↬ পরীক্ষায় দুর্নীতি
↬ পরীক্ষায় দুর্নীতি ও তার প্রতিকার
↬ পাবলিক পরীক্ষায় নকল প্রতিরোধ
↬ নৈতিক অবক্ষয় ও পরীক্ষায় দুর্নীতি
ভূমিকা : ছাত্র মানেই পরীক্ষার্থী। কতকগুলো পরীক্ষার মাধ্যমেই ছাত্রজীবনের যবনিকা ঘটে। তাই পরীক্ষা হল ছাত্রদের মেধা মূল্যায়নের একটি সনাতন বা প্রথাগত বা অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। এ পদ্ধতির মাধ্যমেই ছাত্রজীবনের লব্ধ জ্ঞানের পরিধি পরিমাপ করা হয়। কিন্তু একজন ছাত্রের মেধা দীর্ঘদিনের শিক্ষাকে মাত্র তিন ঘণ্টায় পরীক্ষায় কি আদৌ মূল্যায়ন সম্ভব? বিশেষ করে সেই পরীক্ষা যদি গণটোকাটুকি বা নকলের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়? তাই চিন্তাশীল ব্যক্তিমাত্রই এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন।
বর্তমান পরীক্ষাপদ্ধতি ও দুর্নীতির স্বরূপ : আমাদের দেশে বর্তমানে যে পরীক্ষাপদ্ধতি দেখা যায় তা অন্যান্য প্রায় সবকিছুর মতই ব্রিটিশদের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। ব্রিটিশদের প্রশাসনিক কাজের উপযুক্ত তাৎক্ষণিকভাবে একটি ‘শিক্ষিত’ জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার লক্ষ্যে একটি পাবলিক পরীক্ষার ধারণা তারা সৃষ্টি করে। ফলে ১৮৫৭ সালে ‘প্রবেশিকা পরীক্ষা’ নাম দিয়ে সদ্য প্রতিষ্ঠিত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দেশব্যাপী প্রথম পাবলিক পরীক্ষা পরিচালনা করা হয়। সেই পদ্ধতি এবং ধারণা বহু চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আজকের পাবলিক পরীক্ষার রূপ ধারণ করেছে। সেকালে একজন-দুজন পরীক্ষায় দুর্নীতির আশ্রয় নিলেও কালের আবর্তনে এই পরীক্ষা দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে।
বর্তমান পরীক্ষা পদ্ধতি আমাদের দেশের একটি প্রহসন বলা চলে। কারণ আমাদের সামাজিক জীবনে দুর্নীতির সাথে সাথে পরীক্ষায়ও দুর্নীতি আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক নির্বিশেষে সবারই মূল উদ্দেশ্য ছাত্রদের পরীক্ষায় সাফল্য। যে কোনো উপায়ে পাস নামের একটা সার্টিফিকেট অর্জন করাই তাদের উদ্দেশ্য। এই উদ্দেশ্যের অনুপ্রেরণায় পরীক্ষা দিতে বসে পরীক্ষার্থীরা নির্বিচারে নকল করছে এবং শুভানুধ্যায়ীরা সে সকলের উপকরণ সরবরাহ করছে। প্রয়োজনে নকলবাজ বা তাদের সহযোগীরা হীন স্বার্থে কর্তব্যরত শিক্ষক, পুলিশ, ম্যাটিস্ট্রেট এমনকি পুলিশ সুপার বা জেলা প্রশাসককেও ঠেঙাতে দ্বিধা করছে না। অন্যদিকে সর্বগ্রাসী এই দুর্নীতি এখন আর কেবল নকলবাজদের মধ্যে সীমিত নয়। এর বেড়াজালে আজ ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, প্রশাসনসহ প্রায় সকল স্তরের মানুষ আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়েছে। ফলে পরীক্ষাপদ্ধতির ওপর সবাই আস্থা হারিয়েছে। তাই বর্তমানে ভর্তি কিংবা চাকরির ক্ষেত্রে নতুনভাবে পরীক্ষা নেওয়া হয়। সেখানেও ঘটে দুর্নীতি ও প্রশ্ন ফাঁসের মতো ঘটনা। ফলে সমস্ত জাতি আজ এক অনিবার্য ধ্বংসের দিকে এগিয়ে চলেছে। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে জুরুরিভাবে পরীক্ষাপদ্ধতির সংস্কার করতে হবে।
