ভাবসম্প্রসারণ : তাই আজ প্রকৃতির উপর আধিপত্য নয়, মানুষ গড়ে তুলতে চাইছে প্রকৃতির সঙ্গে মৈত্রীর সম্বন্ধ।

তাই আজ প্রকৃতির উপর আধিপত্য নয়,
মানুষ গড়ে তুলতে চাইছে প্রকৃতির সঙ্গে মৈত্রীর সম্বন্ধ।

ভাব-সম্প্রসারণ : মানুষের অস্তিত্ব প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু প্রকৃতির ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে মানুষ যে নিজের ধ্বংস ডেকে আনছে। মানুষ এখন বুঝতে পেরেছে যে, প্রকৃতির সঙ্গে শত্রুতা করে নয় তার সঙ্গে মৈত্রীর সম্পর্ক গড়ে তুলেই মানব-অস্তিত্বকে রক্ষা করতে হবে।

মানুষ প্রকৃতির সন্তান। একসময় প্রকৃতির কোলেই তার জন্ম। কিন্তু কাল পরিক্রমায় সংগ্রামশীল মানুষ একসময় প্রকৃতিকে নিয়ে এসেছে তার হাতের মুঠোয়। জয় করেছে সাগর, মাটি, আকাশ এমনকি মহাশূন্যও। প্রকৃতিকে ইচ্ছে মতো ব্যবহার ও পরিবর্তন করে সে গড়ে তুলেছে মানব সভ্যতা। এ জন্যে সে পাহাড়কে কেটে করেছে সমতল ভূমি, জলাভূমিকে করেছে ভরাট, বন উজাড় করে গড়েছে বসত, নদীর গতিপথকে নিয়ন্ত্রণ করেছে বাঁধ দিয়ে। কিন্তু জগতে সমস্ত ক্রিয়ারই এক ধরনের বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। প্রকৃতির সম্পদকে এভাবে যথেচ্ছা ব্যবহার করতে গিয়ে মানুষ নষ্ট করেছে প্রকৃতির ভারসাম্য, বিপন্ন করেছে জীবপরিবেশ। দূষিত হয়েছে বায়ু, মাটি, পানি। ফলত মানব সভ্যতার অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। সংকট আজ গোটা বিশ্বজুড়ে। সৌভাগ্যের কথা, মানুষ আজ এ সংকটের প্রকৃতি সম্পর্কে সচেতন। প্রকৃতির ওপর আধিপত্য ও তার যথেচ্ছা ব্যবহার যে চরম অকল্যাণকে ত্বরান্বিত করবে, এর জন্যে মানুষকে যে চরম মূল্য দিতে হবে মানুষ তা উপলব্ধি করতে পেরেছে। আর তাই মানুষ এখন বেছে নিয়েছে প্রকৃতির সঙ্গে মৈত্রীর সম্পর্ক গড়ার পথ। অরণ্য ধ্বংসের বদলে গ্রহণ করেছে অরণ্য সৃজনের পথ। প্রকৃতির নিয়মকে মান্য করেই প্রকৃতিকে সবচেয়ে মঙ্গলজনকভাবে ব্যবহারের দিকে আজ বিশ্বব্যাপী সচেতনা বাড়ছে।

বস্তুত, নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার পাশাপাশি সভ্যতাকে এগিয়ে নিতে হলে চাই প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা এবং তার পরিবেশ-সহায়ক ব্যবহার।


এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো


ভাব-সম্প্রসারণ : প্রকৃতির ওপর আধিপত্য নয়, বরং প্রকৃতির সঙ্গে সহযোগিতা করে তা থেকে উপকৃত হতে হবে।

