ভাবসম্প্রসারণ : সাহিত্য জাতির দর্পণস্বরূপ

সাহিত্য জাতির দর্পণস্বরূপ

মূলভাব : সাহিত্যের মাধ্যমে কোন জাতির ধ্যান-ধারনা, চিন্তা-চেতনার প্রকাশ ঘটে। একটি দেশের সামগ্রিক পরিচয় ফুটে উঠে সেই দেশের সাহিত্যে। 

সম্প্রসারিত ভাব : সাহিত্যের সাথে মানব জাতির ও সমাজের যোগাযোগ খুবই ঘনিষ্ঠ। জীবন ও সমাজকে নিয়েই সাহিত্য। কবি সাহিত্যিকেরা সমাজের মানুষ। সমাজ জীবনের লদ্ধ অভিজ্ঞতা নিয়ে সাহিত্য রচিত হয়। সে জন্য সাহিত্যে সমাজ জীবনের প্রতিফলন ঘটে। সাহিত্যের এ বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করে সাহিত্যকে সমাজের দর্পন বলে অভিহিত করা হয়। 

সাহিত্য সমাজকে নিয়ে সমাজের মানুষের জন্য সমাজের মানুষ দিয়ে তৈরী। লেখকেরা তাঁদের চারপাশের জীবন থেকে যে অভিজ্ঞতা লাভ করেন তা তাঁদের লেখায় প্রকাশ করেন। চারদিকে তাঁরা যা দেখেন, যা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন তার সাথে মনের কল্পনা মাধুরী মিশিয়ে রচিত হয় সাহিত্য। সেজন্য সাহিত্য রচনার মূল উপকরণ মানুষের জীবন তথা সমাজ। লেখকেরা সমাজেরই অধিবাসী। তাঁরা লেখেন মানুষের জন্য। তাঁরা উপকরণ সংগ্রহ করে সমাজের জীবনধারা থেকে। সে জন্য সাহিত্যের মধ্যে যে জীবন বিধৃত হয় তা সমাজের মানুষের সুখ-দুঃখ আনন্দ-বেদনার জীবন। সাহিত্য পাঠ করে এ সমাজ জীবনের পরিচয় পাওয়া যায়। এদিক থেকে সাহিত্য সমাজ জীবনের তথা জাতির দর্পণ। সমাজের মানুষ সাহিত্যের মাধ্যমে নিজের জীবনের প্রতিফলন লক্ষ্য করে। সাহিত্যে জীবনের এ প্রতিফলন ঘটেছে বলে মানুষের কাছে যুগ যুগ ধরে তা সমাদৃত এবং জীবনকে বৈচিত্র্যময় রূপে প্রত্যক্ষ করার উৎস হিসেবে বিবেচিত।

কোন জাতির প্রতিনিধিত্ব করে সেই জাতির সাহিত্য। পৃথিবীতে যে জাতির সাহিত্য যত বেশি উন্নত, জাতি হিসেবেও সে জাতি তত বেশি উন্নত।


এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো


ভাব-সম্প্রসারণ : একটি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা ও চিন্তা-চেতনা প্রতিফলিত হয় তার সাহিত্যে। সাহিত্যের সাথে মানবজাতির জীবন ও সমাজের যোগাযোগ খুবই ঘনিষ্ঠ। জীবন ও সমাজকে নিয়েই সাহিত্য।

মানুষের দর্শন, বিজ্ঞান, ধর্মনীতি, অনুরাগ-বিরাগ, আশা-নৈরাশ্য, তার অন্তরের সত্য ও স্বপ্ন- এ সবই সাহিত্য। দর্পণে যেমন আমাদের পূর্ণাঙ্গ মুখচ্ছবি প্রতিফলিত হয়, তেমনি সাহিত্যেও একটি জাতির পরিপূর্ণ চিত্র ফুটে ওঠে। ইংরেজিতে তাই বলা হয়, Literature is the criticism of life- সাহিত্য জীবন- সমালোচনা। যে জাতি যত উন্নত সে জাতির সাহিত্য তত সমৃদ্ধ। সাহিত্যের মাধ্যমেই একটি জাতির অবস্থান সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। কেননা প্রত্যেক জাতির কবি-সাহিত্যিকগণই তাঁদের লেখনীর নিপুণ আঁচড়ে সে জাতির নিজস্ব জীবনধারা ও বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তোলেন। যেমন: লিয়েফ্ তলস্তয়ের ‘ওয়ার এন্ড পীস’ -এ যুদ্ধ নয় শান্তিই বড় হয়ে ওঠে; ভল্টেয়ার রুশোর সাহিত্য স্বেচ্ছাচারী ফরাসী রাজশক্তির বিরুদ্ধে গণমনকে চেতনাদীপ্ত ও অনুপ্রাণিত করেছে; মাক্সিম গোর্কির সাহিত্য জারের শাসনের মৃত্যুঘণ্টা বাজিয়েছিল; বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ব্রিটিশ শাসন-শোষণ থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্যে বলে উঠেছিলেন- ‘শিকল পরা ছল / মোদের এই শিকল পরা ছল’, কিংবা Mrs. Harriet Beecher Stowe-এর ‘Uncle Tom’s Cabin’ থেকে আমরা তৎকালীন আমেরিকার কৃষ্ণকায় ক্রীতদাসদের উপর অমানবিক নির্যাতনের কথা জানতে পারি। এমনিভাবে সাহিত্যে জাতির সমসাময়িক গৌরব ও উন্নতি-অবনতির কাহিনী বিধৃত হয়। জাতির অতীত ইতিহাস ও ঐতিহ্য সাহিত্য পাঠে সহজেই জানা যায়। তাই কোনো জাতিকে জানতে হলে সে জাতির সাহিত্যের সাথে পরিচিত হতে হবে।

জাতীয়জীবনে মানুষের উত্থান-পতন, প্রেম-ভালবাসা, সুখ-দুঃখের কাহিনী স্বীয় বৈশিষ্ট্য নিয়ে সাহিত্যে ধরা পড়ে। তাই, সাহিত্য কেবল কবির কবিতা ও সাহিত্যিকের রচনা নয়, তা একটি জাতির সংস্কৃতির ধারক ও বাহক।

5 Comments

  1. খুব ভালো লাগচে।
    but একটু ছোট হয়ে গেচে।

    ReplyDelete
  2. It's very helpful for me. Thank you so much for publishing it

    ReplyDelete
  3. Thank you sir ,apnader jnno amra porar sujuk paita ci amar boi nai .tai apnader onak onak dornobad .asa kori apnara ai rokom vabe e amader porar sujuk kora diben ..take love sir ........

    ReplyDelete
Post a Comment
Previous Post Next Post