ভূমিকা : সংবাদপত্রের পাতা খুললে বা টিভির সংবাদের দিকে চোখ রাখলে প্রায় প্রতিদিনই চোখে পড়ে ধর্ষণ সংক্রান্ত খবর। এ সংক্রান্ত খবর পড়তে পড়তে দেশের জনগণ যেন আজ রীতিমতো বিষিয়ে উঠেছে। এ দেশে ধর্ষণের হাত থেকে প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে, গৃহবধু, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রী থেকে শুরু করে কোমলমতি শিশু পর্যন্ত রেহাই পাচ্ছে না। শুধু তা-ই নয়, অনেক সময় তথাকথিত অনেক হুজুর দ্বারাও মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রী ধর্ষণ বা বলাৎকারের স্বীকার হয়। আর বিয়ের প্রলোভন দেখিয়েও ধর্ষণ করার ঘটনাতো সমাজে অহরহই ঘটে চলেছে। অনেক সময় দেখা যায়, কোন মেয়ে ধর্ষণের শিকার হলে সমাজ ও মান-সম্মানের ভয়ে ধর্ষণের বিষয় কাউকে জানান না। তখন বিষয়টি লোকচক্ষুর অন্তরালেই থেকে যায়। আবার অনেক সময় এ-ও দেখা যায়, ধর্ষণ করার ঘটনা ধর্ষক বা তার সহযোগী কর্তৃক ভিডিও আকার ধারণ করে ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে কিংবা ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার ভয়-ভীতি দেখিয়ে ওই মেয়েকে পুনঃ ধর্ষণ করা হচ্ছে কিংবা তাঁর কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা নেওয়া হচ্ছে। একজন মেয়ে যখন ধর্ষণের শিকার হন, তখন তাঁর মানসিক অবস্থা কেমন হতে পারে, তা কি সকলের ভেবে দেখা উচিৎ নয়? পাশাপাশি ওই মেয়েটিকে বা ওই মেয়েটির পরিবারকে আমাদের ‘সমাজ’-ই বা কোন চোখে দেখে থাকে, তা কি আমরা ভেবে দেখি? আমরা কি ভেবে দেখেছি, একজন মেয়ে যখন ধর্ষণের শিকার হন, তখন তাঁর সারা জীবনের লালিত স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। ধর্ষণের ওই ঘটনা তাঁকে তাড়া করে বেড়ানোর ফলে তাঁর মানসিক শান্তি থাকে না। থাকে না ভালোভাবে বাঁচার স্বপ্ন এবং শেষ পর্যন্ত তাঁর আত্মবিশ্বাসটুকুও দিনে দিনে লোপ পেতে থাকে। সর্বোপরি ধর্ষণের শিকার মেয়েটি মানসিকভাবে এমন অশান্তি এবং যন্ত্রণাময় জীবন অতিবাহিত করেন যে, তিনি যেন জীবিত থেকেও মৃত। আবার অনেক সময় অনেক মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়ে অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যা পর্যন্ত করতে বাধ্য হন। অনেক সময় দেখা যায়, ধর্ষণের মতো ফৌজদারী অপরাধ, ন্যাক্কারজনক ও জঘন্য ঘটনা ঘটলেও ধর্ষিতা কিংবা তাঁর পরিবার ন্যায়বিচারটুকু পর্যন্ত পাচ্ছেন না। একটি স্বাধীন, সভ্য ও গণতান্ত্রিক দেশে এর চেয়ে বড় লজ্জার, দুঃখের ও আশ্চর্যের বিষয় আর কি হতে পারে?
সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষণের একটি পরিসংখ্যান : পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, দেশে প্রতিবছর এক হাজারেরও বেশি নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। শুধু চলতি বছরেই নয়, বিগত বছরগুলোতেও দেশে শিশু ধর্ষণ, হত্যা ও নির্যাতনের চিত্র ছিল ভয়াবহ। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন নামক ওই বেসরকারি সংস্থা কর্তৃক সম্প্রতি প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, গত ২০১৮ সালে ধর্ষণের শিকার হওয়া মোট ৩৪৫টি সংবাদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা ৩৫৬, যার মধ্যে গেছে ২২ জন এবং আগত হয়েছে ৩৩৪ জন। প্রকাশিত ওই রিপোর্টে বলা হয়, শিশুরা প্রতিবেশি, উত্যক্তকারী, বন্ধু, আত্মীয়-স্বজন, শিক্ষক বা অপরিচিত ব্যক্তির দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে উত্যক্তকারী দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১১০ জন আর প্রতিবেশি দ্বারা ১০২ জন।
গণধর্ষণের শিকার ৩৭ জন, শিক্ষক দ্বারা সতের জন। এছাড়া গত বছর ৫৩টি শিশু ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়েছে যাদের প্রত্যেকেই আহত হয়েছে। প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা যায়, গত বছর ধর্ষণ ছাড়া আরো ৭৭টি শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে এবং এর মধ্যে মারা গেছে একজন। ওই রিপোর্টে বলা হয়, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে মোট ২৭৬টি শিশু হত্যা ও হত্যা চেষ্টার শিকার হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছে ২২৭ জন। এ পরিসংখ্যান থেকে এটা স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে যে, আমরা যেন কোনভাবেই শিশু ধর্ষণের লাগাম টেনে ধরতে পারছি না। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, দেশে প্রায় ৭০% শিশু তার প্রতিবেশি, আত্মীয়, বন্ধু ও তাদের শিক্ষক দ্বারা ধর্ষণ, হত্যা ও যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অপর এক পরিসংখ্যানে দেখা যেগে, ২০১২-২০১৬ পর্যন্ত দেশে ১৩০১ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে; যার মধ্যে প্রতিবন্ধী, গৃহকর্মী ও স্কুলছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের প্রদত্ত তথ্যানুযায়ী, ২০১২ সালের শুরু থেকে ২০১৫ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত এদেশে সাড়ে নয়শরও বেশি শিশু নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১২ সালে ২০৯টি, ২০১৩ সালে ২১৮টি এবং ২০১৪ সালে ৩৫০টি শিশু খুনের ঘটনা ঘটে। ২০১৫ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত শিশু খুনের ঘটনা ঘটে ১৯১টি।
ধর্ষণের কারণসমূহ : ধর্ষণের কারণসমূহ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় :
১. ধর্ষণকারীদের মধ্যে বিন্দুমাত্র অপরাধবোধ না থাকার কারণ নির্দ্বিধায় ধর্ষণ করতে উদ্যোগী হচ্ছে।
২. সামাজিক ও ধর্মীয় বিধি-নিষেধের এ দেশে বিয়ের আগে যৌনসঙ্গম কেউ তেমন একটা করতে পারেন না।
৩. দেশের বিভিন্ন জায়গায় বেশ কিছু পতিতালয় আছে। কিন্তু সেসব জায়গায় যাওয়ার মানসিকতা, সুযোগ এবং সামর্থ্য সবার থাকে না। তাছাড়া এক্ষেত্রে ধর্মীয় বিধি-নিষেধতো রয়েছেই।
৪. সাইকোপ্যাথিক ব্যক্তিত্বের অধিকারী লোকেরা ধর্ষণ করে থাকে বেশি।
৫. মাদকাসক্তি মানুষের স্বাভাবিক বিবেচনাবোধ লোপ করে এবং এটিও ধর্ষণের আরেকট বড় কারণ।
৬. ধর্ষকদের মনে মেয়েদের প্রতি তীব্র ক্রোধ, আক্রমণাত্মক মনোভাব ও প্রতিহিংসা পরায়ণতা মনোভাব থাকে এবং এর ফলে ধর্ষণ করে। আর এসবের কারণ হতে পারে অতীতে কোনো মেয়ে দ্বারা প্রতারিত, অপমানিত ও প্রত্যাখ্যান হওয়া।
৭. একাকিত্ব বোধ, অক্ষমতাবোধ, রাগ, অপমানজনক অনুভূতি, হতাশা, ব্যর্থতা বা ব্যক্তিজীবনে কষ্ট, অপ্রাপ্তি ইত্যাদি থাকলে মনের মধ্যে ধর্ষণের আকাঙ্খা বৃদ্ধি পায়।
