সংসারে কিছুই চিরদিনের নয়
মূলভাব : নশ্বর এ পৃথিবীতে কোন কিছুই স্থায়ী থাকে না। এ জগৎ সংসারে কিছুই চিরস্থায়ী নয়।
সম্প্রসারিত ভাব : মহান সৃষ্টিকর্তা এ পৃথিবীতে আমাদের সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য। প্রতিটি মানুষের কাজের হিসাব পরকালে আল্লাহ নিবেন। পৃথিবীতে কৃতকর্ম অনুযায়ী নির্ধারিত হবে তার আবাসস্থান। কিন্তু আমাদের যে একদিন এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে এ সত্যটি আমরা প্রায়ই ভুলে যাই। সংসারের মায়ায় আচ্ছন্ন হয়ে আশা আকাঙ্ক্ষাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে মানুষ লোভ আর অন্যায়ের আশ্রয় নেয়। প্রভাব আর প্রতিপত্তির অন্ধ মোহে সে তৈরি করে প্রাসাদসম বাড়ি, রাজকীয় গাড়ি আর অন্যকে ফাঁকি দিয়ে গরিবকে ঠকিয়ে গড়ে তোলে বিত্তের পাহাড়। কিন্তু পৃথিবী অবিনশ্বর নয়। মানুষ, তার গাড়ি-বাড়ি, ধন সম্পদ সবকিছু প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। কিন্তু তবু কি অবোধ মানুষ বোঝে! পৃথিবী নশ্বর জেনেও তার এতোসব আয়োজন। ভোগ-বিলাসে মত্ত মানুষ ভাবে এসব অর্জন তার চিরকালের। মানুষের এ আত্মস্বার্থ ব্যবস্থা আর নিয়তিকে উপেক্ষা করা দেখে মরমী কবি হাছন রাজা গেয়ে উঠেছিলেন-
‘লোকে বলে ,বলে রে
ঘর-বাড়ি ভালা না আমার
কি ঘরও বানাইমু আমি শূন্যেরই মাজার……’
হাছন রাজার এ আত্মোপলব্ধি আমাদের মনের মাঝে সঞ্চারিত হয় না। যা কিছু আমাদের পরকালে সাহায্য করবে, আমাদের স্থায়ী জীবন সুখের না দুঃখের হবে তা নির্ধারণ করবে সে সৎ, সুন্দর ও পুণ্যের পথের অনুসারী না হয়ে মানুষ দুনিয়ার অর্জিত সুখকে বেছে নিচ্ছে। কিন্তু ভবের হাটের দোকান একদিন ভেঙ্গে যাবে তা মানুষ বুঝে না। তারা হীরা ফেলে শুধু কাঁচের দিকেই ছুটছে।
সংসার জীবন সাময়িক, এর মায়ায় পড়ে অনন্ত ভবিষ্যৎকে আমরা তুচ্ছজ্ঞান করছি, আপত লাভকে জীবন থেকে পাথেয় করছি।