পরীক্ষায় দুর্নীতির কারণ : পরীক্ষায় দুর্নীতির জন্যে অনেকে ছাত্রদের নৈতিক অধঃপতনকে দায়ী করেন। কিন্তু এ ব্যাপারে শুধু ছাত্রসমাজই দায়ী নয়, সরকার থেকে আরম্ভ করে গোটা সমাজব্যবস্থা এর জন্যে দায়ী। যেমন-
আর্থসামাজিক অবস্থা : বর্তমান সমাজে দেখা যায়, কোনো রকমে একটা সার্টিফিকেট যোগাড় করতে পারলেই যত খারাপ ছাত্রই হোক না কেন, মামা-খালুর বদৌলতে অথবা উৎকোচ প্রদানের মাধ্যমে চাকরি পেয়ে যায়। এতে পরীক্ষার্থীরা সার্টিফিকেটের জন্যে যে কোনো পথ অবলম্বন করতে দ্বিধা করে না। ফলে পরীক্ষায় দুর্নীতি দেখা দেয়।
অভিভাবকের উদাসীনতা : একজন অভিভাবক পরীক্ষায় দুর্নীতি রোধে উচ্চকণ্ঠ, অথচ তার নিজের সন্তান যখন দুর্নীতির আশ্রয় নেয় তখন সে নির্বাক থাকে। অভিভাবক রোদ-বৃষ্টি মাথায় করে নকল সরবরাহ করছেন এ দৃশ্য পরীক্ষাকেন্দ্রে নিত্যনৈমিত্তিক চোখে পড়ে।
শিক্ষকের কর্তব্যে অবহেলা : শিক্ষকবৃন্দের কর্তব্যে অবহেলা, পাঠদানে অযোগ্যতা ও অসাধুতা পরীক্ষার হলে দুর্নীতির জন্য দায়ী। সম্প্রতি প্রাইভেট টিউশনির ব্যাপক প্রচলন হওয়ায় শিক্ষকগণ শ্রেণিকক্ষে ঠিকমত পাঠদান করেন না। অপরদিকে যেসব ছাত্র শিক্ষকদের নিকট প্রাইভেট পড়ে তাদের সাথে শিক্ষকদের জানাশোনা ও ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পায়। পরীক্ষার হলে এ ঘনিষ্ঠতা অতিক্রম করা শিক্ষকদের পক্ষে কষ্টকর। ফলে দেখা যায়, শিক্ষকরা তাদের নকল না ধরে বরং নকলের সহায়তা করে। ফলে বৃদ্ধি পায় নকল প্রবণতা।
ছাত্রদের রাজনীতি-সম্পৃক্ততা : বর্তমানে ছাত্ররা বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের ক্রীড়নক হিসেবে কাজ করে। ফলে তারা পরীক্ষার জন্য ভাল প্রস্তুতি নেয়ার সময় পায় না এবং শেষ পর্যন্ত ঐসব রাজনৈতিক সংগঠনকে পুঁজি করে পরীক্ষায় নকলের সুবিধা নেয়।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিকূল পরিবেশ : আজকাল রাজনীতি ও সন্ত্রাসের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বছরের অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকে। তাছাড়া প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যানুপাতে শিক্ষকের স্বল্পতাও রয়েছে। ফলে ছাত্রদের ঠিকমত পড়ানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই সম্পূর্ণ সিলেবাস শেষ না করেই কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা নিতে বাধ্য হন। এতে করে ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশুনা করার সময় ও সুযোগ পায় না। ফলে নকলের দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষা : বর্তমান শিক্ষাপদ্ধতি ত্রুটিপূর্ণ ও অনাধুনিক। আমাদের দেশের স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যতালিকা এমনভাবে তৈরি যে, তাতে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনায় তেমন আনন্দ নেই। কাজেই বর্তমানে শিক্ষা ব্যবস্থা ছাত্রদের জন্য বোঝাস্বরূপ। ফলে ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষার উদ্দেশ্যে পড়াশুনা না করে নকল করার মাধ্যমে পরীক্ষা নামের বৈতরণী পার হওয়ার চেষ্টা করে।
