ভূমিকা : বিশ্ব প্রকৃতির রহস্য নিকেতনের দ্বারোদ্ঘাটনের চাবিকাঠির সন্ধানে মানুষের অন্তহীন যাত্রাই তাঁর বিজ্ঞান সাধনার গোড়ার কথা। সবাই যখন প্রশ্নহীন, সমাধানহীন, নিস্তরঙ্গ অভ্যস্ত জীবনের স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়ে বেঁচে থাকে, তখন কোনো কোনো প্রশ্নকাতর সমাধানে ব্যাকুল প্রাণ উত্তর খোঁজে বিশ্বজুড়ে। সেই প্রশ্ন থেকেই বিজ্ঞান চেতনার জন্ম। তারই অন্য নাম বিজ্ঞান মনস্কতা।
বিজ্ঞান দুর্জয় মুক্তিদাতা : বিজ্ঞান আলোকিত জীবনের হাতছানি দিয়ে অন্ধ মানুষের অন্ধত্বকে ঘুচিয়ে তাকে চক্ষুষ্মান করেছে। বিজ্ঞানের আলোকিত জীবনের হাতছানিতে সে জয় করেছে অসম্ভবকে। বিজ্ঞানের দিক থেকে যারা মুখ ফিরিয়ে থেকেছে, যারা বিজ্ঞানবিমুখ, তারা অন্ধ কুসংস্কারময় কূপমণ্ডূকের জীবন নিয়েছে বরণ করে। ঝাড়-ফুঁক, তুকতাক, মন্ত্রতন্ত্র, তাবিজকবচ, উচাটন, মারণমন্ত্র হয়েছে তাদের জীবনযাপনের প্রধান অবলম্বন। কিন্তু, মন্ত্রতন্ত্র ঝাড়ফুঁককে যারা জীবনে সঞ্জীবনী কবচরূপে গ্রহণ করেছে, তারা বাঁচে নি। মৃত্যু মহামারী আকারে তাদের গ্রামের পর গ্রাম উজাড় করে দিয়েছে। সুস্থ সবল জীবন তো দূরের কথা, সুখ সমৃদ্ধির পথ চিরকাল থেকে গেছে তাদের নাগালের বাইরে। বিজ্ঞান চেতনাহীন জীবন অজ্ঞ অশিক্ষিতদের জীবন। সে জীবন সভ্যতার আলোকহীন জীবন-পশুর জীবন। কারণ, বিজ্ঞানই মানুষকে বহুযুগের অন্ধকার পথ পার করিয়ে সভ্যতার আলোকিত জগতে আসীন করে দিয়েছে, টিকটিকির জগৎ থেকে আধুনিক পরমাণু ও ইলেক্ট্রনিক জগতে পৌঁছে দিয়েছে। বিজ্ঞান তাই আজ কুসংস্কার, জড়তা, অকালমৃত্যুর বন্দিশালা থেকে মানুষের দুর্জয় মুক্তিদাতা।
আমাদের জীবনে বিজ্ঞানের অবদান : প্রাগৈতিহাসিক মানবের অগ্নি আবিষ্কারের দিন থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত মানুষের অতন্দ্র সাধনা বিজ্ঞানকে করেছে সমৃদ্ধ, সভ্যতাকে করেছে জঙ্গম। বাষ্পীয় শক্তিকে সে করেছে বশীভূত, বিদ্যুৎকে করেছে করায়ত্ত, মুঠোয় পুরে নিয়েছে পারমাণবিক শক্তিকে। ডাঙায় ছুটছে মোটর-ট্রেন, জলে ঢেউ আর ঝুঁকি জাপটে ধরে জাহাজ ছুটে চলেছে। আকাশ তোলপাড় করে ছুটে চলেছে শব্দের চেয়েও দ্রুতগামী বিমান পোত, মহাশূন্যে পাড়ি দিচ্ছে রকেট স্পুনিক মহাকাশযান। তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে কম্পিউটার আর মুঠোফোনে দুনিয়াকে আঙুলের ডগায় ঘোরাচ্ছে মানুষ।
বিজ্ঞান ও মানব সভ্যতা : বর্তমান সভ্যতা মানুষের বহু শতাব্দীর স্বপ্ন ও সাধনার ক্রমপরিণাম। মানুষ তাঁর যুগ যুগান্তরের স্বপ্ন ও সাধনার অনবদ্য ফসল দিয়ে গড়ে তুলেছে সভ্যতার এই বিশাল ইমারত। আপনার প্রাণশক্তি তিলে তিলে দান করে, বুকের রক্ত বিন্দু ঢেলে দিয়ে সে রচনা করেছে সভ্যতার এই তিলোত্তমা মূর্তি। সে সভ্যতার বেদীমূলে দিয়েছে তাঁর বাহুর শক্তি, মস্তিষ্কের বুদ্ধি, ইন্দ্রিয়ের অনুভূতি এবং হৃদয়ের ভালোবাসা। বিজ্ঞান মানুষের অতন্দ্র সাধনার ফসল। কালক্রমে, মানুষ বিজ্ঞানকে তাঁর সভ্যতার বিজয় রথের বাহন করে শতাব্দীর পর শতাব্দী পার হয়ে এসে উপনীত হয়েছে বর্তমানের প্রদীপের সম্মুখে। বলা বাহুল্য, সভ্যতার এই চরম সমুন্নতির মূলে রয়েছে বিজ্ঞানের অপরিসীম বিস্ময়।
