শুধু রক্তের সম্বন্ধে আত্মীয়তা হয় না,
আত্মায় আত্মায় মিলনেই সৃষ্টি হয় পরম আত্মীয়তা।
মূলভাব : যথার্থ মানুষ হিসেবে আত্মপরিচয় দেওয়ার জন্য মানুষকে মানবীয় গুণাবলির অধিকারী হতে হবে, বাবা-মা, ভাই-বোন ও পরিবারের অন্যান্য সদস্য আত্মীয়। কারণ এদের মধ্যে রক্তের সম্পর্ক রয়েছে।
সম্প্রসারিত ভাব : যার সাথে রক্তের সম্পর্ক আছে, তাকেই আমরা সাধারণভাবে আত্মীয় বলে গণ্য করে থাকি। কিন্তু শুধু রক্তের সম্পর্ক দ্বারাই আত্মীয়তার সম্পর্ক নির্ণীত হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। কারণ, রক্তের সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও যদি কারো সাথে কারো মনের মিল না থাকে, তবে আত্মীয়তার সে সম্পর্ক স্থায়ী হয় না। মনের মিল ও পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমেই প্রকৃত আত্মীয়তার সৃষ্টি হয়। হীন মনোভাবাপন্ন ও সংকীর্ণচিত্ত ব্যক্তিদের স্থান, সমাজ বা জাতি কারো কাছেই নেই। আত্মকেন্দ্রিক হিসেবে সর্বদা তারা নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে, তারা সমাজে ঘৃণ্য ও সকলের পরিত্যাজ্য। মহৎ ব্যক্তিরা সর্বদা অপরের মঙ্গল কামনা করে থাকেন। পরোপকার করার সুযোগ পেলে নিজেকে তারা ধন্য মনে করেন। তাদের আচার ব্যবহার ও কাজের মাধ্যমে সবার সাথে তারা আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হন। এরূপ মহৎ আচরণ দ্বারাই ইসলামের প্রাথমিক যুগে মদীনার আনসারীগণ মক্কা থেকে আগত মোহাজেরগণকে শুধু ভাই হিসেবেই গ্রহণ করেনি, বরং নিজের বিষয় আশয় ভাইয়ের মত ভাগ করে দিয়েছিলেন। একমাত্র মনের মিলের জন্যই মহানবী (স) সকল মুসলমানকে এক মহান ঐক্যবদ্ধ জাতিতে পরিণত করতে পেরেছিলেন। তাইতো বিশ্বের সকল মুসলমান ভাই ভাই। বর্তমান যুগেও পত্রিকার পাতা খুললে লক্ষ্য করা যায়, রক্তের সম্পর্কের সহোদর ভাই আরেক ভাইয়ের গলায় নির্বিচারে ছুরি চালাচ্ছে। কিন্তু মানুষ মরে গেলেও আত্মার বন্ধন ছিন্ন হয় না। তাই তো বলা হয়ে থাকে, শুধু রক্তের সম্পর্কে আত্মীয়তা হয় না, আত্মায় আত্মায় মিলনেই সৃষ্টি হয় পরম আত্মীয়তা।
আত্মার মিলন হলেই সেটা হবে পরম আত্মীয়। আত্মার মিলন হলেই মানুষ মানবীয় গুণাবলির অধিকারী হয়। পরম আত্মীয় হলেই মানুষ পরকে ভালোবাসে। তার মনে হিংসা দ্বেষ স্থান পায় না।