বাগধারা ও প্রবাদ-প্রবচন - য, র, ল


যক্ষের ধন (অতিশয় কৃপণের ধন) – তুমি তো টাকাকড়ি যক্ষের ধনের মতো আগলিয়ে বসে আছ, তাতে কি লাভ?

যমের অরুচি (সহজে যে মারা যায় না এই অর্থে) – আশি বছরের বৃদ্ধের প্রতি যমেরও অরুচি।

যত গর্জে তত বর্ষে না (আড়ম্বরের তুলনায় কাজ কম) – বড় সাহের কেরানীদের খুব শাসান, কিন্তু কারো কোনো ক্ষতি করেন না, দেখে মনে হয় যত গর্জে তত বর্ষে না।

যম যন্ত্রণা (মৃত্যু) – একমাত্র সন্তানের নিখোঁজ সংবাদে পিতামাতা যমযন্ত্রণা ভোগ করলেন।

যত দোষ নন্দ ঘোষ (প্রকৃত অপরাধী না হওয়া সত্ত্বেও অপরাধের বোঝা বহন করা) – দোকানীর ভাই নিয়েছে টাকা আর আমাকে করা হচ্ছে দোষী, যত দোষ নন্দ ঘোষ।

যো হুকুম (চাটুকার) – সাবধান ভাই সাবধান, যো হুকুমের দল সর্বনাশ করবে।

যেন তেন প্রকারেণ (যেভাবেই হোক) – তোমাকে কে মাথায় দিব্যি দিয়ে বলেছে যে যেন তেন প্রকারেণ ওটাকে আনতেই হবে?


রক্তের টান (স্ববংশ প্রীতি) – হাজার হলেও ভাই ভাই রক্তের টান, শত্রুতা কি বেশি দিন থাকে?

রাই কুড়িয়ে বেল (অল্প অল্প সঞ্চয়ে প্রচুর অর্থ জমানো) – সঞ্চয়ের অভ্যাস থাকলেই রাই কুড়িয়ে বেল করা সম্ভব।

রাহুর দশা (দুঃসময়) – চারদিকে তোমার অশান্তি, বোধহয় রাহুর দশায় পড়েছে।

রাশভারি (গুরুগম্ভীর) – 

রা করা (কোনো কথা বলা) – তুই কেমন ছেলে বাবা বল তো, এ যে সাত চড়েও রা করিস না।

রাশভারি (গুরুগম্ভীর) – আমাদের অফিসের ম্যানেজার সাহেব এমন রাশভারি লোক যে, তার সামনে গিয়ে কথা বলতে ভয় হয়।

রগচটা (যে একটুতেই রাগে) – মহসীন খুব রগচটা, ওকে দায়িত্বপূর্ণ পদে গ্রহণ করা উচিত নয়।

রাঘব বোয়াল (অন্যের ধন আত্মসাৎকারী প্রভাবশালী লোক) – সরকারি চাকুরেদের রাঘব বোয়ালরাই শহরে হাল ফ্যাশনের বাড়িঘর ফাঁদিয়াছেন।

রুই-কাতলা (নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি) – আরে ভাই, সে দিনকাল কি আর আছে? বর্তমান সরকারের শাসনে দুর্নীতিপরায়ণ অনেক রুই-কাতলা ধরা পড়েছে।

রাজযোটক (সুন্দর মিল) – যেমন ঠক চাচা, তেমনি টক চাচী, রাজযোটক হয়েছে, ভাই।

রাজা উজির মারা (বড় বড় কথা বলা) – বক্তৃতার সময় অনেকেই রাজা উজির মারতে পারে, কাজের বেলায় ফক্কা।

রাতকানা (রাতের বেলায় দেখতে পারে না) – রাতকানা মানুষের পক্ষে চলাফেরা কঠিন।

রতনে রতন চেনে (অসৎ বা মন্দলোক সহজেই অন্য অসৎ বা মন্দ লোককে চিনতে পারে) – জুয়াচোররা জুয়াচোরদেরই বন্ধু হবে, রতনে রতন চেনে যে।

রথ দেখা আর কলা বেচা (একই সঙ্গে দুই উদ্দেশ্য সাধন করা) – কক্সবাজার বেড়াতে গিয়ে অফিসের কাজটাও সেরে নিলাম – রথ দেখা আর কলা বেচা দুইই হলো।

রয়ে-সয়ে (ধীরে সুস্থে) – দাঁড়াও, ব্যস্ত হয়ো না, রয়ে-সয়ে বন্দোবস্ত করে দেব।

রাঙা মুলো (সুন্দর চেহারার অথচ গুণহীন লোক) – সে তো একটি আস্ত রাঙা মুলো, কি কাজ হবে তাকে দিয়ে?

