ভূমিকা : অতিপ্রাচীন কাল থেকে মানুষের সৃজনশীল ক্ষমতার সাথে প্রকৃতির বন্ধন রয়েছে। সৌন্দর্যচর্চায় প্রকৃতি সব সময় মানুষের প্রতি হাত বাড়িয়ে দিয়ে চলেছে। মানুষ প্রকৃতির আলো-বাতাস শুধু ভোগই করেনি, প্রকৃতির এই উপাদানগুলো সৃষ্টিশীল কাজেও ব্যবহার করেছে। আলো নিয়ে মানুষের কাজ করার ইতিহাস প্রাচীন। ফটোগ্রাফিকে যতই Modern Art বলা হোক না কেন, ফটোগ্রাফির ইতিহাস বেশ প্রাচীন। ফটোগ্রাফির তত্ত্ব যখন গঠিত হয় তখন অনেক শিল্পই আলোর মুখ দেখেনি।
ফটোগ্রাফিক শব্দের উদ্ভব : গ্রিক Photos এবং Graphien এর সমন্বয়ে Photography শব্দ গঠিত। Photos শব্দের অর্থ আলো আর Graph অর্থ আঁকা। তাহলে Photography শব্দের অর্থ দাঁড়াল আলো দিয়ে আঁকা। Photography শব্দের বৈজ্ঞানিক পরিভাষা- আলোকচিত্রবিদ্যা। ১৮৩৭ সালে জার্মান জ্যোতির্বিদ Sir John Herschel তাঁর বন্ধু Henry Talbot-কে লেখা একটি চিঠিতে প্রথম Photograph শব্দটি ব্যবহার করেন বলে জানা যায়। তখন থেকেই শব্দটি জনপ্রিয় হতে শুরু করে।
ফটোগ্রাফি : সাধারণ অর্থে সূর্যের আলো কিংবা কৃত্রিম আলোকে ব্যবহার করে কোনও বস্তুর প্রতিবিম্ব আঁকার পদ্ধতিকে ফটোগ্রাফি বলে। বাংলা একাডেমি বিজ্ঞান বিশ্বকোষ বর্ণনা অনুযায়ী, ফটোগ্রাফি হলো সুবেদী পৃষ্ঠতলের ওপর আলো অথবা অন্যান্য প্রকার বিকিরণের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ক্রিয়ার মাধ্যমে দৃশ্যমান প্রতিবিম্ব গঠন প্রক্রিয়া। তবে এই প্রক্রিয়া ফিল্ম-ক্যামেরার ক্ষেত্রে সম্পন্ন হয় রাসায়নিক পদ্ধতিতে। ডিজিটাল ক্যামেরার ক্ষেত্রে ইলেক্ট্রনিক বাইনারি পদ্ধতিতে।
ফটোগ্রাফির গোড়ার কথা : ৫ম-৪র্থ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দে চীন এবং গ্রিক দার্শনিকরাই প্রথম আলোক ও ক্যামেরা সংক্রান্ত তত্ত্বগুলো আবিষ্কার করেছিলেন। এই ধারাবাহিকতায় Ibn al-Haytham -এর নামটি স্মরণীয়। এই ইরাকি বিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিদ ১০ম কিংবা ১১শ শতাব্দীতে ক্যামেরার তত্ত্বটিকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি তার ১০১১-২১ খ্রিষ্টাব্দে লেখা ‘কিতাব আল মানাজির’ (Book of Optics) গ্রন্থে এ তত্ত্ব ব্যাখ্যা করেন। শুধু তাই নয় তার এই ৭ খণ্ড মহাগ্রন্থটি পরবর্তী Modern Physical Optics-এ বিশেষ অবদান রাখে।
তিনি একটি ক্যামেরার মতো বস্তুও তৈরি করেছিলেন। শুনে অবাক হতে হয়, সেই ১১শ শতাব্দীর এই ক্যামেরাটি ছবি তোলার মৌলিক তত্ত্বের ওপর নির্মিত ছিল! তবে বিজ্ঞানী Haytham ক্যামেরাটি ছবি তোলার জন্য নয়, তৈরি করেছিলেন সূর্যগ্রহণ দেখার জন্য। এই বিজ্ঞানীকে বলা হয় Father of Optics.
ফটোসাংবাদিকতার ইতিবৃত্ত : গবেষক Gerry Connor-এর মতে আমাদের পৃথিবীকে প্রভাবিত করে এমন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক এবং সামাজিক ঘটন বা ঘটনাসমূহকে প্রামাণিক রূপ প্রদান করে ফটোসাংবাদিকতা। ফটোসাংবাদিকতা সেসব প্রামাণিক রূপ বিশাল জনগোষ্ঠীর সামনে উপস্থাপন করে ঘটনার বিষয়ে মানুষের সচেতনতা এবং চিন্তাকে আলোড়িত করতে। আর এই কাজটি যিনি নিষ্ঠার সঙ্গে করেন তিনিই ফটোসাংবাদিক। খুব ভালো কিংবা শিল্পোত্তীর্ণ ছবি হওয়ার চেয়ে ছবির সংবাদমূল্যটাই ফটোসাংবাদিকতায় প্রধান। এই ক্ষেত্রে মনের চেয়ে মস্তিষ্কের ব্যবহার বেশি, সেহেতু একজন ফটোসাংবাদিকের Sixth Sense প্রখর হওয়াও বাঞ্ছনীয়। ফটোসাংবাদিকতা আধুনিক ফটোগ্রাফির সঙ্গে যুক্ত। ফটোসাংবাদিকতার ইতিহাসে প্রথমেই আসে রোমানীয় আলোকচিত্রী Carol Szathmari (১৮১২-১৮৮৭)-এর নামে। ১৮৫৪ থেকে ১৮৫৬ সাল পর্যন্ত চলা ক্রিমিয়ান মহাযুদ্ধ সংক্রান্ত ছবি তুলে তিনি ফটোসাংবাদিকতার সূত্রপাত করেন। ১৯২৫ এ ফিল্ম ক্যামেরা এবং ১৯২৭ এ Flash Camera আবিষ্কার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক ফটোসাংবাদিকতার প্রসার বাড়তে থাকে।
উপসংহার : শিল্পের সঙ্গে বিজ্ঞানের কোনো দ্বন্দ্ব থাকতে পারে না বরং শিল্পের সঙ্গে বিজ্ঞানের মেলবন্ধন থাকলে শিল্প মাধ্যম হয়ে ওঠে সময়োপযোগী। ফটোগ্রাফির ক্রমবর্ধমান উন্নয়নের ইতিহাস আলোচনা করতে গিয়ে তাই প্রমাণ করে। শিল্প কিংবা তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যম রূপেই ফটোগ্রাফি সীমাবদ্ধ নয়। ফটোগ্রাফি এমন একটি শক্তিশালী মাধ্যম যা মানুষের মনে দ্রুত গতিতে ক্রিয়াশীল। ফটোগ্রাফির ভাষা স্পষ্ট প্রামাণিক। ফটোগ্রাফি চর্চা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া মানে শিল্প এবং প্রযুক্তির দৌড়ে পিছিয়ে থাকে। তার মানে এও নয় যে, একটি দামি ভালো ক্যামেরা হাতে নিলে একজন ভালো আলোকচিত্রী হওয়া যায়। একজন ভালো আলোকচিত্রী হতে হলে চাই শিক্ষা, মননশীলতা এবং দক্ষতা।
এটার উত্তর আমি পেলাম না
ReplyDelete