বাগধারা ও প্রবাদ-প্রবচন - শ, ষ, স


শাক দিয়ে মাছ ঢাকা (বড় কলঙ্ক সহজে ঢাকার চেষ্টা) – এই তো তোমার ঘুষের টাকার গাড়ি-বাড়ি, কিন্তু বলে বেড়াচ্ছ শ্বশুরের দান, শাক দিয়ে মাছ ঢেকে ফল কি?

শরতের শিশির (ক্ষণস্থায়ী / সুসময়ের বন্ধু) – আমাদের বন্ধুত্ব কি শরতের শিশির, যে তোর বিপদের দিনে পালিয়ে থাকবে! / টাকা পয়সা থাকলে শরতের শিশিরও জমতে শুরু করে।

শাঁখের করাত (উভয় সংকট) – কি যে করব ভেবে পাই না, বড় সাহেবের কাছে হ্যাঁ বললেও বিপদ, না বললেও বিপদ, যেন শাঁখের করাতের অবস্থায় পড়েছি।

শত্রুর মুখে ছাই (লোকের কুদৃষ্টি এড়ান) – শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে আমার পাঁচটি ছেলেই দেশবরেণ্য।

শ্বেতহস্তি পোষা (কর্মচারীদের জন্য অর্থ ব্যয় করা) – ওয়াপদার টাকা শ্বেতহস্তি পুষতেই শেষ হয়ে গেল, অন্য কাজ হবে কি করে?

শূন্যে সৌধ নির্মাণ (অলীক কল্পনা) – যৌবনের সোনালী স্বপ্ন পরিণত বয়সে শূন্যে সৌধ নির্মাণের সামিল।

শেষ রক্ষা (কোনোমতে সম্মান বাঁচানো) – খান সাহেবের দু ছেলের পরীক্ষায় ফেলের সংবাদের পর মেয়েটি ফাস্ট ক্লাস পেয়ে এমএ পাস করায় শেষ রক্ষা হলো।

শুকনোয় ডিঙ্গি চলা (জোরে কাজ চালানো) – দশজনে মিলেমিশে কাজ করলে শুকনোয় ডিঙ্গি চালানো যায়।

শকুনি মামা (কুচক্রী) – তুমি এই শকুনি মামার সঙ্গ ছাড়, নচেৎ সর্বস্বান্ত হবে।

শ্রীঘর (কারাগার) – ভদ্রলোকের ছেলে হয়ে চুরি করো, এখন শ্রীঘরে যাও।

শনির দৃষ্টি (কুদৃষ্টি) – নববর্ষে শনির দৃষ্টি লেগেছে, একটার পর একটা দুর্ঘটনা লেগেই আছে।

শিবরাত্রির সলতে (একমাত্র বংশধর)

শিয়ালের যুক্তি (অকেজো যুক্তি) – তোমার শিয়ালের যুক্তি খাটবে না, উকিলের কাছে যুক্তি নাও গে।

শনির দশা (দুঃসময়) – দু বছর ধরে কি যে শনির দশা লেগেছে, কিছুতেই কাটিয়ে উঠতে পারছি না।

শিকে ছেঁড়া (হঠাৎ সৌভাগ্যের উদয় হওয়া) – চাকরি পেয়েছ? এতদিনে তাহলে শিকে ছিঁড়ল?

শিব গড়তে বাঁদর গড়া (ভালো করতে গিয়ে মন্দ করা) – ছেলেটাকে অনেক কষ্ট করে মানুষ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি শিব গড়তে বাঁদর গড়েছি।

শ্যাম রাখি না কুল রাখি (উভয় সংকট) – ঘরে গৃহিণীর অভিমান আর অফিসে বড় সাহেবের রাগ আমার এখন শ্যাম রাখি না কুল রাখি অবস্থা।

শিরে সংক্রান্তি (আসন্ন বিপদ) – আমার এখন শিরে-সংক্রান্তি, কীভাবে সব সামলাব তাই ভাবছি।


ষণ্ডামর্ক (একগুঁয়ে ও বলিষ্ঠ) – যণ্ডামর্ক ছেলেদের নিয়ে সাহিত্য সমিতি গড়লে তার ভবিষ্যৎ কি হবে কে জানে?

ষাঁড়ের গোবর (অপদার্থ) – তোমার মতো ষাঁড়ের গোবর লোক বলে কিনা সে মন্ত্রী হবে, দিনে দিনে আর কতই শুনবো।

ষোল আনা (পুরোপুরি) – স্বার্থের ব্যাপারে ষোল আনা, পরকে দেবার নাম নেই।

ষোলকলা (সম্পূর্ণ) – শামসুল হক পিতা এনামুল হকের সাহিত্য শিল্প বোধের প্রকৃতি ষোলকলায় পেয়েছে।

ষোল কড়াই কানা (সব অসার) – আবুল হোসেনকে মনে হয়েছিল তুখোড় এখন দেখছি তার স্বভাবের ষোল কড়াই কানা।

ষাঁড়ের গোঁ (প্রবল জেদ) – ওর এই ষাঁড়ের গোঁ কি সহজে ছাড়বে?


সাত পাঁচ (বিবিধ) – সাত পাঁচ ভেবেও কূল কিনারা হলো না তোমার।

সাক্ষীগোপাল (নিস্ক্রিয় দর্শক / কর্তৃত্বহীন দর্শকমাত্র) – আমার পুত্রই এখন সংসার পরিচালনা করে, আমি শুধু সাক্ষীগোপাল।

সাতসতেরো (সাত পাঁচ রকম আজেবাজে কথা) – হাতে একটি টাকাও নেই, বসে বসে সাতসতেরো ভাবছি বাজার করব কি দিয়ে?

