বাগধারা ও প্রবাদ-প্রবচন - ব


বসন্তের কোকিল (সুসময়ের বন্ধু) – সুসময়ে বসন্তের কোকিলরা চারদিকে এসে কূজন করতে থাকে।

বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো (বেশি কড়াকড়ি অথচ শাসনহীন) – ছেলেটিকে শাসনে রেখেছিলে ভায়া, এখন ছাড়া পেয়ে দুরন্ত হয়ে উঠেছে -এ যেন বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো।

বিড়াল তপস্বী (কপট সাধু) – সারা জীবন করলে ভণ্ডামি, বুড়োকালে দেখাচ্ছ সাধুগিরি, বিড়াল তপস্বী নয় তো কি!

বড় মুখ (গর্ব) – পিতা বড় মুখ করে ছেলের কথা বলতে আসে, কিন্তু এ কথা শুনে সকলে মুখ চুন করল।

বিন্দু বিসর্গ (অতি সামান্য পরিমাণ) – আরে ভায়া, আমাকে কেন দুষছো, আমি এর বিন্দু বিসর্গও জানি না।

বালির বাঁধ (অল্পতেই যা নষ্ট হয়) – আমরা এত সব চেষ্টা করলাম, কিন্তু সবই যেন বালির বাঁধের মতো নষ্ট হলো।

বুকের পাটা (দুঃসাহস) – এত বড় বুকের পাটা তোমার যে, আমার মেয়ে বিয়ে করতে চাও?

বকধার্মিক (ভণ্ডধার্মিক) – এ জগতে বকধার্মিকের সংখ্যা নেহায়েৎ কম নয়।

বিসমিল্লায় গলদ (গোড়ায় গলদ) – অঙ্ক তোমার মিলবে কেমন করে, বিসমিল্লায় যে গলদ করে বসে আছ।

বেগার ঠেলা (অযত্নে কাজ করা) – দক্ষিণা লাভের আশায় যারা ‘নোট’ লেখেন, তারা সাধারণত বেগার ঠেলে থাকেন।

বিষিয়ে উঠা (বিরূপ হওয়া) – শত্রুর মুখে নিন্দা শুনে সামাল সাহেবের সারা মন তার বিরুদ্ধে বিষিয়ে উঠলো।

বোঝার ওপর শাকে আঁটি (অনেকের সঙ্গে সামান্য জিনিস অনেক ভারী) – বিয়ে বাড়িতে সাজ্জাদ সাহেব চল্লিশটি রসগোল্লা খাওয়ার পর এক গ্লাস পানিকেও বোঝার ওপর খাকের আঁটি মনে হচ্ছে।

বিষের পুটুঁলি (বিদ্বেষী) – বড় বউ এক বিষের পুটুঁলি, ছোট জার রূপ দেখে জ্বলে পুড়ে মরছে।

বাসর রাতে বিড়াল মারা (প্রথম দর্শনেই ভয় দেখানো) - বেশি প্রশ্রয় পেয়ে সে মাথায় উঠেগেছে, মনে রাখা উচিত ছিলো বিড়াল বাসর রাতেই মারতে হয়, পরে মারলে লাভ নাই।

বাঘের দুধ (দুষ্প্রাপ্য বস্তু) – টাকায় কি না হয়, বাঘের দুধও টাকাতে লাভ করা যায়।

বিনা মেঘে পানি (অকারণে কাজের সৃষ্টি) – নতুন নতুন অফিসে যোগ দিয়ে সাহেবের সুনজরে পড়েছো, যেন বিনা মেঘে পানি।

বিনা মেঘে বজ্রাঘাত (অপ্রত্যাশিত বিপদ) – পিতার মৃত্যুর সংবাদ শুনে ছেলেটির বিনা মেঘে বজ্রাঘাত হলো।

বাঘের আড়ি (নাছোরবান্দা, ‍দুশমনি) – সর্বস্ব খোয়ালে কি হবে, মল্লিক সাহেব তার এককালের বন্ধুর বিরুদ্ধে বাঘের আড়ি পেতেছেন।

বানরের গলায় মুক্তহার (অপাত্রে উৎকৃষ্ট সামগ্রী দান) – আশার মতো ডানাকাটা পরীর নাকি বিয়ে হলো ছাপোষা আবুলের সঙ্গে – এ যেন বানরের গলায় মুক্তহার।

বর্ণচোরা (স্বাভাবিক বর্ণ গোপন রাখে এমন) – তুমি বাপু একটা বর্ণচোরা আম, বুঝবার যো নেই যে তুমি তার এতোটা অনুরক্ত।