কুসংস্কার বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদ : বিজ্ঞানের মূল কথাই হলো, কার্য ও কারণের মধ্যে যুক্তির শৃঙ্খলা স্থাপনা। ঘটনাবলির আপাত পারস্পরিক বিরোধই রহস্যের কুহেলিকা সৃষ্টি করে আচ্ছন্ন করে মানুষের মন ও জ্ঞানবুদ্ধিকে। কিন্তু গভীর পর্যবেক্ষণ, সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ এবং কার্যকারণের যুক্তি শৃঙ্খলা স্থাপনের ফলে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় রহস্যের মায়াময় কুহেলিকা জাল। তখনই ঘটে বিজ্ঞানের প্রকাশ। অর্থাৎ যুক্তিবাদ ও বিজ্ঞানের সাহচর্য ছাড়া জীবন সুখকর হতে পারে না।
সভ্যতা, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি আর কুসংস্কার : বৈজ্ঞানিকের অতন্দ্র সাধনার ফসল যে বিস্ময়কর সফল আবিষ্কার ইতিহাসের পাতায় নতুন অধ্যায় সংযোজন করে, ধূর্ত রাজনীতিক এবং ধূর্ততর বণিকেরা তাকে স্বার্থসিদ্ধির প্রয়োজনে নিজেদের কাছে কুক্ষিগত করে বৈজ্ঞানিককে বিদ্যালয়ের সুবোধ বালকের মতো তাঁর গবেষণাগারে ফিরে যাবার জন্যে আদেশ জানায়। বৈজ্ঞানিক তাঁর আবিষ্করণের বিকৃত দানবিক প্রয়োগে লজ্জিত, মর্মাহত ও অনুতপ্ত হৃদয়ে বহুক্ষেত্রে বেছে নিতে বাধ্য হন আত্মহননের পথ। অন্যদিকে, বিজ্ঞানের দুর্বার স্রোতে ভাসমান বর্তমান প্রজন্ম আমাদের সভ্যতার গর্বের ও সৌন্দর্যের বিষয়গুলোকে এবং আমাদের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ও অনবদ্য সংস্কৃতি সম্ভারকে যদি অর্থহীন কুসংস্কার বলে, অনাবশ্যক মূল্যহীন মনে করে পরিত্যক্ত আবর্জনার আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করে, তবে যে আমাদের সর্বনাশ হবে। এই প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে, শেওড়া গাছে ভূত, কালো বিড়াল নাস্তি- এসব মিথ্যা কুসংস্কার, কাজেই বর্জনীয়। কিন্তু তাই বলে শুভ অনুষ্ঠানের বরণডালা, মঙ্গলঘট স্থাপন, মাঙ্গলিক আলপনা রচনা, বিশ্ব প্রকৃতির সৌন্দর্যময় অনুষঙ্গ, প্রীতি ভক্তি এবং উদার মানবিকতা কখনই মিথ্যা বা অপ্রয়োজনীয় মনে করে পরিত্যাজ্য হতে পারে না। এগুলো আমাদের জীবন ও সমাজকে সুন্দর করে রচনা করতে সাহায্য করে। সন্ধ্যায় ঘরে ঘরে আলো জ্বলবে না, শাঁখ বাজবে না, আজানের ডাক সান্ধ্য আকাশ ছাপিয়ে যাবে না, অন্নপ্রাশন, উপনয়ন, বিবাহ, শ্রাদ্ধ সব মুছে ফেলতে হবে কুসংস্কারের নামে, তবে তা যে বিজ্ঞানের জয়জয়কারের নামে এক প্রকার দারিদ্র্য, শূন্যতা ও রিক্ততাকে জীবনে আলিঙ্গন করে নেবার নামান্তর হবে।
