অন্নের লাগি মাঠে
লাঙলে মানুষ মাটিতে আঁচড় কাটে।
কলমের মুখে আঁচড় কাটিয়া
খাতার পাতার তলে-মনের অন্ন ফলে।
ভাব-সম্প্রসারণ : মানুষের পরিপূর্ণ বিকাশের জন্যে দেহ ও মনের দুইয়ের পুষ্টি অপরিহার্য। মানুষের শারীরিকভাবে বাঁচার জন্যে চাই খাদ্য, আর মনের বিকাশের জন্যে চাই মনের খোরাক। সে খোরাক সে পায় সংস্কৃতিতে, জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা ও আনন্দ-বিনোদনের মাধ্যমে। দেহ ও মনের সুমঞ্জস বকাশ ও পরিণতির মধ্য দিয়েই মানুষের জীবন হয় উৎকর্ষমণ্ডিত।
খাদ্যের প্রয়োজনে কৃষক জমিতে লাঙল দেয়। তার শ্রমে ও ত্যাগে মাটির বুকে ফলে সোনার ফসল। সে ফসল মানুষকে খাদ্য জোগায়। মানুষকে অন্য প্রাণীর তুলনায় দিয়েছে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা। তাই মানসিক উৎকর্ষের জন্যে মানুষের চাই মনের খোরাক। মনের এই খোরাক মানুষ পায় বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে। মানুষের মনের এই খোরাক জোগানোর জন্যে নিরলসভাবে কাজ করে যান শিল্পী-সাহিত্যিকরা। তাঁরা তাঁদের লেখনী ও তুলির মাধ্যমে সৃষ্টি করেন নিত্যনতুন শিল্প ও সাহিত্যকর্ম। মানুষের মনের দুয়ারে শিল্প-সাহিত্যের আবেদন তাই চিরন্তন ও সুদূরপ্রসারী। তা মানুষকে দেয় আনন্দ, অপনোদন করে তার ক্লান্তি। দুঃসময়ে জোগায় সাহস, সংকটে দেয় প্রেরণা। শিল্পী-সাহিত্যিকরা ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে এবং কালিক চেতনার আলোকে মানুষের ভূমিকাকে করেন নতুন তাৎপর্যে ভাস্বর। নতুন মূল্যবোধে মানুষকে করেন উজ্জীবিত।
কৃষকের শ্রম সাধনার সমাহার কৃষি, শিল্পী-সাহিত্যিকদের সৃজন প্রক্রিয়ার সমাহার কৃষ্টি। কৃষকের লাঙল আর বুদ্ধিজীবীর লেখনী- এই দুয়ের শক্তিতে মানুষ বিশ্বজগতে অর্জন করেছে অবিসংবাদিত শ্রেষ্ঠ আসন। এই দুই হচ্ছে মানব সভ্যতার অন্তর্নিহিত চালিকাশক্তি এবং সেই সঙ্গে অস্তিত্বের ভিত্তি।