রচনা : বাংলাদেশের বসন্তকাল

↬ বসন্তে প্রকৃতি

↬ আমার প্রিয় ঋতু : বসন্তকাল


ভূমিকা : পাহাড়, নদ-নদী, শস্যময় সবুজ সমভূমি শোভিত প্রকৃতির লীলানিকেতনের এই দেশে পরপর ছয়টি ঋতু আসে। প্রকৃতি সযতনে পরিয়ে নেয় ভিন্ন ভিন্ন সাজে। কখনো সে সাজ হয় রুদ্র কঠোর। এ সাজ গ্রীষ্মের। বর্ষায় এদেশ ক্রন্দসী নারীর মতো সজল শোকাতুরা শরতে শিউলিমালা পরে সাদা মেঘের ভেলায় চড়ে ঝলমল করে হেসে ওঠে সে। হেমন্তে পাকা ফসলের সম্ভারে প্রকৃতি হয় দেবী অন্নপূর্ণা, শীতে পরে সে বৈরাগ্যের বেশ। বৈরাগ্যের ধ্যান ভেঙে সুকঠোর সাধনা শেষ করে বসন্তকালে প্রকৃতি যেন রূপে-রঙে-রসে ঝলমল করে ওঠে। বসন্তকালকে বলা হয় ‘ঋতুরাজ’

সময়সীমা ও বৈশিষ্ট্য : ফাল্গুন ও চৈত্র এ দুই মাস বসন্তকাল। বসন্তকাল নবযৌবনা রূপ নিয়ে অজস্র ফুল, পাখি, পত্রপল্লব, বর্ণ গন্ধ, সুর ও ছন্দ একসাথে জড়ো করে হাজির হয়। তার আগমনে প্রকৃতি যেন অকস্মাৎ ঝলমলিয়ে হেসে ওঠে। এ সময় শীতে ঝরে যাওয়া গাছপালা নতুন কিশলয়ে ভরে যায়। বনে বনে পড়ে যায় ফুল ফোটানোর সাড়া। আনন্দে গলা ছেড়ে ডাকে কোকিল, ‘বউ কথা কও’। দোয়েল আর পাপিয়াও আনন্দে গান করে। আবহাওয়া থাকে নাতিশীতোষ্ণ। বেশি শীত ও গরম কোনোটাই অনুভূত হয় না। ফসলের মাঠে এ সময় রবিশস্য ও বোরো ধান থাকে। আমের শাখায় শাখায় দেখা যায় নতুন মঞ্জরি। তার মৌ মৌ গন্ধে ভরে ওঠে চারদিক। বসন্তের দক্ষিণের মৃদুমন্দ বাতাসে শরীর-মন জুড়িয়ে যায়।

প্রাকৃতিক দৃশ্য : প্রাকৃতিক দৃশ্যের দিক দিয়ে বসন্তকাল সকল ঋতুর সেরা। অজস্র পত্রপুষ্পে সুশোভিত হয় চারদিক। বন-বনানীতে ফোটে নানা জাতের ফুল নানা বর্ণে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে চারদিক। সৌরভে আমোদিত হয় পরিবেশ। শিমুলের শাখায় থোকা থোকা লাল ফুলের আড়ালে কালো কুচকুটে শরীর লুকিয়ে আনন্দে কু-উ করে ডেকে ওঠে কোকিল। ময়না হলুদ ঠোঁটে ঠুকরে খায় শিমুলের বীচি। মাঠে মাঠে সরষে ফুলের ক্ষেতে প্রকৃতি হলুদ গালিচা পেতে দেয়। তার উপর দিয়ে ঢেউ তুলে নেচে যায় দক্ষিণা বাতাস। আমের শাখায় দেখা যায় ঝুরঝুরে বোল অথবা কচি আমের গুটি। তারই লোভে গাছের তলায় ভিড় জমায় লোভী শিশুর দল। নির্মল মেঘশূন্য আকাশের তলায় গলা ছেড়ে গান গেয়ে গরুর পাল নিয়ে রাখাল চলে মাঠে। চাষি বোরো ধান কেটে ধানের বোঝা মাথায় করে বাড়ি ফিরে।

বনে বনে যে রং, যে সুর, প্রাণের যে উচ্ছ্বাস বসন্ত ছড়িয়ে দেয়, তা কবিচিত্তেও আলোড়ন সৃষ্টি করে। কবি সে কথা এভাবে বলেন-
“এলো ঐ বনান্তে পাগল বসন্ত
বনে বনে মনে মনে রঙ সে ছড়ায় রে
চঞ্চল তরুণ দিগন্ত।”

বসন্ত উৎসব : বসন্তকাল কবি ও সাহিত্যিকের প্রেরণার উৎস হয়ে আছে যুগ যুগ ধরে। চমৎকার আবহাওয়া এবং ফুল ও ফলের প্রাচুর্যের জন্য এ সময় বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনও মুখরিত হয়ে ওঠে। উদযাপিত হয় বাসন্তী উৎসব, হোলি উৎসব ও নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

আধুনিক কালে শহরের যান্ত্রিক জীবনেও বসন্ত একটি প্রাণোচ্ছল আনন্দের বার্তা নিয়ে উপস্থিত হয়। চারুকলার বকুলতলায় রমনার বটমূলে ইত্যাদি জায়গায় এবং রেডিও, টেলিভিশন ইত্যাদি গণমাধ্যমে গান, আবৃতি, নাটক ও আলোচনার মাধ্যমে মহাসমারোহে বসন্ত বরণ উৎসব পালন করা হয়ে থাকে।

উপসংহার : বসন্তকাল মানুষের মনে নতুন চেতনা আনে। প্রকৃতির হাস্য ও লাস্য মানুষের মনকে প্রভাবিত করে বলে মানুষ এ সময় প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পায়। রোমান্টিক চেতনার উৎস এই বসন্তকাল যেমন কবি ও সাহিত্যিকের কাছে আদরণীয়, তেমনি সাধারণ মানুষের কাছেও আকাঙ্ক্ষিত এবং প্রিয়।

4 Comments

  1. খুব সুন্দর ভাবে লিখেছেন।ধন্যবাদ

    ReplyDelete
  2. Thank you ! Your website is really helping me with my homeworks and essay competitions . :)

    ReplyDelete
  3. It is very thankful

    ReplyDelete
Post a Comment
Previous Post Next Post