উপসংহার : বিজ্ঞানহীন, যুক্তিবাদের সাহচর্যহীন জীবন তো অজ্ঞতার জীবন, মূঢ়তার জীবন, সভ্যতার আলোকহীন অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবন। সেই অন্ধকারময় জীবনই কুসংস্কারের জন্মভূমি। কাজেই, যারা বিজ্ঞানের পথে যাত্রা করতে পেরেছে, বিজয় আর্শীবাদ অবারিত ধারায় তাদেরই শিরে ঝরে পড়েছে। ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে পূর্ণমূল্য দিয়ে নবযুগের প্রভাতে সেই বিজ্ঞান লক্ষ্মীর আশীর্বাদ বাংলাদেশের ঘরে ঘরে হোক, মানুষ ওড়াক মানুষের ঝাণ্ডা।
- রচনা : আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ও বাংলাদেশ
- রচনা : আধুনিক জীবনে কম্পিউটার শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা
- রচনা : বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা
- রচনা : চিকিৎসা ক্ষেত্রে কম্পিউটার
- রচনা : চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান
- রচনা : শিক্ষা ক্ষেত্রে কম্পিউটার
- রচনা : দৈনন্দিন জীবনে কম্পিউটার
- রচনা : কৃষিকাজে বিজ্ঞান
- রচনা : মানব কল্যাণে বিজ্ঞান
- রচনা : ইন্টারনেট
- রচনা : আধুনিক জীবন ও প্রযুক্তি
- রচনা : বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১
- রচনা : কুসংস্কার
- কুসংস্কার কি? প্রচলিত কুসংস্কারের তালিকা
ধন্যবাদ
ReplyDeleteThanks but too long
ReplyDeleteYes it is so long
DeleteThanks but very long
ReplyDeleteHmm thanks but very very long
ReplyDeleteThank for for the help ........
ReplyDeletethank u my help
ReplyDeleteখুব বড়ো
ReplyDeleteদারুন।আমার খুব কাজে লেগেছে।
ReplyDeleteIt was really helpful for me
DeleteThanks a lot ya it was very long but it helped me a lot for holiday homework
It was rely very very helpful for me thanks
দারুন বড়ো ছোটো হলে ভালো হতো
ReplyDeleteদাদা ঠিক বলেছেন
Deleteএকটু সরল শব্দের প্রয়োগ এবং সরল বাক্য প্রয়োজন হলে কম-বেশি সকলের সুবিধা হয়।
ReplyDeleteGood luck
ReplyDeleteThanks,but quiet long
ReplyDeleteআমার খুবই পচ্ছন্দ হয়েছে
ReplyDeletethank you so much for this paragraph.
ReplyDeleteNice bro. thank you very much very nice
ReplyDeleteএতো বরো ভালো লাগলো না
ReplyDeleteThanks Amar khub kaj a lakba
ReplyDeleteDarun sundor vasha. Kintu vasha guloke ঠিকঠাক ব্যবহার korte hoto.Although the writing is really good.Go ahead.
ReplyDeleteNice but too long to....to take in
ReplyDeleteThankyou very very thankyou
ReplyDeleteঅনেক বড়ো, কোয়েকটা নিলাম
ReplyDeleteলেখা রচনা গুলো পযেন্ট গুলো আর একটু ছোট হলে ভালো হত
Delete