পরিবেশ মানবসভ্যতার এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সভ্যতার ক্রমবিকাশ থেকেই মানুষ ধীরে ধীরে গড়ে তুলেছে তার পরিবেশ। মানুষের রচিত পরিবেশ তারই সভ্যতার বিবর্তন ফসল। পরিবেশই প্রাণের ধারক, জীবনীশক্তির যোগানদার। যুগে যুগে পরিবেশ বা পারিপার্শ্বিকের সঙ্গে প্রাণীর মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতার ওপরেও তার অস্তিত্ব নির্ভরশীল। পরিবেশ প্রতিকূল হলে তার ধ্বংস ও সর্বনাশ অবশ্যম্ভাবী। পরিবেশের বিরুদ্ধতা বেঁচে থাকার পথকে অবলীলাক্রমে রুদ্ধ করে। পরিবেশের ওপর সম্পৃক্ত হয়ে মানুষ, অন্যান্য উদ্ভিদ ও প্রাণী-জীবনের বিকাশ ঘটে। তাই পরিবেশ ও মানুষের মধ্যে রয়েছে এক নিবিড় যোগসূত্র। মানুষ একদিন প্রকৃতিকে জয় করার নেশায় মেতেছিল। প্রকৃতিকে জয় করেও মানুষের সেই নেশার অবসান হল না। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষ জলে স্থলে মহাশূন্যে আধিপত্য বিস্তার করল। কিন্তু মানুষের এই বিজয় মানুষকে আরও এক পরাজয়ের মধ্যে ফেলে দিল। আজ আমরা এক ভয়ঙ্কর সংকটের মুখোমুখি। এ সংকট কোনো বিশেষ দেশের নয়, বিশেষ জাতির নয়। এ সংকট আজ বিশ্ব জুড়ে। বিশ্বের পরিবেশ আজ নানাভাবে দূষিত। এই দূষণ আজ ভয়ঙ্কর ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সেই ভয়াবহ দিনের কথা স্মরণ করেই আজ বিশ্বের মানুষ এগিয়ে এসেছে। মানুষ প্রকৃতিকে বশীভূত করে তা থেকে উপকৃত হওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু প্রকৃতির ওপর যে কোনো উপায়ে আধিপত্য বিস্তার করে লাভবান হওয়া যাবে, এরকম একটি ধারণা ও আধিপত্যের জন্যে মানুষ বন কেটে বসত করেছে, মানুষ নদীর গতি অবরুদ্ধ করেছে। কিন্তু এমন ধারণা করে মানুষের কল্যাণ হয় নি। এতে পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হয়েছে। তাতে মানুষের জন্যে অকল্যাণ ঘটেছে। মানুষ তার এই কৃতকর্ম উপলব্ধি করতে পেরেছে। তাই তার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটেছে। এখন মানুষ বনায়নের দিকে দৃষ্টি দিচ্ছে। প্রকৃতির সঙ্গে বিরূপতার সম্পর্ক না রেখে তার সঙ্গে সহযোগিতা প্রদর্শন করে প্রকৃতি থেকে মানুষ উপকৃত হতে পারে। এখন মানুষ প্রকৃতির ওপর আধিপত্য দেখাতে চায় না, চায় প্রকৃতির সহযোগিতা।

প্রকৃতির দুর্যোগ মানবজাতিকে বিপর্যস্ত করে ফেলে। তার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার কার্যকর পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। এর জন্যে মানুষ প্রকৃতি থেকে সহযোগিতা লাভের চেষ্টা করলে যথার্থই উপকৃত হবে।


এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো


মূলভাব : প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক নিবিড় ও গভীর। প্রকৃতি মানুষের চিরন্তন বন্ধু।

