে লব্দ শিক্ষা পূর্ণাঙ্গ নয় বলে ব্যাপকভাবে বই পড়া দরকার। বই আমাকে সৎ পথ, সুন্দর জীবনের পথ দেখায়। বই হলো বিশ্বস্ত বন্ধুর মতো। বই সবসময় প্রেরণা জোগায়, নির্মল আনন্দ দেয়। এ জন্য আমি বই পড়ি এবং সকলেরই বই পড়া উচিত।

1 Comments

Post a Comment
Previous Post Next Post