রচনা : জঙ্গিবাদের উত্থান ও জঙ্গি দমনে পরিবারের ভূমিকা

ভূমিকা : বর্তমান বিশ্বে একটি আলোচিত বিষয় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ। সারা বিশ্ব আজ কেঁপে উঠেছে জঙ্গিবাদের হামলায়। অরক্ষিত এবং সহজেই লক্ষ্যভুক্ত করা যায় এমন মানুষের ওপর জঙ্গি হামলা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এসব জঙ্গি হামলায় জড়িত অধিকাংশই শিক্ষিত তরুণ-তরুণী। বিপথে যাওয়া এসব তরুণ-তরুণীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব পরিবারকেই নিতে হবে। পারিবারিক সচেতনতা ও সন্তানের প্রতি মা-বাবার সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণের দ্বারাই জঙ্গিবাদ দমন করা সম্ভব। 

জঙ্গির ধারণা : সন্ত্রাসবাদ নানা ধরনের হতে পারে। তবে সন্ত্রাসবাদকে মূলত চারভাগে ভাগ করা যায়। যথা – ১. রাজনৈতিক, ২. সামাজিক, ৩. ধর্মীয় ও ৪. মনস্তাত্ত্বিক। উল্লেখ্য, ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদকেই মূলত জঙ্গি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। জঙ্গিরা আক্রমণাত্মক ও হিংসাত্মক উপায়ে রাষ্ট্রে বা সমাজ অনুমোদিত কোনো সংস্কারের সমর্থনে সমবেতভাবে কাজ করে। তারা নিজেদের উদ্দেশ্য পূরণে কোনো রাজনৈতিক ধারণা প্রতিষ্ঠায় চরম ও হিংসাত্মক পন্থার আশ্রয় নেয়। যারা ধ্বংসাত্মক কাজে অংশগ্রহণের জন্য চাঁদা প্রদান, চাঁদা সংগ্রহ, পরিকল্পনা গ্রহণ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কিংবা এ কাজে সহায়তা করে তারাও জঙ্গি হিসেবে পরিচিত। জাতিসংঘ ২০০৪ সালে সন্ত্রাসবাদের একটি সংঙ্গা প্রদান করে- ‘যে কাজ সাধারণ ও অসামরিক নাগরিকদের মৃত্যু ঘটানোর জন্য বা গুরুতরভাবে আহত করার জন্য ব্যবহার করা হয়, তাই সন্ত্রাসবাদ। এর উদ্দেশ্য হলো কোনো একটি জনগোষ্ঠীকে বা সরকারকে বা কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থাকে কিছু করতে বাধ্য করা বা কিছু করা থেকে বিরত হতে বাধ্য করা। 

জঙ্গিদের কার্যক্রম : জঙ্গিবাদ নানা কারণে হতে পারে তবে বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর রাজনৈতিক কিংবা ধর্মীয় অধিকার বা স্বার্থের কারণে গোষ্ঠী চেতনা থেকে জঙ্গি উন্মাদনার জন্ম হয়। দেশের মধ্যে নৈরাজ্য সৃষ্টির উদ্দেশ্যেও জঙ্গি কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতে পারে এবং এ নৈরাজ্য সৃষ্টির জন্য কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও লুকিয়ে থাকতে পারে। জঙ্গিরা বিশেষ উদ্দেশ্য পূরণে তাদের সংগঠন প্রণীত ধর্মীয় বা রাজনৈতিক ধারণা বা দর্শন সমাজ বা রাষ্ট্রীয় জীবনে প্রবর্তন করতে চায়। এ লক্ষ্যে তারা তাদের ধারণা প্রচারের জন্য লিফলেট, পোস্টার, পুস্তিকা ব্যবহারসহ বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে। অনেক সময় তাদের দ্বারা সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ বা ধ্বংসাত্মক কাজে প্রচার মাধ্যমে স্বীকারোক্তিমূলকভাবে প্রকাশ করে। তথ্যপ্রযুক্তির আধুনিক প্রচার যেমন- ইমেইল, মোবাইল, ফেসবুক, টুইটার প্রভৃতি ব্যবহার করে তারা তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। জঙ্গিদের ধারণা তারা সঠিক পথে পরিচালিত হচ্ছে, তারা সবসময়ই একরোখা মনোভাব পোষণ করে। জঙ্গিরা নিজেদের অবস্থানকে বাস্তবায়ন করার জন্য নানা ধরনের অপকর্মে লিপ্ত হয়। তাদের মত বা মতাদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে তারা পরিবার, সমাজ বা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেও অবস্থান নেয়। সে বিষয়টি রাষ্ট্র বা সমাজ অনুমোদিত হোক বা না হোক জঙ্গিরা তার তোয়াক্কা করে না। রাষ্ট্রে বিদ্যমান আদর্শ, মূল্যবোধ, নিয়ম-নীতি, বিধি-বিধান তারা মানতে চায় না। জঙ্গিরা তাদের কর্মকাণ্ডে বোমা, গুপ্ত হত্যায় ব্যবহৃত স্থল মাইন, গ্রেনেডসহ সামরিক অস্ত্র এবং অনেক ক্ষেত্রে আধুনিক মারণাস্ত্রও ব্যবহার করে। জঙ্গিরা ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত হবার জন্য বিমান পর্যন্ত ছিনতাই করে এবং তা ব্যবহার করে ব্যাপক ধ্বংসাত্মক কর্ম চালায়। 

জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদে বৈশ্বিক সমস্যা : জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ার, পেনসিলভানিয়া স্টেট ও ভার্জিনিয়া স্টেটে বিমান হামলা বিশ্বকে সন্ত্রাসবাদের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এ বিমান হামলায় মারা যায় প্রায় ২৯৯৬ জন। গবেষকদের ধারণা এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে সন্ত্রাসীগোষ্ঠীরা ব্যয় করেছিল ৫ লক্ষ ডলার অপরদিকে বিশ্বের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছিল ১২ বিলিয়ন ডলার। সম্প্রতি ফ্রান্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বেলজিয়াম, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হামলা ঘটেছে। ২০১৬ সালের ১৪ জুলাই ফ্রান্সের জাতীয় দিবসে আনন্দ উল্লাসকারী অসংখ্য মানুষের ওপর ট্রাক চালিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালায় জঙ্গিরা। এতে ৮৪ জন লোক প্রাণ হারান এবং অসংখ্য লোক আহত হন। ২০১৬ সালের ২২ মার্চ বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে, ২৮ জুন ২০১৬ তুরস্কের আর্তাতুক বিমানবন্দরে নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালায় জঙ্গিরা। ৩১ মে ২০১৭ আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের সুরক্ষিত কূটনৈতিক পাড়ায় সন্ত্রাসীরা শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণ ঘটালে নিহত হয় ১৫০ জন। ২ জুন ২০১৭ ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিয়ায় ওয়ার্ল্ড ম্যানিলা রিসোর্টে এক বন্দুকধারীর গুলিবর্ষণে নিহত হয় ৩৭ জন। তাছাড়া ২০১৭ সালের ৩ জুন লন্ডনের কেন্দ্রস্থলে পৃথক দুটি স্থানে সন্ত্রাসী হামলায় ১১ জন মানুষ প্রাণ হারায়। ধরন ও বাস্তবায়ন পদ্ধতিতে ভিন্নতা থাকলেও এসব জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড একই সূত্রে গাঁথা। জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদী এসব হামলার ৮০ – ৯০ শতাংশই ঘটে অভ্যন্তরীণভাবে। জঙ্গিদের প্রস্তুত করার জন্য ব্যাপক গোপন সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তাদের যোগাযোগ রয়েছে সমগ্র বিশ্বজুড়ে এবং এ ধরনের যোগাযোগ তারা গোপনীয়তা বজায় রাখে। 

বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা : বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের যে নমুনা আমরা এখন দেখছি, তা কিন্তু হঠাৎ করে শুরু হয়নি। উদীচী, সিপিবি, ছায়ানটের সমাবেশে বোমাবাজি, সিনেমা হলে, গির্জায়, জুমার নামাজে, আদালতে হামলা অনেক বছর আগেই হয়েছে। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট ৬৩ জেলায় যখন একসঙ্গে বোমা ফাটানো হয়, তখন এটা রীতিমতো চাঞ্চল্যকর বিষয় ছিল। সম্প্রতি ঢাকার গুলশান (১ জুলাই ২০১৬) ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া (৭ জুলাই ২০১৬) হামলার ঘটনা যেন জাতির জন্য অশনি সংকেত। গুলশানের হোলি আর্টিজেন রেস্তোঁরায় হামলা করে বিদেশি নাগরিকসহ ২৮ জনকে বীভৎসভাবে খুন করা হয় এবং শোলাকিয়ায় হামলার ঘটনায় ২ জন পুলিশ সদস্যসহ ৩ জন নিহত ও আরো কয়েকজন আহত হন। ভবিষ্যতে এর চেয়েও বড় ধরনের হামলার ইঙ্গিতবহ বলে মনে করছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলাবাহিনী রাজধানীর কল্যাণপুর, সিলেটের আতিয়া মহল, মৌলভীবাজার, টঙ্গী, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ইত্যাদি জায়গায় জঙ্গিবাদ দমনে সফল হয়েছে। জঙ্গিবাদ দমনে সরকারকে আরো দায়িত্বশীল ও কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে। গড়ে তুলতে হবে পারিবারিক সচেতনতা। পারিবারিক সচেতনতা গড়ে তুলতে পারলে জঙ্গিবাদ কোনোভাবেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না। 