সম্প্রসারিত ভাব : আদিকাল থেকে আজ পর্যন্ত প্রকৃতিই মানুষকে খাদ্য ও আশ্রয় দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে। প্রকৃতিকে দেখে মানুষ নানা কিছু শিখেছে, আবিষ্কার করেছে। পারস্পরিক সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি, সাহায্য-সহযোগিতা, মায়া-মমতা ভালোবাসা প্রভৃতি মানুষ প্রকৃতির কাছ থেকেই শিখেছে। ক্রমশ মানুষ সচেতন হয়েছে, নিজের শক্তি ও সম্ভাবনা সম্পর্কে জেনেছে। সত্য, ন্যায় ও সুন্দরকে ধারণ করতে শিখেছে, ক্রমশ গড়ে তুলেছে সভ্যতার নতুন নতুন সোপান। প্রকৃতির অকৃপণ দান গ্রহণ করে এবং নানা উপাদান কাজে লাগিয়েই মানুষ নিজেকে নির্মাণ করেছে সর্বশ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে। মানুষের অস্তিত্ব ও বিকাশ প্রকৃতির অনুগ্রহেরই দান। এমন উপকারী ও ত্যাগী বন্ধুর সঙ্গে কোনো বিরোধ বা শত্রুতা করা নিতান্তই অন্যায় কাজ। আমাদের টিকে থাকার স্বার্থে প্রকৃতির সঙ্গে গভীর ও চিরন্তন মৈত্রীর সম্পর্ক অব্যাহত রাখাই কর্তব্য। আধিপত্য শব্দটি জোর-জবরদস্তিরই নামান্তর। এর লক্ষ্য যদি যথার্থ উপকার বা কল্যাণ হয় তাহলে তা অবশ্যই সাদরে গ্রহণযোগ্য। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা হয় অকল্যাণ বা ধ্বংসের উৎস, চূড়ান্ত ক্ষতির কারণ। কারণ আধিপত্যের পেছনে সক্রিয় থাকে মানুষের অফুরন্ত লোভ লালসা, হিংসা, স্বার্থপরতা, নীচ মানসিকতা। আধিপত্য কেবল হত্যা, লুটপাট, ধ্বংসকেই উস্কে দেয়। অতীত ইতিহাস আর বর্তমান ঘটনাবলি তারই সাক্ষ্য দেয়। নির্বোধ, অপরিণামদর্শী মানুষ প্রকৃতিকে কাজে লাগাতে গিয়ে ধ্বংস করছে। নির্বিচারে গাছ কেটে বৃক্ষ নিধন করে সবুজ প্রকৃতিকে নষ্ট করছে। রুপালি নদী-জলাশয়, উর্বর মাটি পরিবর্তিত হচ্ছে। মানুষ বায়ুদূষণ ঘটিয়ে পৃথিবীর ছাদ ‘ওজোন স্তর’ নষ্ট করছে। ফলে প্রকৃতির প্রধান উপাদানগুলোর আন্তসম্পর্কে চিড় ধরেছে। বিনষ্ট হচ্ছে জীবজগতের আন্তসম্পর্ক ভারসাম্য। এসব কারণে হারিয়ে যাচ্ছে নানা প্রজাতির গাছ পালা, পশু-পাখি, নদী, পাহাড় এর প্রভাব বিপর্যস্ত হচ্ছে মাটি, পানি ও বায়ু। অন্যদিকে যুদ্ধ-বিগ্রহ, পারমাণবিক বিস্ফোরণ, উপগ্রহ উৎক্ষেপণ, নানা যন্ত্র ও প্রযুক্তির ব্যবহার পৃথিবীকে অস্থির করে তুলেছে। আর এসবের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব পড়ছে প্রকৃতির ওপর। প্রকৃতির ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে তা বুমেরাং হয়ে ফিরে আসছে মানুষেরই কাছে। মানুষ নিজেই নিজের অজান্তে তার বড় ক্ষতি করছে। আজ প্রকৃতির অস্তিত্ব বিপন্ন। যে প্রকৃতি মানুষকে সবকিছু দিয়েছে, আজও দিয়ে চলেছে, সেই প্রকৃতিকে মানুষ ভয়ংকর করে তুলেছে। প্রকৃতির ওপর এই আধিপত্য ও আগ্রাসন বন্ধ না করলে একসময় এই সুন্দর প্রকৃতি বিরূপ হয়ে উঠবে। তখন মানুষই হবে প্রকৃতির নির্মম শিকার। এ কারণে প্রকৃতি ধ্বংস না করে প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে।

সিদ্ধান্ত : তাই প্রকৃতির ওপর আধিপত্য নয়, প্রকৃতির সঙ্গে মৈত্রী গড়ে তোলাই মানুষের জন্য কল্যাণকর।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post