প্রতিকারের উপায় : ‘সর্ব অঙ্গ ব্যথা ওষুধ দেব কোথা’ -কথাটি বর্তমান পাবলিক পরীক্ষাপদ্ধতির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। প্রধান প্রধান দুর্নীতির ক্ষেত্র নির্দেশ করতে হবে। পরীক্ষা দান কালে গণটোকাটুকির প্রবণতা একটি মারাত্মক দুর্নীতি। পরীক্ষায় দুর্নীতির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ছাত্রসমাজকে রক্ষার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পরীক্ষায় দুর্নীতি প্রতিরোধে নিম্নোক্ত উপায়গুলো সুপারিশ করা গেল :
শিক্ষাঙ্গনের সুস্থ পরিবেশ : ছাত্রদের সারা বছর পড়াশোনায় ও শিক্ষামূলক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত রেখে অশুভ রাজনীতি ও সন্ত্রাসের কালো হাত থেকে মুক্ত রাখতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যাতে সারা বছর বন্ধ না থাকে সে ব্যবস্থা করতে হবে। পরীক্ষা গ্রহণের পূর্বে অবশ্যই সিলেবাস শেষ করতে হবে। তাহলে পরীক্ষায় দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব হবে।
অভিভাবকের সচেতনতা বৃদ্ধি : সন্তান পড়াশুনা করছে কিনা তার খোঁজ অভিভাবককে অবশ্যই নিতে হবে। নকলবাজ সে নিজের সন্তান হোক বা যেই হোক অভিভাবকের উচিত তাকে অনুৎসাহিত করা। তবেই নকল রোধ করা সম্ভব হবে।
শিক্ষকদের যথাযথ দায়িত্ব পালন : শিক্ষকরা অনেক সময় পরীক্ষার হলে নকল দেখেও না দেখার ভান করেন। তাদের এ মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হলে পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে না দেওয়া। তাছাড়া শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের ব্যাপারেও তাদের যত্নশীল ও দায়িত্বপরায়ণ হতে হবে।
পরীক্ষাকেন্দ্র পরিবর্তন : বর্তমানে যেভাবে শহরাঞ্চলে এক কলেজের কেন্দ্র অন্য কলেজে স্থানান্তরিত করা হয় তেমনি জেলা, থানা ও গ্রামাঞ্চলের পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোকেও স্থানান্তর করতে হবে। প্রশাসন ক্ষেত্রে শিক্ষকদের নিরাপত্তার ব্যাপারেও যথেষ্ট সক্রিয় হতে হবে। প্রায়ই দেখা যায় নকল সরবরাহে সহযোগিতা করতে না চাইলে অথবা কোনো শিক্ষক যথেষ্ট কর্তব্যপরায়ণ ও পরীক্ষার হলে কড়াকড়ি করলে পরবর্তীতে তাকে শারীরিক নির্যাতনসহ মৃত্যু পর্যন্ত বরণ করতে হয়। কাজেই শিক্ষকদের নিরাপত্তার ব্যাপারেও সরকারকে যথেষ্ট সহযোগিতা দান করতে হবে। পরীক্ষাকেন্দ্র কমিয়ে এনে যথাসম্ভব কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
পাঠ্যসূচির পরিবর্তন : গতানুগতিক ধারা পরিহার করে উন্নত বিশ্বের মত যুযোপযোগী ও বাস্তবমুখী পাঠ্যসূচি পরিবর্তনের মাধ্যমে শিক্ষাকে অধিকতর উন্নত ও কল্যাণময় করতে হবে।