জঙ্গি দমনে পরিবারের ভূমিকা : বর্তমানে জঙ্গি হামলায় জড়িত অধিকাংশই তরুণ-তরুণী। জঙ্গি ও জঙ্গিবাদের প্রভাবে এসব তরুণ-তরুণীরা বিপথে যাচ্ছে। এর পিছনে ইসলাম ধর্মের বিকৃত ও মনগড়া ব্যাখ্যাদানকারী উগ্রবাদীদের প্ররোচনা ও পরিকল্পনা রয়েছে। আবার অনেকের মতে, ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতি প্রশ্রয় পাওয়ার জন্যও জঙ্গিবাদী প্রবণতা বেড়ে চলেছে। আদর্শের তাড়না এমন একটা শক্তি যা একজন তরুণকে চরম পন্থার দিকে নিয়ে যেতে পারে। সে আদর্শ হতে পারে জাতীয়তাবাদ, কমিউনিজম বা ধর্মরাষ্ট্র। তবে তরুণরা যেভাবে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ছে তা থেকে রক্ষা বা বেড়িয়ে আসতে পরিবারই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কেননা একটি সন্তানের ওপর তার পরিবারের শিক্ষা সারা জীবন প্রভাব ফেলে। যেকোনো বিষয়েই পরিবারের ভিতরে সমাধান পাওয়া যায় সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির সাথে। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম রেঞ্জের পুলিশের ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম বলেছেন- ‘জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে বাবা-মাকেই বেশি ভূমিকা রাখতে হবে। প্রত্যেক পরিবার যদি তাদের সদস্যদের ব্যাপারে সচেতন হন তাহলে সন্তানরা জঙ্গিবাদে জড়াবে না।’ 

শিশুর বেড়ে ওঠার অন্যতম প্রধান ও নির্ভরযোগ্য জায়গা হচ্ছে পরিবার। পরিবারের প্রধান অর্থনৈতিক কাজে ব্যস্ত থাকায় সন্তানের জন্য তার যথেষ্ট সময় থাকে না তথাপি অন্যান্য সদস্যরাও যদি শিশুর প্রতি উদাসীন থাকে তবে সে শিশু পথভ্রষ্ট হয়ে পড়ে। পারিবারিক বন্ধন অটুট না থাকার কারণে শিশু অনেক সময় অবাঞ্ছিত অভ্যাস ও আচরণ রপ্ত করে ফেলে। পরিবার একটি শিশুর মনোজগৎ ও ব্যক্তিত্ব তৈরি করতে সহযোগিতা করে। ছেলে-মেয়েরা ঠিকমতো স্কুল-কলেজে যাচ্ছে কিনা এবং পড়াশোনায় তাদের মনোযোগ আছে কিনা সেদিকেও মা-বাবাকে খেয়াল রাখতে হবে। তবে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা, শরীরচর্চা, সুকুমারবৃত্তির অনুশীলনের জন্য পরিমিত ব্যবস্থা আছে কিনা সেদিকেও মা-বাবাদের দৃষ্টি রাখতে হবে। সন্তানরা যখন বড় হতে থাকে তখন মা-বাবা ও অভিভাবকদের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে তারা কোথায় যায় এবং কাদের সঙ্গে মিশে সেদিকে নজর রাখা। তবে খেয়াল রাখতে হবে, এ কাজটি যেন ছেলে-মেয়েদের মৌলিক স্বাধীনতা ও স্বকীয়তা ক্ষুণ্ণ না করে। 

মাদকাসক্ত ও জঙ্গি মানসিকতার মানুষের সঙ্গে যদি কেউ মেলামেলা করছে বলে জানা যায় তবে তা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা পরিবারকেই নিতে হবে এবং নিজেদের দ্বারা তা সম্ভব না হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাকে জানাতে হবে। কেননা জঙ্গি কোনো না কোনো পরিবারের সদস্য তাই পারিবারিক সচেতনতা থাকলে সেখানে জঙ্গিবাদের মতো কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে না। তবে জঙ্গিবাদ দমনে পরিবারকে সন্তানের প্রতি বন্ধুসুলভ আচরণ করতে হবে। দূরত্ব ভুলে ভালোবাসা ও সম্প্রীতিতে গড়ে তুলতে হবে পুরো সংসার। এভাবে একদিন জঙ্গি নামক ক্যান্সারের ভাইরাস থেকে মুক্ত হবে আমাদের সমাজ। 