রাঙা শুক্রবার (কোনো দিনই নয়) – কবে আর ওটা আমাকে দেবে? রাঙা শুক্রবারে?

রামগরুড়ের ছাড়া (গোমড়ামুখো লোক) – কি ব্যাপার, তখন থেকে রামগরুড়ের ছানা হয়ে আছ যে?

রুটি মারা (আয়ের পথ বন্ধ করা) – দয়া করে এই গরিবের রুটি মারবেন না।


লগন চাঁদা (ভাগ্যবান) – হক সাহেব লগন চাঁদা বলেই চাকরিতে উন্নতি হলো।

লালবাতি জ্বালানো (ধ্বংস হওয়া) – ব্যাংকটা লালবাতি জ্বালানোতে অনেক লোক ক্ষতিগ্রস্ত হলো।

লেফাফা দুরস্ত (বাইরের ঠাঁট) – লোকটি যতই লেফাফা দুরস্ত হোক, আসলে সে কিন্তু গরিব।

লম্বা দেওয়া (চম্পট) – সাঁঝ রাতে চোর চুরি করে লম্বা দিয়েছে।

লেজে পা পড়া (স্বার্থে আঘাত লাগা) – এবার তোমাদের লেজে পা পড়েছে, তাই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছো।

লেজে খেলা (চাতুরি করা) – সে আমাকে নিয়ে কেবলি লেজে খেলিয়ে বেড়াচ্ছে।

লেফাপা দুরস্ত (বাইরে ঠাঁট বজায় রেখে চলেন যিনি) – 

লক্ষ্মীর বরযাত্রী, সুখের পায়রা, দুধের মাছি (সুসময়ের বন্ধু) – লাখপতি বন্ধুর হাতে যদ্দিন টাকা আছে তদ্দিনেই তোমার মতো তোষামোদকারী লক্ষ্মীর বরযাত্রীরা ঘুরে বেড়াবে।

লক্ষ্মীছাড়া (হতভাগা) – লক্ষ্মীছাড়া ছেলে কারও কথাই শোনে না।

লক্ষ্মীর ভাণ্ডার (অফুরন্ত ভাণ্ডার) – তোমার চাওয়ার আর শেষ নেই – আমার ঘরে কি লক্ষ্মীর ভাণ্ডার আছে নাকি?

লগি পুঁতে বসে থাকা (নিষ্কর্মা হয়ে বসে থাকা) – কি ব্যাপার সেই সকাল বেলা থেকে লগি পুঁতে বসে আছ যে?

লঘুগুরু জ্ঞান (কে বড় কে ছোট এই জ্ঞান) – এত বয়স হলো, এখনও যদি তোমার লঘুগুরু জ্ঞান না হয় সে বড় দুঃখের কথা।

লঘুপাপে গুরুদণ্ড (সামান্য অপরাধে গুরুতর শাস্তি) – সামান্য একটা ভুলের জন্য ছেলেটাকে এমনভাবে মারলে? লঘুপাপে গুরুদণ্ড হয়ে গেল না?

লঙ্কাকাণ্ড (তুমুল কাণ্ড) – একটা সামান্য ব্যাপার থেকে এমন লঙ্কাকাণ্ড বেধে গেল?

লবডঙ্কা (কিছু না) – সবাই খেয়ে চলে গেল, তুমি এখন পাবে লবডঙ্কা।

লেজ গুটানো (হার মানা) – এতক্ষণ তো বীরদর্পে তর্ক করেছিলে, এবার লেজ গুটাচ্ছ কেন?

ল্যাঠা চুকে যাওয়া/ল্যাঠা চোকা (ঝামেলা দূর হওয়া) – অনেক কষ্টে সব দেনা শোধ করে দিয়েছি। ল্যাঠা চুকে গেছে।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post