৮. যে সমাজে আইনে শাসন নেই কিংবা থাকলেই তা দুর্বল বা ভঙ্গুর, সেই সমাজের লোকেরা ধর্ষণ উপযোগী এবং ধর্ষণ করে।
৯. পারিবারিক নৈতিক শিক্ষার অভাব ও নারীর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞান শিক্ষা না দেওয়া।
১০. পর্ণোগ্রাফিতে আসক্তি।
১১. প্রেমে ব্যর্থ হয়ে প্রেমিকার মুখ থেকে ‘না’ শব্দ সহ্য করতে না পেরে ধর্ষণ করে।
১২. ক্ষমতাশীন ব্যক্তি তার অধীনে থাকা দুর্বল মেয়ে, শিশু বা ছেলের ধর্ষণ করে।
১৩. অনেক সময় বন্ধু বান্ধবরা একসঙ্গে হয়ে বা শক্তিশালী হয়ে আকস্মিকভাবে কোনো অসহায় মেয়েকে একা পেয়ে আনন্দ-ফুর্তি করার জন্য ধর্ষণ করে।
১৪. এছাড়াও বর্তমানে ইন্টারনেট, স্যাটেলাইটসহ নানা ধরনের তথ্য-প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়াসহ পারিপার্শ্বিক আরও অনেক কারণে ধর্ষণ হতে পারে।
ধর্ষণ এবং এর শাস্তি : যেভাবেই ধর্ষণ হোক না কেন, ধর্ষণ এক প্রকার যৌন অত্যাচার এবং তা একটি গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ বটে। সঙ্গী বা সঙ্গিনীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে বা অনুমতি ছাড়া যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হওয়াকে ধর্ষণ বলা হয়ে থাকে। সাধারণ অর্থে ধর্ষণ বলতে একজন পুরুষের সঙ্গে একজন নারীর সম্মতি ব্যতিরেকে যৌনসঙ্গমকে ধর্ষণ বলা হয়। বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারা মোতাবেক, যদি কোনো ব্যক্তি নিম্নোক্ত পাঁচ প্রকারের যেকোনো অবস্থায় কোনো নারীর সঙ্গে যৌন সহবাস করে, তবে উক্ত ব্যক্তি ধর্ষণ করেছে বলে গণ্য হবে। প্রথমত : তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে; দ্বিতীয়ত : তাঁর সম্মতি ব্যতিরেকে; তৃতীয়ত : তাঁকে ভয় প্রদর্শন করে তাঁর সম্মতি আদায় করা হলে; চতুর্থত : নারীটি ভুল বিশ্বাসে থেকে সম্মতি দেয় যে পুরুষটি তার স্বামী এবং লোকটি জান যে সে তাঁর স্বামী নয়। পঞ্চমত : ১৪ বছরের কম বয়সী সম্মতি দেয় বা না দেয়। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ (সংশোধিত ২০০৩) এর ৯ ধারা অনুযায়ী, ধর্ষণের অপরাধে সে সকল শাস্তির বিধান রয়েছে তা হচ্ছে : কোনো নারী বা শিশু ধর্ষিত হলে বা ধর্ষণের কারণে মৃত্যু হলে ধর্ষণকারী বা ধর্ষণকারীদের জন্য রয়েছে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং এর অতিরিক্ত কমপক্ষে এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড। ধর্ষণের চেষ্টা করলে সর্বোচ্চ দশ বছর এবং সর্বনিম্ন পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেরও বিধান রয়েছে। বিচারক সাধারণত শাস্তির পরিমাণ নির্ধারণ করেন অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনা করে। মামলার বিষয়বস্তু (ধর্ষণের শিকার নারীর জবানবন্দি, ডাক্তারী পরীক্ষার ফলাফল এবং অন্যান্য সাক্ষ্য) পর্যালোচনা করে নিজস্ব বিচার- বিবেচনার ভিত্তিতে বিচারক রায় দেন এবং অপরাধীর শাস্তি নির্ধারণ করেন। তবে ধর্ষণের ক্ষেত্রে ধর্ষিত নারীর উচিৎ হবে ধর্ষণের ঘটনাটি দ্রুত কাছের কাউকে জানানো। ধর্ষণ প্রমাণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ধর্ষণের শিকার নারীর শরীর। এজন্য ধর্ষণের ঘটনার পর যে অবস্থায় আছে তেমনি থাকা প্রয়োজন। নিজেকে পরিষ্কার বা গোসল করানো এক্ষেত্রে কোনভাবেই ঠিক হবে না। কারণ, ধর্ষণকারী অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নারীর শরীরে কিছু প্রমাণ-চিহ্ন রেখে যায়। ডাক্তারী পরীক্ষার দ্বারা নারীর শরীর থেকে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য-প্রমাণাদি এবং আলামত সংগ্রহ করা যায়-যা ধর্ষণের ঘটনাকে প্রমাণ ও ধর্ষণকারীকে চিহ্নিত করতে সাহায্য করে। ঘটনার সময় যে কাপড় শরীরে ছিলো তা অবশ্যই সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। কাপড়ে রক্ত, বীর্য ইত্যাদি লেগে থাকলে তা যদি ধর্ষণকারীর রক্ত বা বীর্যের সাথে মিলে যায়, তাহলে মামলায় এটা গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে কাজ করে। আর এক্ষেত্রে দ্রুত থানায় অভিযোগ দায়ের কিংবা আদালতে মামলা দায়ের করতে হবে। যত দ্রুত অভিযোগ দায়ের করা যায় ততই মঙ্গল। কারণ, ধর্ষণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ডাক্তারী পরীক্ষা না করালে ধর্ষণের প্রমাণ তেমন একটা পাওয়া যায় না। তবে থানায় অভিযোগ দায়ের করে কিংবা আদালতে মামলা করে বিচার পাওয়ার চেয়ে সমাজে যেন ধর্ষণের ঘটনা না ঘটে সেই ব্যবস্থা করা অধিকতর মঙ্গলজনক। কারণ, Prevention is better than cure বা প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম।
গুজব : নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ে আরো একটি লক্ষণ হয়ে দেখা দিয়েছে গুজব। বর্তমান বাংলাদেশের অন্যতম আলোচিত বিষয় হচ্ছে এই গুজব। নানাভাবে গুজব ছড়িয়ে সমাজে একধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। গুজবে কান না দিয়ে সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্বে সতর্ক থাকতে হবে।
উপসংহার : সমাজে ধর্ষণের বিরুদ্ধে সম্মিলিত কণ্ঠে প্রতিবাদ হওয়াটা খুবই জরুরী। ধর্ষকরা অনেক সময় শাস্তি পায় না বলে পরবর্তীতে তারা স্পর্ধা পেয়ে যায় এবং বীরদর্পে ধর্ষণ করে। তাকে দেখে অন্যরাও ধর্ষণ করতে উৎসাহিত হয়। এভাবে চলতে থাকলে সমাজ, দেশ ও জাতি কলুষিত হয়। দেশ পরিণত হয় মগের মল্লুকে। ধর্ষণ রোধে প্রতিটি পরিবার থেকে প্রতিটি শিশুকে ছোটবেলা থেকেই নৈতিক শিক্ষা প্রদান করা প্রয়োজন। কারণ, পরিবারই তার আচরণ, মূল্যবোধ, নৈতিকতা ইত্যাদির ভিত্তি তৈরি করে দেয়। সর্বোপরি, ধর্ষণ প্রতিরোধে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম, সুশীল সমাজসহ সকলের একযোগে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। প্রয়োজন ধর্ষণকে যেকোন মূল্যে প্রতিহত করা। এক্ষেত্রে সকলকে মনে রাখতে হবে, আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে ধর্ষণ যেমন একটি বড় ধরনের ফৌজদারী অপরাধ, তেমনি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে তা বড় ধরনের পাপ।
উপসংহার : সমাজে ধর্ষণের বিরুদ্ধে সম্মিলিত কণ্ঠে প্রতিবাদ হওয়াটা খুবই জরুরী। ধর্ষকরা অনেক সময় শাস্তি পায় না বলে পরবর্তীতে তারা স্পর্ধা পেয়ে যায় এবং বীরদর্পে ধর্ষণ করে। তাকে দেখে অন্যরাও ধর্ষণ করতে উৎসাহিত হয়। এভাবে চলতে থাকলে সমাজ, দেশ ও জাতি কলুষিত হয়। দেশ পরিণত হয় মগের মল্লুকে। ধর্ষণ রোধে প্রতিটি পরিবার থেকে প্রতিটি শিশুকে ছোটবেলা থেকেই নৈতিক শিক্ষা প্রদান করা প্রয়োজন। কারণ, পরিবারই তার আচরণ, মূল্যবোধ, নৈতিকতা ইত্যাদির ভিত্তি তৈরি করে দেয়। সর্বোপরি, ধর্ষণ প্রতিরোধে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম, সুশীল সমাজসহ সকলের একযোগে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। প্রয়োজন ধর্ষণকে যেকোন মূল্যে প্রতিহত করা। এক্ষেত্রে সকলকে মনে রাখতে হবে, আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে ধর্ষণ যেমন একটি বড় ধরনের ফৌজদারী অপরাধ, তেমনি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে তা বড় ধরনের পাপ।
আবার সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকেও ধর্ষণকে অত্যন্ত ঘৃণ্য, নিন্দনীয় ও খারাপ প্রকৃতির কাজ হিসেবে দেখা হয়। স্মরণ রাখা প্রয়োজন, যে সমাজে নারীরা বেশি মাত্রায় ধর্ষণের শিকার হন, সেই সমাজে নারীরা দেশ-জাতির উন্নয়নে স্বাভাবিকভাবেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন না। অথচ, নারীদেরকে পিছিয়ে রেখে বা তাঁদের ধর্ষণ করে কোন সমাজের ঠিকমতো উন্নয়ন, অগ্রগতি সাধিত হতে পারে না। তাই সমাজ, দেশ ও জাতির উন্নয়ন, অগ্রগতি ঘটানোসহ সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে এবং একটি সুখী, সুন্দর ও সাফল্যময় দেশ-জাতি গঠনে ধর্ষণকে কঠোরহস্তে দমন করা অপরিহার্য-যেন ভবিষ্যতে এ পথে আর কেউ পা বাড়াতে না পারে।