জঙ্গিবাদের প্রভাব ও প্রতিরোধ : রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক জীবনে জঙ্গি কর্মতৎপরতার প্রভাব ভয়াবহ ও মারাত্মক। জঙ্গি কর্মতৎপরতার কারণে একটি দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হতে পারে। তাছাড়া জঙ্গি কার্যক্রম আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা প্রতিকূলতা সৃষ্টি করতে পারে। মানুষের জীবনযাত্রা অচল হয়ে যেতে পারে। আমরা বিশ্বের বহু দেশের জঙ্গিদের দ্বারা সংঘটিত অনেক অপরাধ কর্ম সম্পর্কে কম-বেশি জানি। আমেরিকার টুইন-টাওয়ার ধ্বংসের কারণ এ জঙ্গিবাদ। হাজার হাজার মানুষকে হত্যাসহ বহু সম্পদ ধ্বংস হয়েছে এই জঙ্গিবাদে। আমাদের দেশে যশোর জেলায় উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর অনুষ্ঠানে এবং পহেলা বৈশাখে রমনা বটমূলে বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে নিরীহ শান্তিপ্রিয় মানুষকে হত্যা জঙ্গিদের কাজ। অনেক ক্ষেত্রে জঙ্গিরা এসব কাজে আত্মহুতি দিয়ে থাকে। একটি দেশে অব্যাহতভাবে জঙ্গি কার্যক্রম সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার জন্য হুমকিস্বরূপ। জঙ্গি কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নিজের পরিবারের জন্যও হুমকিস্বরূপ। অনেক ক্ষেত্রে জঙ্গিদের সংরক্ষিত বোমা বিস্ফোরণে একই সাথে বসবাসকারী মানুষজন, আবাসস্থল, প্রতিবেশীদের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে থাকে। মূলত এদের কোনো সুস্থ পারিবারিক জীবন থাকে না। পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্র এদেরকে অপরাধীর দৃষ্টিতে দেখে। অনেক সময় তাদের পরিবার এবং সমাজ জঙ্গিদের ঘৃণার চোখে দেখে। পরিবারের সকলকে এক্ষেত্রে সন্তানের আচরণ এবং কার্যক্রম সম্পর্কে অত্যন্ত সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। জঙ্গি কর্মতৎপরতার প্রতিরোধে ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন। সামাজিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে রাজনৈতিক কিংবা ধর্মীয় ধারণার সঠিক ব্যাখ্যা প্রদানের লক্ষ্যে জনগোষ্টীকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রচারপত্র, পোস্টার, লিফলেট ব্যবহার করা যেতে পারে। তাছাড়া ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে আলোচনাসভার মাধ্যমে এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা যেতে পারে। সুস্থ পারিবারিক এবং সামাজিক জীবন গঠনের উপর বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জঙ্গিদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা যেতে পারে। 

এছাড়া জঙ্গিবাদ রোধে আরো যেসব পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। 
১. ধর্মীয় উগ্রবাদ সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। 
২. সন্ত্রাস প্রতিহত করার জন্য কঠোর আইনের ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং তার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। 
৩. আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর আধুনিকীকরণ ও বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। 
৪. সন্ত্রাসীদের আয়ের উৎস নির্মূল করতে হবে। 
৫. যেসব গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠান সন্ত্রাসকে মদদ দেয় তাদের শক্ত হস্তে দমন করতে হবে। 
৬. দেশের সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। 
৭. সন্ত্রাস দমনে এক দেশ অন্য দেশের সাথে তথ্য বিনিময়ের মাধ্যমে একযোগে কাজ করতে হবে। 
৮. বেকারত্ব, মদক, অশিক্ষা, দারিদ্র্যতা ইত্যাদি সামাজিক অসঙ্গতি দূর করতে হবে। 
৯. দেশে সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। 
১০. সবিশেষে বলা যায় জঙ্গি দমনে অবশ্যই পরিবারের ভূমিকা প্রথম এবং প্রধান। 

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, জঙ্গিবাদের নামে এ যুদ্ধ-বিগ্রহ, হত্যা-হানাহানি বা ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড কখনোই বিশ্ব মানবতার জন্য কাম্য নয়। জঙ্গিবাদ এভাবে চলতে থাকলে তা একসময় গোটা বিশ্বকে গ্রাস করে ফেলবে। তাই সকলকে এক হয়ে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে। জঙ্গির কালো থাবা থেকে দেশ ও বিশ্বকে বাঁচাতে হবে। আর এক্ষেত্রে পরিবারকেই প্রথম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post