পরীক্ষাপদ্ধতির আধুনিকায়ন : নকল রোধের জন্য বর্তমানে প্রচলিত পরীক্ষাপদ্ধতিতে অবশ্যই পরিবর্তন আনতে হবে। প্রচলিত ধারার পরিবর্তে এমনভাবে প্রশ্নপত্র তৈরি করতে হবে যাতে পরীক্ষার্থীরা নকল করার সুযোগ না পায়। বোর্ডে পশ্নপত্র বিষয়ক গবেষণা ও প্রশ্নপত্র প্রণয়নের জন্যে একটি সেল থাকবে। এর দায়িত্ব হবে পরীক্ষার মূল লক্ষ্য অর্জনের জন্যে নতুন ধারার প্রশ্নপত্র তৈরি করা, যাতে নকলপ্রবণতা রোধ করা যায়। উত্তরপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রে যথাযথ দুর্নীতিমুক্ত পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে।
উপসংহার : পরীক্ষায় দুর্নীতি সমাজ তথা জাতির জন্য এক বিরাট অভিশাপ। এ অভিশাপ থেকে দেশ ও জাতিকে অবিলম্বে বাঁচাতে না পারলে অচিরেই জাতি অবনতির অতল গর্ভে তলিয়ে যাবে। তবে হঠাৎ করে ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষার হল থেকে বহিষ্কার করে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে না। এর জন্য প্রয়োজন ছাত্র-শিক্ষক, অভিভাবক ও সরকারের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। সর্বোপরি বেতার, টেলিভিশন ও পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে নকলের বিরুদ্ধে প্রচারকার্য চালিয়ে জনমত সৃষ্টি করা হলে নকলমুক্ত পরীক্ষা সম্পন্ন করা অনেকাংশ সম্ভব হবে।
[ একই প্রবন্ধ আরেকটি বই থেকে সংগ্রহ করে দেয়া হলো ]
ভূমিকা : সব স্থানে ভেজাল- দুধে ভেজাল, ঘি-তে ভেজাল, তেলে ভেজাল, ওষুধে ভেজাল, হাটে ভেজাল, মাঠে ভেজাল এমনকি শিক্ষাঙ্গনেও আছে ভেজাল। কিন্তু সবচেয়ে মারাত্মক ও সুদূরপ্রসারী ক্ষতিকর হলো পরীক্ষায় ভেজাল। একে অপর কথায় নকল বলা চলে। তা ছাড়া ভেজাল হয় সমজাতীয় বা সমগুণ মিশ্রণে। কিন্তু শিক্ষা হলো নীতির ব্যাপার। নীতির ওপর দুর্নীতির মিশ্রণ হতে পারে না। কারণ এই বিপরীত ধর্মী দুই বন্তুর মিশ্রণ অবান্তর। তাই পরীক্ষায় নকল একটি অবান্তর কারসাজী মাত্র।
বর্তমান পরীক্ষা পদ্ধতি : বর্তমানে প্রাচীন পদ্ধতির পরীক্ষা আমাদের দেশে একটা প্রহসনে পরিণত হয়েছে। বিগত কয়েক বছরের মধ্যে সামাজিক জীবনে দুর্নীতির সাথে সাথে পরীক্ষায় দুর্নীতি আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক নির্বিশেষে সবারই মূল উদ্দেশ্য ছাত্রদের পরীক্ষায় সাফল্য। যেকোনো উপায়ে পাশ নামের একটা সার্টিফিকেট বাগানোই তাদের উদ্দেশ্য। এই উদ্দেশ্যের অনুপ্রেরণায় পরীক্ষা দিতে বসে পরীক্ষার্থীরা নির্বিচারে টোকাটুকি করছে এবং শুভানুধ্যায়ীরা সে টোকাটুকির উপকরণ সরবরাহ করছে।
পরীক্ষায় দুর্নীতির কারণ : পরীক্ষায় দুর্নীতির জন্য অনেকে ছাত্রদের নৈতিক অধঃপতনকে দায়ী করেন। কিন্তু এ ব্যাপারে শুধু ছাত্রসমাজই দায়ী নয়, সরকার থেকে আরম্ভ করে গোটা সমাজ ব্যবস্থা এর জন্য দায়ী। যেমন-
(১) আর্থ-সামাজিক অবস্থা : একজন অভিভাবক পরীক্ষায় দুর্নীতি রোধে উচ্চকণ্ঠ, অথচ তার নিজের সন্তান যখন দুর্নীতির আশ্রয় নেয়, তখন সে নির্বাক। অভিভাবক রোদ-বৃষ্টি মাথায় করে নকল সরবরাহ করছে এ দৃশ্য পরীক্ষার হলে নিত্যনৈমিত্তিক চোখে পড়ে। তা ছাড়া অনেক সময় দেখা যায় অভিভাবকরা সন্তানের লেখাপড়ার খোঁজ নেন না। ছাত্র-ছাত্রীও সুযোগ পেয়ে পড়ালেখা না করে পরীক্ষার হলে দুর্নীতির আশ্রয় নেয়।
