যা রাখি আমার তরে মিছে তারে রাখি,
আমিও রব না যবে সেও হবে ফাঁকি,
যা রাখি সবার তরে, সেই শুধু রবে
মোর সাথে ডোবে না সে. রাখে তারে সবে।
ভাব-সম্প্রসারণ : মানব জীবনে যেমন ব্যক্তিগত স্বার্থ রয়েছে, তেমনি রয়েছে সার্বজনীন স্বার্থ। ব্যক্তিগত স্বার্থের দিকটি ক্ষুদ্র ও সীমিত গণ্ডিবদ্ধ। তাই দেখা যায়, মানুষের ব্যক্তিগত সম্পদ কেবল ব্যক্তিগত স্বার্থের গণ্ডিতে আবদ্ধ হলে ব্যক্তির মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তা গুরুত্ব হারায়। বিশ্বজনের কাজে না লাগলে সে সম্পদ কালের গর্ভে হারিয়ে যায়। পক্ষান্তরে মানুষের সম্পদ যদি সার্বজনীন স্বার্থে নিয়োজিত হয় তবে ব্যক্তির মৃত্যু ঘটলেও সম্পদ সংরক্ষণ ও কাজে লাগানোর দায়িত্ব বৃহত্তর মানবসমাজের হাতে বর্তায়। এবং সম্পদের কার্যকর সদ্ব্যবহার ঘটে। এমনি ভাবে মানুষ যদি আত্মস্বার্থের গণ্ডিতে নিজেকে আবদ্ধ রাখে তবে তার জীবন হয়ে পড়ে নিষ্ফল। পক্ষান্তরে সবার স্বার্থে আত্মনিয়োগ করতে পারলে মানুষের জীবন হয় সার্থক ও সফল। এই জন্যেই কবি বলেন-
যাঁরা সত্যিকারের মানুষ তাঁরা নিজের স্বার্র কেন্দ্রবিন্দুতে নিজেকে আচ্ছন্ন করে রাখেন না। তাঁরা জানেন,
আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে
আসে নাই কেহ অবণী পরে,
সকলের তরে সকলে আমরা
প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।
এই উপলব্ধিকে জগতে ধারণ করেছেন বিভিন্ন ধর্র মহান পুরুষরা। হজরত মুহম্মদ (স.) যীশু খ্রিস্ট, বুদ্ধদেব প্রমুখ ধর্ম প্রবক্তারা এই উপলব্ধিকেই লালন করেছেন এবং লালন করতে বলেছেন তাঁদের অনুসারীদের।
মানুষের সব সৃষ্টিকর্ম ও সম্পদ বৃহৎ জগতের কাছে নিয়োজিত করতে পারলেই সেগুলো স্বার্থক হয়। মানুষের জীবনও সফলতায় ভরে ওঠে।