বাম হাতের ব্যাপার (ঘুষ) – বাম হাতের ব্যাপার করেই তিনি বাড়ি করেছেন।

বিড়ালের আড়াই পা (বেহায়াপনা) – হাজার বকলেও লাভ নেই, তার হচ্ছে বিড়ালের আড়াই পা।

ব্যাজার ব্যাজার করা (আপত্তি) – যা দিলাম নাও, আর ব্যাজার ব্যাজার করো না।

বুক দিয়ে পড়া (প্রাণপণে সহায়তা করা) – পরের বিপদে এমনভাবে বুক দিয়ে পড়তে হাজী মুহম্মদ মুহসীনের মতো কাউকে দেখিনি।

বেল পাকলে কাকের কি (উপভোগ করতে অক্ষম ব্যক্তির পক্ষে উৎকৃষ্ট সামগ্রীর প্রতি লোভ করা) – আমি তো গরিবের ছেলে, চৌধুরী সাহেবের মেয়ে বিয়ে করতে চাইলেই তো হবে না, বেল পাকলে কাকের কি?

বুক দশ হাত উঁচু হওয়া (আনন্দে ও উৎসাহে মন পূর্ণ হওয়া) – বিএ পরীক্ষায় জজ সাহেবের ছেলে ফার্স্ট ক্লাস পাওয়ায় তার বুক দশ হাত উঁচু হলো।

বাগে পাওয়া (কায়দায় পাওয়া) – একবার যদি তাকে বাগে পাই তো গায়ের ঝাল মেটাব।

বাদুর ঝোলা (কষ্ট করে ঝুলন্ত অবস্থায় স্থানান্তর গমন) – বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বাসে করে বাদুর ঝোলা হয়ে যাতায়াত করে।

বারো ভূত (অনাত্মীয় লোকজন) – আত্মীয়-স্বজন নেই, খান বাহাদুরের সম্পত্তি বারো ভূতে খাবে।

বট কাঁটকী (বউকে যে জ্বালাতন করে) – বউ কাঁটকী শাশুড়ির কাছে মেয়ে কি সুখে থাকবে?

বিষ নেই তার কুলোপনা চক্কর (বিষহীন সাপের ফনার মতো হাস্যকর আস্ফালন) – ডাক্তার সাহেবের গোমুর্খ ছেলের এমন অহঙ্কার কি সাজে, বিষ নেই তার কুলোপনা চক্কর।

বহাল তবিয়তে (সুস্থ শরীরে ও প্রফুল্ল মনে) – এত ঝামেলার মধ্যেও তো দেখছি তুমি বেশ বহাল তবিয়তে আছে।

বাঘা-বাঘা (বিরাট) – হাতে এমন বাঘা-বাঘা নখ রেখেছ কেন?

বাড়াবাড়ি (আতিশয্য) – কোনো ব্যাপারেই বাড়াবাড়ি ভালো নয়।

বাপান্ত করা (গালাগালি দেয়া) – আমার কি দোষ? আমাকে এভাবে সে বাপান্ত করল কেন?

বারফট্টাই (বড়াই) – কাজ জানে কতটুকু বলতে পারব না, তবে বারফট্টাই খুব।

বাস্তুঘুঘু (অতি ধুরন্ধর লোক) – তাকে এখনও চেনোনি তুমি? সে একটি বাস্তুঘুঘু।

বাহাত্তরে ধরা (বুড়ো বয়সে মতিচ্ছন্ন হওয়া) – কি আবোল-তাবোল বলছ তোমায় কি বাহাত্তরে ধরেছে?

বিটলেমি (ভণ্ডামি) – তার বিটলেমি আমি ধরে ফেলেছি।

বিদুরের খুদ (গরিব ভক্তের সামান্য উপহার) – বড়লোকের রাজভোগের চেয়ে তোমার এই বিদুরের খুদই আমার কাছে মূল্যবান।

বিন্দুবিসর্গ (কিছুমাত্র) – আমি এ বাপারের বিন্দুবিসর্গও আগে জানতে পারিনি।

বিরাশি সিক্কা ওজন (বিরাট বা বিপুল ওজন) – বসিয়ে দিল বিরাশি সিক্কা ওজনের এক চড়।

বিশ বাঁও জল (ভীষণ বিপাক) – ব্যাপারটা এখন বিশ বাঁও জলে।

বুড়ো আঙুল দেখানো (ফাঁকি দেয়া) – কাজ হাসিল করে তোমাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সরে পড়বে।

বেলেল্লাপনা (অসভ্য আচরণ) – পাড়ায় পাড়ায় তুমি বেলেল্লাপনা করে বেড়াবে আর আমরা তাই সহ্য করব?
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post