(২) ছাত্রদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা : ছাত্রদের প্রধান কাজ হলো পড়াশুনা করা। কিন্তু দেখা যায় ছাত্ররা পড়াশুনার পরিবর্তে রাজনীতি নিয়েই বেশি সময় মেতে থাকে। তারা ভাবে পরীক্ষার আগে পড়লেই পাস করা যাবে। ফলে ভালোভাবে প্রস্তুতি না নিয়ে পরীক্ষা দিতে যায়। শেষপর্যন্ত পরীক্ষায় পাস করার জন্য নকলের আশ্রয় নেয়।
প্রতিকারের উপায় : পরীক্ষায় দুর্নীতির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে দেশকে রক্ষার জন্য প্রতিকারের উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রতিকারের নিম্নোক্ত উপায়গুলো সুপারিশ করা গেল :
(১) শিক্ষাঙ্গনে সুস্থ পরিবেশ : ছাত্রদের সারা বছর পড়াশুনায় ব্যস্ত রেখে অশুভ রাজনীতি ও সন্ত্রাসের কালো হাত থেকে মুক্ত রাখতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যাতে সারা বছর বন্ধ না থাকে সে ব্যবস্থা করতে হবে। পরীক্ষা গ্রহণের পূর্বে অবশ্যই সিলেবাস শেষ করতে হবে। তাহলে পরীক্ষায় দুর্নীতি রোধ করা সম্ভবপর হবে।
(২) অভিভাবকের সচেতনতা বৃদ্ধি : সন্তান পড়াশুনা করছে কিনা তার খোঁজ অভিবাবককে অবশ্যই নিতে হবে। নকলবাজ সে নিজের সন্তান হোক বা যে কারো সন্তান হোক অভিভাবকের উচিত তাকে অনুৎসাহিত করা। তবেই নকল প্রতিরোধ করা সম্ভবপর হবে।
(৩) শিক্ষকদের যথাযথ দায়িত্ব পালন : শিক্ষকরাও অনেকসময় পরীক্ষার হলে নকল দেখেও না দেখার ভান করেন। তাদের এ মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। তা ছাড়া শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের ব্যাপারেও তাদের যত্নশীল ও দায়িত্ব পরায়ণ হতে হবে।
(৪) পরীক্ষা কেন্দ্র পরিবর্তন : বর্তমানে শহরাঞ্চলে যেভাবে এক কলেজের কেন্দ্র অন্য কলেজে স্থানান্তরিত করা হয় তেমনি জেলা, থানা কেন্দ্রগুলোতে করতে হবে।
(৫) পাঠসূচির পরিবর্তন : গতানুগতিক ধারা পরিহার করে উন্নত বিশ্বের মতো যুগোপযোগী ও বাস্তবমুখী পাঠ্যসূচি প্রবর্তনের মাধ্যমে শিক্ষাকে অধিকতর উন্নত ও কল্যাণময় করতে হবে।
(৬) পরীক্ষা পদ্ধতির আধুনিকায়ন : নকল রোধের জন্য বর্তমানে প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতিতে অবশ্যই পরিবর্তন আনতে হবে। রচনামূলক প্রশ্নের পরিবর্তে কুইজ টাইপের প্রশ্ন করতে হবে, যাতে ছাত্র-ছাত্রীরা নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে উত্তর দিতে পারে। এতে বিকাশ ঘটবে মেধার ও মননের।
উপসংহার : ইমারসন বলেছেন, “নকল হচ্ছে আত্মহত্যার স্বরূপ”। সুতরাং পরীক্ষায় ছাত্রদেরকে নকল প্রবৃত্তি থেকে বিরত থাকতে হবে। এ ব্যাপারে দেশের প্রেসিডেন্ট হতে সাধারণ অভিভাবককে পর্যন্ত ভাবতে হবে। আজকের ছাত্র আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। সুতরাং তাদের জীবনের সর্বক্ষেত্রেই সৎ হতে হবে। পরীক্ষায় দুর্নীতি সৎ নাগরিক সৃষ্টি করে না, তা ছাত্র চরিত্রের মাঝে কু-প্রবৃত্তিকে চাঙ্গা করে তোলে।