সাপের ছুঁচো গেলা (অনিচ্ছায় বাধ্য হয়ে কাজ করা) – বাজারে একশত টাকার জিনিস কিনতে গিয়ে আজহার সাহেব স্ত্রীর অনুরোধে পাঁচশত টাকার জিনিস কিনতে বাধ্য হয়ে সাপের ছুঁচো গেলার মতো কাজ করলেন।

সুখের পায়রা (বিলাসী) – আমি একাই খেটে মরি, আর সব তো সুখের পায়রা।

সাত খুন মাফ (গুরুতর অপরাধেও অব্যাহতি লাভ) – হেডমাস্টারের ছেলে বলেই তোমার সাত খুন মাফ হবে, এমন মনেও করো না।

সাত পাঁচ ভাবা (নানারকম চিন্তা) – তাকে কথা শোনাতে গিয়েছিলাম, কিন্তু সাত পাঁচ ভেবে না বলেই চলে এলাম।

সাবধানের মার নেই (সতর্কতা অবলম্বন করলে বিপদ নেই) – অর্থমন্ত্রী মহোদয় বাজেট উত্থাপনের আগে বার বার দেখলেন কেননা সাবধানের মার নেই।

সরফরাজি চালে (বাইরে মিত্রতা) – সেদিন তুমি আদালতে আমার বিরুদ্ধে দিলে সাক্ষ্য, আর আজ বেশ সরফরাজি চাল চলছো।

স-সে-মি-রা অবস্থা (কাণ্ডজ্ঞানহীন অবস্থা) – তোমাদের অনাসৃষ্টি কাণ্ডজ্ঞান দেবে আমার তো স-সে-মি-রা অবস্থা।

সোনার চাঁদ (আদরের পাত্র) – সোনার চাঁদ নাতিটিকে চৌধুরী সাহেব রক্ষা কবচের মতো আগলে রেখেছিল।

সোনা বাহির আঁচলে গেরো (মূল্যবান বস্তুর বদলে মূল্যহীন বস্তুর আদর) – মান-সম্মান ত্যাগ করে তুচ্ছ প্রাণের প্রতি এই মমতা সোনা বাহির আঁচলে গেরোর সামিল।

সকার বকার করা (গালি দেয়া) – সকলের সামনে সকার বকার করো না বলছি।

সোনার পাথর বাটি (অসম্ভব বস্তু) – গল্পটি তোমার একদম বানানো, বাস্তবতার লেশমাত্র নেই, সোনার পাথর বাটির মতো আজগুবি।

সেয়ানে সেয়ানে (যোগ্যে যোগ্যে) – দুজনের মধ্যে এখন সেয়ানে সেয়ানে লড়াই চলছে।

সরিষার ফুল দেখা (চোখে আঁধার দেখা) – সময় থাকতে ভালোভাবে তৈরি হওয়া ভালো, নচেৎ পরীক্ষার হলে বসে সরিষার ফুল দেখাই সার হবে।

সবে ধন নীলমণি (একমাত্র অবলম্বন) – সবে ধন নীলমণি পুত্রকে হারিয়ে ওয়াজেদ সাহেব শোকাতুর হয়েছেন।

সাফাই গাওয়া (দোষ স্থালনের চেষ্টা) – তোমার অপকর্মের ফিরিস্তি সবই পেয়েছি, সাফাই গাইলে কি হবে।

সাতেও নেই, পাঁচেও নেই (নির্লিপ্ত) – বাড়ির কর্তা নিরীহ মানুষ, কারো সাতেও নেই, পাঁচেও নেই।

সাত জন্মে (কখনো) – ভদ্রলোকের ছেলে তুমি আর তোমার মুখে এমন কথা? এ ধরনের উক্তি আমি সত জন্মেও শুনিনি?

সাপের পাঁচ পা দেখা (গর্বান্ধ হওয়া) – চাকরিতে প্রমোশন পেয়ে মনির খান সাপের পাঁচ পা দেখছেন।

স্বখাত সলিল (নিজের বিপদ ডাকা) – তিনি রাতারাতি ধনী হতে গিয়ে স্বখাত সলিলে ডুবে গেলেন।

সবুরে মেওয়া ফলা (অপেক্ষা করলে শেষ পর্যন্ত অভীষ্ট ফল লাভ হওয়া) – তাড়াহুড়ো কোরো না, একটু দেরি করলে তোমার লাভই হবে -সবুরে মেওয়া ফলে।

সাতকাহন (প্রচুর পরিমাণ) – সে নিজের দুঃকের কথা সাতকাহন করে শোনাতে লাগল।

সাতপুরুষের ভিটে (পিতৃপুরুষের ভিটে) – আমার সাত পুরুষের ভিটে ছেড়ে কেন যাব?

সুলুক সন্ধান (খোঁজখবর) – ব্যবসার সুলুক সন্ধান তার বেশ ভালোই জানা আছে।

সে গুড়ে বালি (আশা ব্যর্থ) – তুমি কি ভাবছ চাইলেই ছুটি পাবে? তোমার সে গুড়ে বালি।

সোঁতের শেওলা (নিরাশ্রয় ও সহায়সম্বলহীন লোক) – এভাবে সোঁতের শেওলার মতো কি বাঁচা যায়?

স্বর্গে বাতি দেয়া (বংশ রক্ষা করা) – এই কুলাঙ্গার আমার স্বর্গে বাতি দেবে এমন আশা করি না।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post