স্নেহের স্বভাব এই, অকারণে অনিষ্ট আশঙ্কা করে।
ভাবসম্প্রসারণ : মানুষ প্রেম-প্রীতি, ভালোবাসা, স্নেহ, মায়া-মমতার বাঁধনে আবদ্ধ। স্নেহ, মায়া-মমতার ভিতর দিয়ে মানুষের প্রকৃত মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটে। বস্তুত স্নেহ মানব জীবনের এক অসাধারণ গুণ। এই গুণের বলেই মানুষ জগৎ-জীবনকে প্রেম-প্রীতি ও ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করে মিলনমেলায় পরিণত করতে পেরেছে।
মানুষ সর্বদা কনিষ্ঠদের মঙ্গল কামনা করে। স্নেহ-ভালোবাসা যুক্তি মানে না; সে হৃদয়ের দাস, আবেগের বসে চলে। তাই মানুষ তার প্রিয়জনের জন্য উৎকণ্ঠিত থাকে।– সম্ভাব্য বিপদ-আপদে তার পাশে ছুটে যাওয়ার জন্য মানুষিকভাবে প্রস্তুত থাকে। যুক্তি দিয়ে এই মনোভাবকে ব্যাখ্যা করা যাবে না। এ হল প্রকৃতপক্ষে মনুষ্যত্ববোধের প্রকাশ-হৃদয়ের ভিতরে প্রিয়জনদের জন্য মমতার উৎসারণ। স্নেহের ক্রিয়া যত বেশি তীব্র হয়, মানসিক দৌর্বল্য তত বেশি বৃদ্ধি পায়। বয়ঃকনিষ্ঠরা হয় স্নেহভাজনের। বয়স্করা স্নেহভাজনের যেমন কল্যাণ কামনা করেন, তাদের তেমনি অমঙ্গল আশঙ্কায় কাতর হয়, আতঙ্কিত হয়। তাই গৃহী মানুষ স্নেহভাজনদের পদে পদে সতর্ক করে, সাবধান হতে পরামর্শ দেয়। দুর্ভাগ্যজনক কিছু ঘটে থাকলে সে বাস্তবসত্যের মুখোমুখি হতেই হয়, তবু স্নেহের ধর্মই হল তেমন কিছু মর্মন্তুদ দুঃখজনক দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা না থাকলেও অমঙ্গল আশঙ্কায় চঞ্চল ও বিচলিত করে স্নেহপ্রবণ মানুষকে। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত স্নেহ আনিষ্ঠের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। নিয়ত এ স্নেহের কারণেই স্নেহভাজন আত্মশক্তির সন্ধ্যান পায় না। ফলে সে আসল, ভীরু, দুর্বল ও পরনীর্ভরশীল হয়ে পড়ে।