ভাবসম্প্রসারণ : হিংসা যেদিন যাইবে দুনিয়া ছাড়িয়া / সব তরবারি হইবে সেদিন কাষ্ঠের তরবারি।

হিংসা যেদিন যাইবে দুনিয়া ছাড়িয়া 
সব তরবারি হইবে সেদিন কাষ্ঠের তরবারি। 

মূলভাব : প্রাচীনকাল থেকেই পৃথিবীর বুকে মানুষ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নিজের অস্তিত্ব রক্ষা করে চলেছে। 

সম্প্রসারিত ভাব : এ সংগ্রাম আগে ছিল মানুষের বেঁচে থাকার, পৃথিবীতে টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম। অসহায় মানুষ তখন বন্য জন্তুর আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য, প্রকৃতির তাণ্ডব থেকে বাঁচার জন্য সংগ্রাম করেছে। কিন্তু অস্ত্র আবিষ্কারের পর থেকে মানুষ মানুষের শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু এখন মানুষ। হিংসার উন্মত্ত একশ্রেণির ক্ষমতালিপ্সু রণোন্মাদ মানুষ বিজ্ঞানীদের বাধ্য করেছে মারণাস্ত্র আবিষ্কারে। কিন্তু বিজ্ঞানের যারা যথার্থ সাধক, তারা বিজ্ঞান চর্চা করেন মারণাস্ত্র আবিষ্কারের আশায় নয়, অজানাকে জানার নেশায়, সভ্যতার উন্নতির আকাঙ্ক্ষায়। মানুষের কল্যাণের জন্য তাদের আবিষ্কারের যে ফলাফল তারা প্রকাশ করেছেন তার উপর ভর করেই সঙ্কীর্ণ জাতীয়তাবাদী দেশগুলো ভয়াবহ মারণাস্ত্র নির্মাণের কাজে এগিয়ে গেছে। বিশ্বব্যাপী এ মারণাস্ত্রের সম্ভার যত বেড়েছে, ততই বেড়ে গেছে যুদ্ধংদেহী মনোভাব ও যুদ্ধের সম্ভাবনা। আত্মবিশ্বাস বাড়া মানেই যুদ্ধের জন্য তৈরি হওয়া, হাতে অস্ত্র মানেই প্রয়োগের আকাঙ্ক্ষা। ‘মহাভারত’ এর পাতায় আমরা দেখি বহুতর রাজন্যবর্গের সংযোগে মহাযুদ্ধ সংঘটিত হয়ে ভারতভূমি বীরশূন্য হয়েছিল। এরকমই শোচনীয় অবস্থা লক্ষ করা গেছে পর পর দু’টি বিশ্বযুদ্ধে। সেকালের সাথে একালের যুদ্ধের বড় তফাৎ। যুদ্ধের ভয়াবহতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন সব দেশই জানে যে, যুদ্ধ শুরু হলে কোন দেশই রক্ষা পাবে না। এ ভয়ের অনুশাসনই মানুষকে ক্রমশ যুদ্ধবিরোধী মনোভাবে দীক্ষিত করে তুলছে। যুদ্ধের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা এখন শুধু যোদ্ধাদের নয়, তাদের আত্মীয় স্বজন, স্বদেশবাসী তথা বিশ্ববাসীকে যুদ্ধের স্বরূপ সম্বন্ধে সচেতন করেছে। তবু মানুষের মজ্জাগত যুদ্ধের বাসনা একেবারে লোপ করা খুবই কষ্টকর। ‘হিংসায় নয়, সংহতি’ই যে শেষ কথা এ বোধ যত সত্য হবে ততই যুদ্ধের সম্ভাবনা কমবে। মহাকাশ প্রযুক্তি, পরমাণুবিজ্ঞান ও রসায়নবিদ্যার নতুন নতুন পরীক্ষা মানুষের জীবনে তখন বয়ে আনবে নিখাদ আশীর্বাদ। 

বিজ্ঞান তার সার্থকতার জন্য অপেক্ষা করবে। শৈশবে খেলাঘরের মারামারি যেমন পরিণত বয়সের স্নেহ সম্পর্কে পরিণত হয়, সভ্যতার অপরিণত অহঙ্কারের প্রকাশ ‘যুদ্ধ’ তেমনি একদিন অবসিত হয়ে পরিণত হবে আন্তর্জাতিক সৌভ্রাত্ববোধে। যেদিন স্নেহ ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে মানুষকে হত্যার কথা ভুলে যাবে, তখন আর যুদ্ধের কোন প্রয়োজন থাকবে না। শেষ হবে অস্ত্র তৈরির প্রয়োজন। ভ্রান্তিজনিত পদস্থলন হিসেবে গণ্য হবে যুদ্ধ। তখন সব অস্ত্রই হবে শিশুদের খেলার সামগ্রী।

2 Comments

Post a Comment
Previous Post Next Post