পরের অভাব মনে করিলে চিন্তন
আপন অভাব ক্ষোভ থাকে কতক্ষণ?
মূলভাব : জীবন ও অভাব যেন একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। মানবজীবনে অভাববের শেষ
নেই। এটা মানবজীবনের এক ভয়ানক রোগ। কিন্তু অন্যের অভাবের কথা ভাবলে নিজের অভাবের
চিন্তা অনেকটা কমে আসে।
সম্প্রসারিত ভাব : জীবন সংগ্রামে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য মানুষ
নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত। অন্যকে নিয়ে ভাবার সুযোগ তার আর হয়ে ওঠে না। অস্তিত্বের
সংগ্রামে টিকে থাকার প্রয়োজনবোধ থেকেই অভাবের জন্ম। অর্থাৎ বাসস্থানের জোগান হলো
এবার প্রয়োজন তা সাজানোর। সার্ণিচার কেনা হলো কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই
আসবাবপত্র সময়োপযোগী করে তোলার জন্য তার পরিবর্তন চাই। এ পরিবর্তনের মানসিকতাই
অভাবের জন্ম দিচ্ছে। আর অভাবের তাড়নায় মানুষ প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে যাচ্ছে। যার
যত আছে তার আরও চাই। এ মানসিকতার ওপর ভর করেই সে নিজের প্রয়োজন মেটানোর জন্য
অর্থের পিছু ছুটছে। একবারও অন্যের কথা চিন্তা করছে না। অথচ অভাবের তাড়নায় কত
মানুষ না খেয়ে মরছে। প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে দু মুঠো ভাতের জোগান দিতে পারছে না।
সন্তান, মা-বাবা, প্রিয়জনকে নিয়ে দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। তাদের বাসস্থান,
আহার, নিরাপদ পানীয় জল কিংবা সামাজিক মর্যাদা কিছুই নেই। আমরা এসবের দিকে খেয়াল
রি না। নিজের প্রয়োজনকেই বড় অভাব মনে করি। যদি নিজের অভাবকে বড় মনে করে দুঃখ করা
হয় তাহলে সুখী হওয়া যায় না। নিজের অভাবকে না দেখে সমাজের নির্যাতিত নিপীড়িত
মানুষের দুঃখ-দুর্দশার দিকে তাকালেই কেবল নিজের অভাববোধ অনেকাংশ লাঘব হবে।
মন্তব্য : অভাব মূলত প্রয়োজনবোধের অনুভূতি। আত্মতৃপ্ত থেকে অন্যের অভাবকে
হৃদয় দিয়ে অনুভব করলে নিজের অভাব অনেকাংশে হালকা হয়।