রাজাকে বধ করিয়া রাজত্ব মিলে না ভাই, পৃথিবীকে বশ করিয়াই রাজা হইতে হয়
মূলভাব : ঐশ্বর্যের দুর্নিবার আকর্ষণে দীনহীন হৃদয় মনে করে রাজা হওয়া বড় সুখের। রাজকার্য বড় আনন্দদায়ক।
সম্প্রসারিত ভাব : প্রতিদিন অসংখ্য কণ্ঠে ধ্বনিত হয় রাজার বন্দনা, দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ে প্রতাপ, আড়ম্বর অভ্রভেদ করে, ঘরে উথলে উঠে সুখশয্যা। সে জন্য রাজা হওয়ার বাসনায় ভাই ভাইয়ের বুকে ছুরি মারে, পুত্র নির্মমভাবে বন্দী করে এমনকি হত্যাও করে জন্মদাতা পিতাকে। প্রভুত্ব বিস্তারের নেশা নিষ্ঠুর ধ্বংসলীলা ডেকে আনতে কুণ্ঠিত করে না। মিথ্যাচার, শঠতা গুপ্তচরবৃত্তি, নিরস্ত্রকে হত্যা ইত্যাদি পাপের স্রোত বয়ে যায়। রাজকীয় ঐশ্বর্যের মোহে মনুষ্যত্ব যে কত কলঙ্কিত হয় তার ইয়ত্তা নেই। অথচ প্রকৃত রাজা হওয়ার জন্য যে শ্রেষ্ঠ গুণগুলোর দরকার তা হিংস্র মানুষের দৃষ্টিগোচর। সিংহাসনে বসা এবং বিরোধী শক্তিকে দমন করাই রাজার একমাত্র কাজ নয়। যিনি প্রকৃত রাজা হবেন, প্রজাকে সন্তানবৎ সুখে-দুঃখে বিপদে-আপদে রক্ষা করার দায়িত্ব তো তারই। ভালোবাসার মধ্য দিয়ে তাকে প্রজার হৃদয়ের সিংহাসনে বসতে হবে।
মনুষ্যত্বের গুণে প্রকৃত রাজা অন্যের হৃদয়ের মধ্যে প্রবেশ করার শক্তি এবং অন্যকে সম্পূর্ণ আপন করে নেবার ক্ষমতা লাভ করেন। তখন সেই দেশের সবার মনে হয় ‘আমরা সবাই রাজা আমাদের এ রাজার রাজত্বে।’